সে ভ্রু কুচকালো এবং মুখ ফিরিয়ে নিলো। কারণ তার কাছে অন্ধ লোকটি এসে পড়েছিল। তুমি জানলে কীভাবে, হয়ত সে পরিশুদ্ধ হতো? অথবা হয়ত সে উপদেশ গ্রহণ করতো এবং সেই উপদেশ তার উপকারে আসতো? আর যে কিনা নিজেকে প্রয়োজনমুক্ত মনে করে, তার জন্য তুমি কত চেষ্টা করছিলে। অথচ সে নিজেকে না শোধরালে তোমার কোনোই দায় নেই। আর যে কিনা তোমার কাছে ছুটে আসলো আল্লাহর ভয়ে, তুমি তার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করলে? —আবাসা ১-১০
আমরা বড় হই কিছু ধারণা নিয়ে— সমাজের ধনী মানুষদেরকে, গরিব মানুষদের থেকে বেশি সুযোগ, সম্মান দিতে হবে। যাদের ডিগ্রি আছে তাদেরকে অশিক্ষিত মানুষদের থেকে বেশি সুযোগ সম্মান দিতে হবে। কেউ যদি উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হয়, মন্ত্রী-আমলা হয়, তাহলে তো কথাই নেই। উঠতে বসতে ‘স্যার, স্যার’ করতে হবে। —ছোটবেলা থেকে আমাদেরকে এই ধারণাগুলো দিয়ে বড় করা হয়। আমরা অনেক সময় ভুলে যাই যে— সম্পদ, খ্যাতি, উপাধি, পদ, বংশ ইত্যাদি যেই ব্যাপারগুলো আমরা এত গুরুত্ব দেই, আল্লাহর কাছে এগুলোর সাথে কারো প্রাপ্য-সম্মানের কোনোই সম্পর্ক নেই। তাঁর কাছে কারো সম্মান নির্ভর করে শুধুমাত্র তার তাকওয়ার উপর।
উপরের এই আয়াতগুলো দিয়ে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে এমন এক মূল্যবোধ শেখাতে চান, যার নজির ইতিহাসে আর একটিও নেই। একবার, রাসুলল্লাহ عليه السلام আরবদের উচ্চপদস্থ কিছু মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তিনি সেই লোকগুলোর সাথে আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি আশা করছিলেন এই লোকগুলোকে ইসলামের পথে আনতে পারলে, মক্কাতে ইসলাম প্রচারে যে ব্যাপক বাধার সম্মুখীন তিনি হচ্ছিলেন, তা অনেকাংশে কমে যাবে। যখন তিনি সেই লোকগুলোর সাথে ইসলামের ব্যাপারে আলোচনা করছিলেন, তখন একজন অন্ধ সাহাবি এসে বার বার কুরআনের নতুন কোনো বাণী এসেছে কিনা, সে ব্যাপারে জানতে চেয়ে তার আলোচনায় বাধা তৈরি করতে থাকে। তখন রাসুল কিছুটা বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুঁচকে সাহাবিকে উপেক্ষা করে ওই লোকগুলোর দিকে মনোযোগ দেন। —এই ব্যাপারটি আল্লাহর تعالى কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। আল্লাহ تعالى তখন দশ-দশটি আয়াত নাজিল করে রাসুলকে সংশোধন করে দেন।
প্রথমত, এই আয়াতগুলো আল্লাহ تعالى ব্যক্তিগতভাবে রাসুলকে عليه السلام বলতে পারতেন তাকে সংশোধন করার জন্য। অথবা তিনি মুসলিমদেরকে শেখানোর জন্য আলাদা করে কিছু উপদেশ বাণী দিতে পারতেন, যেখানে রাসুলের প্রতি কোনো ইঙ্গিত থাকতো না। কিন্তু না। আল্লাহর تعالى স্ট্যান্ডার্ড এতটাই উপরে যে, তিনি রাসুলকে উদ্দেশ্য করে আয়াতগুলো দিয়ে সেগুলো তিনি কুরআনেই অন্তর্ভুক্ত করে দিলেন, যেন মুসলিম জাতি যুগ যুগ ধরে শিখতে পারে— কী পর্যায়ের স্ট্যান্ডার্ড তিনি রাসুলের কাছ থেকে এবং সর্বোপরি মুসলিমদের কাছ থেকে আশা করেন। এই আয়াতগুলো রাসুল নিজে সাহাবিদের কাছে তিলাওয়াত করতেন। তিনি নিজে তার ভুলের কথা এবং আল্লাহর تعالى সাবধান বাণী সাহাবিদের কাছে নির্দ্বিধায় পড়ে শোনাতেন। কুরআন তিলাওয়াতের সময় কখনো তিনি চক্ষুলজ্জায় এই সুরাহ এড়িয়ে যেতেন না। সাহাবিরাও কখনো এই আয়াতগুলো তিলাওয়াত করা এড়িয়ে যেতেন না। কী অসাধারণ একটি স্ট্যান্ডার্ড আল্লাহর রাসুল আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন এবং সাহাবিরা নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করে গেছেন!
অথচ এমন নয় যে, রাসুলের عليه السلام ভুলটা ছিল সাঙ্ঘাতিক কিছু। তিনি শুধুই একটু ভ্রু কুঁচকে ছিলেন, যেটা সেই অন্ধ সাহাবি দেখতেও পাননি যে, তিনি মনে কষ্ট পেতে পারতেন। অথচ এই সামান্য ব্যাপারই আল্লাহর تعالى দৃষ্টিতে অনেক বড় ব্যাপার। তিনি রাসুলকে এইটুকু ব্যাপারেও ছাড় দেননি।
আমরা আর কোনো ধর্মগ্রন্থ পাই না, যেখানে সেই ধর্মের প্রচারকের কোনো ভুলের কথা এবং তাকে সাবধান করে সেই ধর্মের ঈশ্বর বা দেবতার হুশিয়ারি লেখা আছে, যা কিনা ধর্মের প্রচারকরা নিয়মিত অনুসারীদের কাছে প্রচার করে বেড়ান। বরং অন্যান্য ধর্ম গ্রন্থে সেই ধর্মের প্রচারকদেরকে ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে অতিমানবের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদেরকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা, ছাড় দেওয়া হয়, যা ধর্মের অনুসারীদের দেওয়া হয় না। ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যেখানে সৃষ্টিকর্তার স্ট্যান্ডার্ড-এর সাথে কোনোভাবেই আপোষ করা হয় না এবং ধর্ম প্রচারকদের মানবিক ভুলগুলোকেও উপেক্ষা করা হয় না। উলটো তাদেরকেই এমন পর্যায়ের কঠিন স্ট্যান্ডার্ড পালন করতে দেখা যায়, যা ধর্মের অনুসারীদের কাছ থেকেও আশা করা হয় না।
এই ধরনের আয়াতগুলো আমাদেরকে দেখিয়ে দেয় কুরআন কী পর্যায়ের পক্ষপাত মুক্ত একটি ধর্ম গ্রন্থ। কুরআনে নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া হয়েছে, কোন নবী কবে কী ধরনের ভুল করেছিলেন এবং তার পরিণতি কী হয়েছিল। ইউনুস নবীকে عليه السلام একটি ভুলের জন্য তিমি মাছের পেটে রেখে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল —এটা কুরআন চেপে যায়নি। দাউদ নবী عليه السلام একবার ভুল বিচার করেছিলেন —সেটা কুরআন লুকিয়ে রাখেনি। মুসা নবী عليه السلام একবার ভুলে একজনকে ঘুষি মেরে হত্যা করেছিলেন—এত বড় ভুলও গোপন করা হয়নি। রাসুল মুহাম্মাদ عليه السلام সামান্য একটু ভ্রু কুঁচকে একজন সাহাবিকে অবহেলা করেছিলেন, আরেকবার তিনি স্ত্রীদের আকাঙ্ক্ষাকে ধর্মীয় নীতির থেকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলেন —সেটাও ছেড়ে দেওয়া হয়নি। —এরচেয়ে পক্ষপাত মুক্ত, আপোষহীন-মূল্যবোধ শেখানো কোনো ধর্মগ্রন্থ পৃথিবীর বুকে আর একটিও নেই।
কখনোই যেন এমনটা না হয়! নিঃসন্দেহে এটা এক মহান উপদেশ বাণী। কাজেই, যে চাইবে সে এর থেকে উপদেশ নিতে পারে। অত্যন্ত সম্মানিত গ্রন্থে এটা লেখা আছে, যা সুউচ্চ, অত্যন্ত পবিত্র। এমন লেখকদের হাতে, যারা সম্মানিত, পুণ্যবান। —আবাসা ১১-১৬
মানুষের কাছে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা মরিয়া হয়ে যাই। দেখা যায় যে, সমাজের শিক্ষিত, ক্ষমতাবানদের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনেক আয়োজন করি, দৌড়াদৌড়ি করি। একদিকে তারা আমাদের অবহেলা করতে থাকে, আর অন্যদিকে আমরা তাদের মনোযোগ পাওয়ার জন্য বহু আয়োজন করতে থাকি। তাদের কাছে ইসলাম তখন একটা বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়ায়। নিজেদের ভেতরে কোনো আন্তরিক চেষ্টা থাকে না ইসলামের বাণী গ্রহণ করার। আমাদের তোষামোদির কারণে তারা ইসলামকে কিছুটা পাত্তা দেয়। কিন্তু সেটা তাদের অন্তরে কোনো প্রভাব ফেলে না।
আল্লাহ تعالى কুরআনে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে, আমাদের এই পদ্ধতি ভুল। কুরআনের বাণী কোনো সস্তা বাণী নয় যে, একে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য আমাদেরকে মরিয়া হয়ে যেতে হবে। এই বাণী থেকে শুধু তারাই লাভবান হবে, যাদের ভেতরে আন্তরিক চেষ্টা থাকবে।
ধ্বংস হয়ে যাক মানুষ, সে কতই না অকৃতজ্ঞ! কীসের থেকে তিনি এদের সৃষ্টি করেছেন? শুক্র বিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তাকে সুপরিমিত করেছেন। এরপর তার জন্য পথ সহজ করেন। তারপর তার মৃত্যু ঘটান এবং তাকে কবরস্থ করেন। এরপর যখন ইচ্ছা তিনি তাকে পুনরায় জীবন দেবেন। কিন্তু না! এখনো মানুষ আল্লাহর আদেশ পূরণ করলো না! —আবাসা ১৭-২৩
মানুষ কীভাবে নিজেকে এত বড় মনে করে, যেখানে তার জন্ম হয় কত নগণ্য একটা জিনিস থেকে? দৈহিক গঠন, মানসিক বৈশিষ্ট্য সবই আল্লাহ মায়ের গর্ভে নির্দিষ্ট করে দেন, যা তার নিয়তি নির্ধারণ করে দেয়। তারপর সময় হলে গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসার ব্যবস্থাও আল্লাহ করে দেন, যেন মা এবং শিশু দুজনেই নিরাপদে থাকে। একই সাথে দুনিয়ায় তার জন্য কোনটা কল্যাণকর, কোনটা ক্ষতিকর —সেটাও আল্লাহ বাণী পাঠিয়ে মানুষকে জানিয়ে দেন, যেন পৃথিবীতে মানুষের চলা সহজ হয়ে যায়। একসময় মানুষকে তিনি মৃত্যু দেন এবং তার দেহকে পচে, মাটিতে মিশে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। যদি তিনি সেটা না করতেন, তাহলে চারিদিকে তাকিয়ে আমরা শুধু লাশের স্তূপ দেখতে পেতাম এবং লাশের গন্ধে অসুস্থ হয়ে যেতাম।
একজন মানুষের জীবনের বেশিরভাগ ব্যাপারই তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কিন্তু তারপরেও সে নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করে। মনে করে যে, তার কোনো বাণীর দরকার নেই, সে নিজেই ভালো বোঝে মানবজাতির জন্য কোনটা কল্যাণকর এবং কোনটা অকল্যাণকর।
তাহলে মানুষ যেন তার খাদ্য নিয়ে ভেবে দেখে। আমিই প্রচুর পানি বর্ষণ করি। তারপর ভূমিকে বিদীর্ণ করি। তারপর তার মধ্যে শস্য উৎপন্ন করি— আঙ্গুর, শাকসবজি, যায়তুন, খেজুর, ঘন গাছে ভরা বাগান, ফলমূল এবং গবাদি খাদ্য — তোমাদের এবং তোমাদের পশুদের ভোগের জন্য। —আবাসা ২৪-৩২
মানুষ তার খাদ্য নিয়ে চিন্তা করে দেখুক। তার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের খাদ্য আল্লাহ প্রকৃতিতেই দিয়ে রেখেছেন। মানুষের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি খাদ্যের মধ্যেই আছে। বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যকীয় কোনো পুষ্টি মানুষকে গবেষণাগারে উদ্ভাবন করতে হয় না। কোন এলাকার মানুষের কোন খাবারটা খেলে তাদের শরীর মন ভালো থাকবে, ঐ এলাকায় তাদের উপযোগী ঠিক খাবার ও ফল-মূলের ব্যবস্থা আল্লাহ تعالى করে দিয়েছেন। শুধু অত্যাবশ্যকীয় খাবারই নয়, মানুষের বিনোদনের জন্য প্রকৃতিতে হাজার হাজার খাদ্য আল্লাহ تعالى দিয়ে রেখেছেন, যেন মানুষ সুস্বাদু খাবার পেতে পারে, সুপেয় পানীয় তৈরি করতে পারে।
প্রকৃতির বিশাল খাদ্য সম্ভার তৈরি করার জন্য অত্যন্ত জটিল প্রাকৃতিক ব্যবস্থা পুরোটাই আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। আল্লাহই অবিরাম পানি বর্ষণের ব্যবস্থা করেন, যেন শস্য, ফলমূল বেড়ে উঠতে পারে। তিনিই ভূমিকে বিদীর্ণ করে উর্বর মাটি সৃষ্টি করেন। শস্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় মাটিও মানুষকে তৈরি করতে হয় না। সেই মাটিতে বীজ থেকে চারা উৎপন্ন করার পদ্ধতিও তিনিই পরিচালনা করেন, মানুষকে কষ্ট করে বীজের ভেতর থেকে চারা বের করে আনতে হয় না। শস্য পেকে যাওয়া, ফুল থেকে ফল তৈরি, চারা থেকে গাছ হওয়া —যাবতীয় প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলো আল্লাহই নিয়ন্ত্রণ করছেন।
আল্লাহর দেওয়া পৃথিবীতে মানুষ আয়েস করে থেকে, তাঁর দেওয়া খাবার এবং পানীয় খেয়ে, তারপর তাকেই অস্বীকার করে। মনে করে আল্লাহর বাণীর কোনোই দরকার নাই তার। কত বড় অকৃতজ্ঞ সে!
তারপর যখন সেই কান-ফাটা বিকট আওয়াজ এসে পড়বে। মানুষ সেদিন ছুটে পালাবে তার ভাই-এর থেকে, তার মা’র থেকে, তার বাবা’র থেকে, তার সহধর্মীনী এবং সন্তানদের থেকে। সেদিন প্রত্যেকটা মানুষ তার নিজের পরিণতির চিন্তায় বাকি সব ভুলে যাবে। সেদিন অনেকের চেহারা হবে উজ্জ্বল। হাস্যোজ্জ্বল, আনন্দিত। আর সেদিন অনেকের মুখ মলিনতায় ঢেকে থাকবে। কালিমায় আচ্ছন্ন। এরা হচ্ছে সত্য অস্বীকারকারী চরম অবাধ্য। —আবাসা ৩৩-৪২
দুনিয়াতে মানুষ সাধারণত তার ভাই-বোন, বাবা-মা’র প্রতি দায়িত্বগুলোকে সবচেয়ে বেশি অবহেলা করে। বাবা-মা ওষুধ এনে দিতে বললে সে গড়িমসি করে, কিন্তু বন্ধুরা ফোন করে বাইরে আসতে বললে সাথে সাথে দৌড়ে যায়। প্রতিবেশীর সামনে নিজের স্ট্যাটাস বজায় রাখার জন্য সে অঢেল অর্থ খরচ করে, কিন্তু বাবা-মা, ভাই-বোনের খরচ দেওয়ার সময় সে পাই-পাই হিসেব করে। একটু অবস্থাসম্পন্ন সন্তানেরা যখন বাবা-মা, ভাই-বোনের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়, তারা অনেক সময় মনে করা শুরু করে যে, ভরণপোষণ দিয়েই তার দায়িত্ব শেষ করে ফেলেছে, তাদের জন্য আর অন্য কোনো কিছু করার দরকার নেই। সে অন্য মানুষকে ইসলাম শেখানোর জন্য ঠিকই দিনরাত সংগ্রাম করে, কিন্তু নিজের বাবা-মা, ভাই-বোনকে ইসলাম শেখানোর জন্য কোনো আন্তরিক চেষ্টা থাকে না। দুনিয়াতে যাদের প্রতি দায়িত্বে মানুষ সাধারণত সবচেয়ে বেশি অবহেলা করে, তারা হলো আপনজনেরা, নিজের পরিবারের সদস্যরা।
একইসাথে যেই সহধর্মীর সাথে সে জীবন পার করে দেয়, তার প্রতিই সে সবচেয়ে বেশি অবিচার করে। তার অধিকার আদায়ে যত পারে ফাঁকি দেয়। হাজার হোক, বিয়ে করেছে, এখন আর যাবে কোথায়? মাথায় তুলে রাখার কোনো দরকার নাই। কোনমতে খেয়ে-পড়ে চলতে দিলেই হলো। বিয়ের সময় মন জয়ের কত চেষ্টা, কিন্তু বিয়ে হওয়ার কয়েকদিন পরেই সব ডাল-ভাত হয়ে যায়। খাওয়া দিচ্ছি, ঘুমানোর ব্যবস্থা করছি, হাত-খরচ দিচ্ছি, যথেষ্ট করছি, আর কত? —অনেক সময় সহধর্মীকে কষ্টে রেখে আপনজন, বন্ধুবান্ধবের মন জয়ের জন্য সময় এবং সম্পদ উজাড় করে দেয়। সহধর্মীর মানসিক, শারীরিক চাহিদা উপেক্ষা করে সে ব্যস্ত থাকে অন্য সবার সাথে সম্পর্ক আরও মধুর করার আন্তরিক প্রচেষ্টায়।
যেই সন্তানদের বিপদে মানুষ তার জীবন দিয়ে দেবে, যাদেরকে একটু ভালো খাবার দেওয়া, উন্নত পড়ালেখার ব্যবস্থা করা, আরেকটু সম্পদ রেখে যাওয়ার জন্য সে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিনরাত পরিশ্রম করে, সেই সন্তানদেরকেই ইসলামের শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে থাকে তার চরম অবহেলা। সন্তানের হৃষ্টপুষ্ট দেহ তৈরির ব্যাপারে তার চেষ্টার কোনো কমতি নেই, কিন্তু তাদেরকে চারিত্রিক, নৈতিকভাবে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় নৈতিক, ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং সুস্থ বিনোদনের আয়োজন করতে যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, তার জন্য উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। বরং সংস্কৃতিতে গা ভাসিয়ে দিয়ে, সমাজে মর্যাদা ঠিক রেখে, নিজের বিনোদনের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে সন্তানদেরকে ইসলামের শিক্ষা এবং মূল্যবোধ থেকে কৌশলে দূরে সরিয়ে রাখে। নিজের ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে সন্তানদেরকে অন্যের কাছে ফেলে রেখে সারাদিন বাইরে ব্যস্ত থাকে। বাবা-মা’র কোলে বড় হতে পারাটা প্রতিটি সন্তানের অধিকার। কিন্তু এই অধিকার বাবা-মা কেড়ে নেয়, যখন ডিগ্রি, ক্যারিয়ার, সম্পদ অর্জনে সন্তানরা প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।
কিয়ামতের দিন মানুষ যখন দেখবে তার ভাই-বোন, বাবা-মা, সহধর্মী, সন্তানেরা তার দিকে আসছে, তখন সে সাথে সাথে উপলব্ধি করবে কী সর্বনাশ সে করে ফেলেছে। দুনিয়াতে সে কতভাবে তাদের সাথে অন্যায় করেছে, কত দাবি উপেক্ষা করেছে, কতবার তাদের অধিকার অন্যায়ভাবে কেড়ে নিয়েছে —সেগুলো তার মনে পড়ে যাবে। তখন সে তার আপনজনদের কাছ থেকে ভয়ে ছুটে পালাবে। সেই আপনজনেরাই সেদিন তার সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়াবে। বরং উলটো সে তার নিকটজনদের বিনিময়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে—
[১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর। [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ। [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি। [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী। [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি। [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী। [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স। [১৯] তাফসির আল-কাবির। [২০] তাফসির আল-কাশ্শাফ।সেদিন তাদের একে অন্যকে দেখতে বাধ্য করা হবে। অন্যায়কারীরা চাইবে যেন সে নিজেকে সেই দিনের শাস্তি থেকে বাঁচাতে পারে: তার নিজের সন্তান, সহধর্মিণী, ভাই, নিকটাত্মীয়দের বিনিময়ে হলেও, যারা কিনা তাকে আশ্রয় দিয়েছিল। এমনকি পৃথিবীর সবার বিনিময়ে হলেও সে নিজেকে বাঁচাতে চাইবে। কখনই নয়! সেটা এক হিংস্র আগুণের শিখা! —আল-মা’আরিজ ৭০:১১-১৫
আলহামদুলিল্লাহ। অসাধারণ। আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দান করুক।
আমিন
Alhamdulillah… Awesome
নতুন লেখার প্রতীক্ষায়…
সূচিপত্রে গেলে অনেকগুলো আর্টিকেল পাবেন।
খব ভাল লাগল
আলহামদুলিল্লাহ। আমি এখন পড়ো 2 বই পড়ছি। কুরআনের আয়াত গুলোকে গভীরভাবে অনুধাবনের চেষ্টা করছি। গতরাতে সুরা তীন শেষ করেছি।
আমি আপনাকে যে কিভাবে ধন্যবাদ দেব তা বলে বোঝাতে পারছি না।
পড় 2 বইটা শুরু করার পর আমি অনলাইনে আসলাম দেখার জন্য যে এই জাতীয় আরো কোন লেখা পায় কিনা, এখন দেখছি আপনাদের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপস আছে। তার মানে আমি কোরআনকে আরও সহজভাবে অধ্যায়ন করতে পারব। আলহামদুলিল্লাহ। ওয়েবসাইটটি পাওয়ার পরে আমি খুব আনন্দিত।
দোয়া করি যে আল্লাহ যেন আপনার লেখায় বারাকাহ দান করেন এবং আপনার কাজের উত্তম প্রতিদান দেন, আমীন।