আমি কি তোমাদেরকে জোড়ায়-জোড়ায় সৃষ্টি করিনি? — আন-নাবা ৮
অনেকে প্রশ্ন করেন, পৃথিবীতে যদি শুধুই নারী থাকতো, কোনো পুরুষ না থাকতো, তাহলে কি পৃথিবীটা অনেক শান্তির হতো না? অথবা, আল্লাহ تعالى যদি মানুষকে লিঙ্গবিহীন প্রাণী হিসেবে তৈরি করতেন, যেখানে সবাই নিজে থেকেই বাচ্চা জন্ম দিতে পারত, যেরকম কিনা অন্য কিছু প্রাণী পারে, তাহলে কী সমস্যা হতো? তখন নারী-পুরুষের দ্বন্দ্ব, সংসারে ঝামেলা, অশান্তি, অশ্লীলতা, ব্যাভিচার, ধর্ষণ ইত্যাদি মানবজাতির অর্ধেকের বেশি অপরাধ কখনো হতো না? আবার কিছু বিশেষ ব্যক্তিবর্গ এই প্রশ্নও করেন যে, এখানে জোড়ায়-জোড়ায় বলতে কি সমকামী জোড়া হতে পারে না?
নারী-পুরুষের বিবাহিত সম্পর্কের বাইরে অন্য যত ধরনের সম্পর্ক আছে, সেগুলো কোনো দিক থেকে বেশি ভালো কিনা এবং সমকামিতার পরিণাম নিয়ে নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে। তার কিছু এখানে তুলে ধরা হলো।
প্রথমত, সুরাহ রুম-এ আল্লাহ تعالى আমাদেরকে বলে দিয়েছেন বিপরীত লিঙ্গ তৈরির পেছনে কী বিরাট উদ্দেশ্য রয়েছে—
তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি হলো তিনি তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের সহধর্মী সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের কাছে শান্তি পেতে পারো এবং তিনি তোমাদের ভেতরে একে অন্যের প্রতি ভালবাসা এবং দয়া দিয়েছেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে চিন্তাশীলদের জন্য বিরাট নিদর্শন রয়েছে। —আর-রুম ৩০:২১
পুরুষ এবং নারী তৈরি করা হয়েছে, যেন এরা একে অন্যের কাছে শান্তি খুঁজে পেতে পারে। অনেক স্বামী জানেন এই অভিজ্ঞতাটা কেমন। সারাদিনের ক্লান্তি, শত দুশ্চিন্তার মধ্যে অস্থির হয়ে শুয়ে থাকার সময় স্ত্রী যখন কাছে এসে আলতো করে হাত ধরে, একটু গা ঘেষে বসে, তখন কী যেন এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে— অস্থিরতা হঠাৎ করে নেমে যায়। দুশ্চিন্তাগুলো কিছুক্ষনের জন্য গায়েব হয়ে গিয়ে মনটা শান্ত হয়ে যায়। শরীরের ক্লান্তিও যেন কমে যেতে থাকে। অথচ স্ত্রী কিছুই বলেনি বা কিছুই করেনি। সামান্য একটু সঙ্গ, একটু স্পর্শই যথেষ্ট দুনিয়ার শত সমস্যা স্বামীকে কিছুক্ষনের জন্য ভুলিয়ে শান্তি এনে দেওয়ার জন্য।
একই অনুভূতি স্ত্রীদের বেলায়ও হয়। তারা যখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকেন, ঘর-সংসার-কাজের হাজারো দায়িত্বে কারও মন জয় করতে না পেরে, কূলকিনারা হারিয়ে দিশেহারা অবস্থায় থাকেন, তখন স্বামীর একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া, একটা গভীর ভালবাসার আলিঙ্গন, মুহূর্তের মধ্যে স্ত্রীকে সব ভুলিয়ে দিয়ে অদ্ভুত এক শান্তির জগতে ডুবিয়ে দেয়।
৪০৪ জন প্রাপ্তবয়স্কের উপর গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ১৪ দিন নিয়মিত প্রতিদিন একে অন্যকে আলিঙ্গন করেছিল, তাদের মধ্যে মনমালিন্য এবং ঝগড়াঝাঁটি উল্লেখযোগ্য হারে কম হয়েছিল। শুধু তাই না, যেদিন তাদের মধ্যে মনমালিন্য বা ঝগড়াঝাঁটি হয়েছিল, সেদিন যারা শেষ পর্যন্ত একে-অন্যকে আলিঙ্গন করেছিল, তাদের পরবর্তীতে সমস্যা আরও প্রকট হবার পরিমাণ অন্যদের থেকে অপেক্ষাকৃত কম হয়েছিল। —এই গবেষণার উপসংহার হচ্ছে— স্বামী-স্ত্রী নিয়মিত একে অন্যকে আলিঙ্গন করলে শুধু যে তাদের মধ্যে মনমালিন্য এবং ঝগড়া কম হবে তাই-ই নয়, সেরকম কিছু হয়ে গেলেও তার ক্ষতিকর প্রভাব এবং পরবর্তীতে তা আরও জটিল হওয়ার সম্ভাবনা আলিঙ্গন অনেকাংশে কমিয়ে দেবে।[৪৬৭]
এগুলোর পিছনে জটিল বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। আল্লাহ تعالى এমনিতেই বলেননি যে, এর মধ্যে চিন্তাশীলদের জন্য বিরাট নিদর্শন রয়েছে। বহু গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে, যখন আমরা একে অন্যকে গভীরভাবে আলিঙ্গন করি, তখন বুকে-পেটের মধ্যে যে চাপ পড়ে এবং জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত দিয়ে আলতো করে উপর-নিচ করার কারণে শরীরের বিশেষ কিছু স্নায়ুতে যে চাপ পড়ে, তা থেকে আমাদের মস্তিষ্কে বিশেষ কিছু সিগন্যাল যায়, যা মস্তিষ্ক থেকে অক্সিটোসিন নিঃসরণ করে। এই অক্সিটোসিন শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে এমন কিছু হরমোন নিঃসরণ করে, যা মানসিক চাপ, অবসাদ কমিয়ে দেয়, শরীরে প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করে, উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে দেয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।[৪৬৯][৪৭২] গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত যে রোগীগুলোকে মায়া-মমতা দিয়ে হাত ধরা হয় এবং আলিঙ্গন করা হয়, তারা অন্য রোগীদের থেকে দ্রুত সুস্থ হয় এবং একই অসুখের জটিলতা তাদের গড়পড়তায় কম হয়। নিয়মিত যে দম্পতি একে অন্যকে আলিঙ্গন করে, হাত বুলিয়ে আদর করে, তাদের মধ্যে জটিল সমস্যা হওয়ার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়, সমস্যার পুনরাবৃত্তি কম হয় এবং তারা উভয়েই শারীরিক এবং মানসিকভাবে অপেক্ষাকৃত বেশি ভালো থাকে।[৪৭০] বিশেষ করে নারীদের উচ্চরক্তচাপ কমাতে আলিঙ্গন বিশেষ ভূমিকা পালন করে এবং এনিয়ে আলাদাভাবে করা গবেষণায় চমৎকার ফলাফল পাওয়া গেছে।[৪৬৮] [৪৭১]
গত পঞ্চাশ বছরে বহু গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের মানসিক সুস্থতার উপর বিয়ে একটি বিরাট ভূমিকা রাখে। হতাশা, অবসাদ সহ নানা ধরনের জটিল মানসিক সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নারী-পুরুষদের উপর পরিসংখ্যান নিয়ে দেখা গেছে: বিবাহিত নারী-পুরুষের এমন সমস্যা অবিবাহিতদের থেকে উল্লেখযোগ্য হারে কম। বিশেষ কিছু গবেষণায় এটাও বেরিয়ে এসেছে যে, অবিবাহিত সম্পর্কগুলো যেমন ডেটিং, লিভটুগেদার মোটেও বিবাহিত সম্পর্কের মতো একইরকম কল্যাণকর নয়। এমনকি পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে যেখানে লিভটুগেদারকে গ্রহণযোগ্য করে ফেলা হয়েছে, সেখানেও নারী-পুরুষের মানসিক সুস্থতার উপর বিয়ে কিছুটা হলেও বেশি ভূমিকা রাখে। আবার, কয়েকযুগ পর্যন্ত একটি ধারণা ছিল যে, বিয়ের ফলে শুধু পুরুষের উপকার বেশি হয়, নারীর বরং সমস্যা বেশি হয়। এই ধারণা পরবর্তীতে গিয়ে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিয়ের ফলে নারী-পুরুষ উভয়ের প্রায় সমান উপকার হয়।[৪৬৩] [৪৬৪] [৪৬৫] [৪৬৬]
আল্লাহ تعالى স্বামী-স্ত্রীর ভেতরে এক বিশেষ ধরনের ভালবাসা এবং দয়া তৈরি করে দিয়েছেন। কেউ যদি যথাসাধ্য ইসলামের নিয়ম মেনে পারিবারিক সম্পর্ক বজায় রাখেন, তাহলে আশা করা যায় যে, আল্লাহ تعالى সেই দম্পতির মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি এনে দেবেন এবং দুনিয়ার পরীক্ষাগুলো তারা দুজনে একসাথে সুন্দরভাবে পার করতে পারবেন।
তবে, স্বামী-স্ত্রী দুজনেই অত্যন্ত আল্লাহ-ভীরু হলেই যে সংসার সুখের হবে, সেই নিশ্চয়তাও নেই। সাহাবীদের ভেতরেও দাম্পত্য সমস্যা ছিল, যা তালাক পর্যন্ত চলে যেত। শুধু মনে রাখতে হবে যে, বিপরীত লিঙ্গ তৈরির উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেন তারা একে অন্যের কাছে শান্তি খুঁজে পেতে পারে। শান্তি দীর্ঘস্থায়ী হওয়া আরও অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে।
অনেকে যদিও দাবি করেন যে, এই আয়াতে ازواج আযওয়াজ মানে বিবাহিত হতে হবে, সেটা বাধ্য নয়। আরবিতে অবিবাহিত জোড়াকেও আযওয়াজ বলা হয়। তাই বিয়ে করাটা শান্তি পাওয়ার শর্ত নয়। যারা এরকম ভাবেন, তাদের কুরআনের অন্য আয়াতগুলো, যেখানে আযওয়াজ (স্ত্রী) এবং দাসীদের পরিষ্কারভাবে আলাদা করে উল্লেখ করা আছে এবং একইসাথে নিচের পরিসংখ্যানগুলো দেখার অনুরোধ থাকবে।
বিবাহিত বনাম বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক
পাশ্চাত্যে এবং আফ্রিকার দেশগুলোতে একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিবাহিত পরিবারে শারীরিক হিংস্রতার পরিমাণ ডেটিং এবং লিভটুগেদার করা পরিবার থেকে উল্লেখযোগ্য হারে কম। যেমন, বিবাহিত নারীদের থেকে অবিবাহিত নারীরা, যারা ডেটিং এবং লিভটুগেদার করছেন, তারা ২.১ গুণ বেশি শারীরিক আঘাতের শিকার হন, যা মূলত হয় মাথা, ঘাড় এবং মুখমণ্ডলে। যদিও কিনা সেই সব অবিবাহিত নারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবাহিত নারীদের থেকে গড়ে বেশি। এই অবিবাহিত নারীদের শরীরের একাধিক স্থানে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরিসংখ্যান বিবাহিত নারীদের দ্বিগুণ এবং একাধিক বার পুরুষ সঙ্গীর আক্রমণের শিকার হয়ে হাসপাতালে আসার সংখ্যা বিবাহিত নারীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। —এই পরিসংখ্যান বের হয়েছে পাঁচ বছর ধরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নারীদের উপর গবেষণা থেকে।[৪৫৮]
আমেরিকায় বিবাহ-বহির্ভূত দম্পতির সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার পর আরেকটি গবেষণায় একই তথ্য বেরিয়ে আসে— ডেটিং এবং লিভটুগেদার করা এক বছর মেয়াদি সম্পর্কগুলোতে যদিও হিংস্রতার পার্থক্য খুব একটা দেখা যায় না, কিন্তু পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় ধরে চলে আসা সম্পর্কগুলোতে হিংস্রতার পরিমাণ বিবাহিত পরিবার থেকে উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। যার অর্থ দাঁড়ায়, যত লম্বা সময় ধরে ডেটিং এবং লিভটুগেদার চলবে, শারীরিক নির্যাতনের সম্ভাবনা তত বেড়ে যাবে।[৪৫৯]
সমকামীরা তাহলে সুখী হয় কেন?
কুরআনে বলা আছে যে, মানুষকে জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে, যেন তারা একে অন্যের কাছে শান্তি খুঁজে পায়। তাহলে, সমকামীরা কেন একই লিঙ্গের হওয়ার পরেও একে অন্যের কাছে শান্তি খুঁজে পায় এবং একে অন্যের প্রতি ভালবাসা অনুভব করে, দয়া অনুভব করে? সমকামী সম্পর্কগুলো এত দীর্ঘস্থায়ী এবং সুখী হতে দেখা যায় কেন?
একটি বড় পর্যায়ের গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে: ৭৮% সমকামী জুটি তিন বছরের কম সময়ের মধ্যেই ভেঙ্গে যায়। মাত্র ১২% জুটি পাঁচ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় টিকে থাকে। সমকামী সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় —এটি একটি বহুল প্রচারিত মিথ্যা তথ্য।[৪৫৪, পৃষ্ঠা ৩১৪] এই মিথ্যা তথ্য এখনো পাশ্চাত্যের বহু জনপ্রিয় মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার করা হয়, অথচ তাদেরই একাধিক প্রকাশিত গবেষণা বলে উলটো কথা।
শুধু তাই নয়, গবেষণায় অংশগ্রহণ করা পুরুষ-সমকামী জুটিগুলোর মধ্যে ৮৩% পুরুষ তাদের সঙ্গীর বাইরে পঞ্চাশজনের বেশি অন্য পুরুষের সাথে কুকর্ম করেছেন। ৪৩% সমকামীর সঙ্গীর বাইরে অন্য পুরুষের সংখ্যা ছিল পাঁচ’শ এর বেশি। ২৮% সমকামীর ছিল হাজারের বেশি।[৪৫৪, পৃষ্ঠা ৩০৮] —এগুলো হলো এইডস মহামারি শুরু হবার আগে ১৯৭৮ সালের পরিসংখ্যান, যা সমকামীদের অধিকার এবং স্বাধীনতার স্বর্গ সানফ্রানসিসকো থেকে নেওয়া। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে আমেরিকার যৌনতা গবেষণার জার্নালে প্রকাশ পাওয়া পরিসংখ্যান[৪৫৪] এবং সমকামীদের অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা ‘জানরা’-তে প্রকাশ পাওয়া পরিসংখ্যান আরও জঘন্য।[৪৫৫] যত দিন যাচ্ছে সমকামীদের নোংরামির পরিমাণ ব্যাপক হারে বেড়ে যাচ্ছে। এরা এখন সংঘবদ্ধ হয়ে, প্রতিষ্ঠান গঠন করে, নিজেদের জন্য বিশেষ টিভি চ্যানেল, চলচ্চিত্র, ম্যাগাজিন প্রকাশ করে সবার চোখের সামনে নোংরামি করছে।
আমেরিকান সাইকিয়াট্রি এসোসিয়েশনের গবেষণা অনুসারে ৭৩% মনোবিজ্ঞানী রিপোর্ট করেছেন যে, সমকামী মানুষেরা বেশ কিছু পরিমাপে অপেক্ষাকৃত কম সুখী বলে চিহ্নিত হয়। ৭০% মনোবিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে, সমকামীদের যে মানসিক সমস্যা, তার মূল কারণ পারিপার্শ্বিক চাপ এবং সামাজিক সমস্যা নয়, যা কিনা সমকামীরা ব্যাপক প্রচারণা করে থাকে। বরং মূল কারণ হচ্ছে তাদের নিজের মধ্যে দ্বন্দ্ব।[৪৫০]
দুই জন সমকামী গবেষক ১৫৬টি দীর্ঘস্থায়ী সমকামী দম্পতির উপর গবেষণা করে দেখেন যে, এদের মধ্যে যারা পাঁচ বছর সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন, তারা একজনও একে অন্যের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন না। এরা তাদের সহধর্মীর বাইরেও বহু সঙ্গীর সাথে কুকর্ম করেছেন।[৪৫১]
সমকামী নারীদের একটা যুক্তি হলো নারীরা যেহেতু একে অন্যকে বেশি বোঝে, তাই নারীদের মধ্যে জুটি বেশি স্থায়ী হয় এবং অপেক্ষাকৃত কম ঝগড়া হয়। একজন নারীর জন্য পুরুষ-সঙ্গীর থেকে বরং আরেকজন নারী-সঙ্গীর সাথে জীবন পার করাটা বেশি নিরাপদ। কিন্তু গবেষণা বলে উলটো কথা। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ৯০% সমকামী-নারী তাদের নারী-সঙ্গীর কাছ থেকে মৌখিক হিংস্রতার শিকার হয়েছেন এবং ৩১% সমকামী-নারী তাদের নারী-সঙ্গীর কাছ থেকে শারীরিক হিংস্রতার শিকার হয়েছেন।[৪৫৬] শুধু তাই না, সমকামী-পুরুষ জুটির মধ্যে শারীরিক হিংস্রতার পরিমাণ নারী-পুরুষ জুটির থেকে দ্বিগুণ।[৪৫৭] একই ছাদের নিচে দুজন পুরুষ দীর্ঘসময় বাস করলে বেশি মারামারি করবে —এটা অপ্রত্যাশিত হওয়ার কথা নয়।
আমেরিকাতে একটি জাতীয় পর্যায়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ৭৫% নারী-সমকামীরা দীর্ঘমেয়াদি হতাশা এবং অবসাদের মানসিক চিকিৎসা নিয়েছেন।[৪৫২] এমনকি সমকামী পুরুষরা ছয়গুণ বেশি আত্মহত্যার চেষ্টা করে।[৪৪৯] এছাড়াও ২৫% থেকে ৩৩% সমকামী পুরুষ এবং নারী মদে আসক্ত।[৪৫৩] নারী সমকামীরা স্বাভাবিক নারীদের থেকে তিনগুন বেশি মদে আসক্ত এবং নানা ধরনের আত্নবিধ্বংসী আচরণে জর্জরিত।[৪৬০] একজন পুরুষ-সমকামী এবং উভয়লিঙ্গের গড় আয়ু স্বাভাবিক পুরুষের থেকে ৮-২০ বছর কম।[৪৬১]
আরেকটি জঘন্য তথ্য হলো, ২৯% সমকামী অভিভাবকের পূর্ণবয়স্ক সন্তানেরা তাদের অভিভাবকদের দ্বারাই যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। যার অর্থ প্রতি চারটি পরিবারের একটিতে সন্তানরা তাদের সমকামী বাবা বা মা দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। যেখানে, স্বাভাবিক নারী-পুরুষ বাবা-মায়ের পরিবারে সন্তানদের যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার পরিসংখ্যান ০.৬%। এই হিসেব অনুসারে যে সমস্ত বাচ্চারা কোনো একজন সমকামী অভিভাবকের কাছে বড় হচ্ছে, তাদের মধ্যে অজাচার হওয়ার সম্ভাবনা পঞ্চাশগুণ বেশি![৪৬১]
—এই একটি কারণই যথেষ্ট হওয়া উচিত ছিল সমকামিতাকে কঠোরভাবে দমন করে আইনত নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য। কিন্তু সেটা তো হয়ইনি, বরং দিনে দিনে সমকামিতাকে আরও বৈধতা দিয়ে অজাচারে মানসিকভাবে বিকৃত কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে।
সমকামীদের কামের চাহিদার কোনো সীমা নেই। পরিসংখ্যান পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দেয় যে, এরা তাদের সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ত হয় না। এদের ভেতরে শান্তি নেই, স্থিরতা নেই। এদের নিত্য-নতুন সঙ্গীর চাহিদার কোনো সীমা নেই। এমনকি এরা এতটাই কামে আসক্ত যে, এরা নিজেদের সন্তানদেরও ছেড়ে দেয় না। এরা মানবজাতির উপর এক ভয়ঙ্কর হুমকি। নিজেদের পশুত্বকে এরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও এরা পশু বানিয়ে যায়। এদের পরিমাণ যদি একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি হয়ে যায়, তাহলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বিপরীত দিকে ঘুরে গিয়ে জনসংখ্যা হ্রাস হতে হতে একসময় মানবজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
[৪৪৯] Alan P. Bell and Martin S. Weinberg, “Homosexualities: A Study of Diversity Among Men and Women”, (New York, Simon and Shuster, 1978)[৪৫০] Harold I. Lief, Sexual Survey Number 4: Current Thinking on Homosexuality, Medical Aspects of Human Sexuality 2 (1977), pp.110- 111.
[৪৫১] D McWhirter and A Mattison, “The Male Couple: How Relationships Develop, (Englewood Cliffs, Prentice-Hall).
[৪৫২] J. Bradford et al., “National Lesbian Health Care Survey: Implications for Mental Health Care,” Journal of Consulting and Clinical Psychology 62 (1994): 239, cited in Health Implications Associated with Homosexuality, p. 81.
[৪৫৩] Robert J. Kus, “Alcoholics Anonymous and Gay American Men”, Journal of Homosexuality, Volume 14, No.2 (1987), p.254
[৪৫৪] Paul Van de Ven et al., “A Comparative Demographic and Sexual Profile of Older Homosexually Active Men,” Journal of Sex Research 34 (1997): 354.
[৪৫৫] Genre (October 1996), quoted in “Survey Finds 40 percent of Gay Men Have Had More Than 40 Sex Partners,” Lambda Report, January 1998, p. 20.
[৪৫৬] Lettie L. Lockhart et al., “Letting out the Secret: Violence in Lesbian Relationships,” Journal of Interpersonal Violence 9 (1994): 469-492
[৪৫৭] Gwat Yong Lie and Sabrina Gentlewarrier, “Intimate Violence in Lesbian Relationships: Discussion of Survey Findings and Practice Implications,” Journal of Social Service Research 15 (1991): 41-59.
[৪৫৮] Wong, J. Y., Choi, A. W., Fong, D. Y., Choi, E. P., Wong, J. K., So, F. L., … Kam, C. W. (2016). A comparison of intimate partner violence and associated physical injuries between cohabitating and married women: a 5-year medical chart review. BMC public health, 16(1), 1207. doi:10.1186/s12889-016-3879-y Retrieved from https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5129237/
[৪৫৯] Taft Kenney, Catherine & Mclanahan, Sara. (2006). Why Are Cohabiting Relationships More Violent Than Marriages?. Demography. 43. 127-40. 10.1353/dem.2006.0007.
[৪৬০] Joanne Hall, “Lesbians Recovering from Alcoholic Problems: An Ethnographic Study of Health Care Expectations,” Nursing Research 43 (1994): 238-244
[৪৬১] Robert S. Hogg et al., “Modeling the Impact of HIV Disease on Mortality in Gay and Bisexual Men,” International Journal of Epidemiology 26 (1997): 657.
[৪৬২] P. Cameron and K. Cameron, “Homosexual Parents,” Adolescence 31 (1996): 772
[৪৬৩] KIM, H. K., & McKENRY, P. C. (2002). The Relationship Between Marriage and Psychological Well-being: A Longitudinal Analysis. Journal of Family Issues, 23(8), 885–911. https://doi.org/10.1177/019251302237296
[৪৬৪] Williams K. (2003). Has the future of marriage arrived? A contemporary examination of gender, marriage, and psychological well-being. Journal of health and social behavior, 44(4), 470–487.
[৪৬৫] GOVE, W. R., STYLE, C. B., & HUGHES, M. (1990). The Effect of Marriage on the Well-Being of Adults: A Theoretical Analysis. Journal of Family Issues, 11(1), 4–35. https://doi.org/10.1177/019251390011001002
[৪৬৬] Mastekaasa, A. (1992). Marriage and Psychological Well-Being: Some Evidence on Selection into Marriage. Journal of Marriage and Family, 54(4), 901-911. doi:10.2307/353171
[৪৬৭] Murphy, M., Janicki-Deverts, D., & Cohen, S. (2018). Receiving a hug is associated with the attenuation of negative mood that occurs on days with interpersonal conflict. PloS one, 13(10), e0203522. doi:10.1371/journal.pone.0203522
[৪৬৮] Kathleen C. Light, Karen M. Grewen, Janet A. Amico,
More frequent partner hugs and higher oxytocin levels are linked to lower blood pressure and heart rate in premenopausal women, Biological Psychology, Volume 69, Issue 1, 2005, Pages 5-21, ISSN 0301-0511,
https://doi.org/10.1016/j.biopsycho.2004.11.002.
(http://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0301051104001632)
[৪৬৯] #HugaBrit: the science of hugs and why they (mostly) feel so good. (n.d.). Retrieved from http://www.ox.ac.uk/research/hugabrit-science-hugs-and-why-they-mostly-feel-so-good
[৪৭০] Dan-Mikael Ellingsen, Johan Wessberg, Olga Chelnokova, Håkan Olausson, Bruno Laeng, Siri Leknes,
In touch with your emotions: Oxytocin and touch change social impressions while others’ facial expressions can alter touch, Psychoneuroendocrinology, Volume 39, 2014, Pages 11-20, ISSN 0306-4530, https://doi.org/10.1016/j.psyneuen.2013.09.017.
(http://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0306453013003363)
[৪৭১] Chantal Triscoli, Ilona Croy, Håkan Olausson, Uta Sailer, Touch between romantic partners: Being stroked is more pleasant than stroking and decelerates heart rate, Physiology & Behavior, Volume 177, 2017, Pages 169-175, ISSN 0031-9384, https://doi.org/10.1016/j.physbeh.2017.05.006. (http://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0031938417301336)
[৪৭২] Harvard Health Publishing. (2015, May 20). In brief: Hugs heartfelt in more ways than one. Retrieved from https://www.health.harvard.edu/newsletter_article/In_brief_Hugs_heartfelt_in_more_ways_than_one
মাশাল্লাহ… ?
আলহামদুলিল্লাহ, ভাইয়া আল্লাহপাক আপনাকে দুনিয়া এবং আখিরাতএ অনেক প্রতিদিন দান করুন। আমি কি আপনার এই লেখা গুলো দ্বীনি পেইজে শেয়ার করতে পারি। যদি অনুমতি পাই?
অবশ্যই। তবে মূল আর্টিকেলের লিংক দেবেন।
Article টির শিরোনামে ছিলো 78:8 এর। অথচ ব্যাখ্যা হয়েছে খুবই সীমিত আকারে 30:21 আয়াতের। এটা ঠিক ব্যাখ্যাও নয় বরং বলা যায় যে বহু গবেষনার ফলাফলের সংকলন। তবে গবেষণার পর্যবেক্ষণগুলো কোরআন – হাদিসের আলো বঞ্চিত মানুষের অজাচারের ফলাফলকে খুবই চমৎকারভাবে প্রতিফলিত করেছে। আপনার প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ। আপনার আরো ভালো ভালো লেখা পড়ার প্রত্যাশায় আছি। ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আপনার কর্মের উত্তম প্রতিদান দিবেন। مع اسسلم.