কোনটা সৃষ্টি করা বেশি কঠিন: তোমরা, নাকি যে আকাশ তিনি বানিয়েছেন, সেটা? তিনি সেটার ছাদকে উঁচু করেছেন, সুবিন্যস্ত করেছেন। এর রাতে আধার দিয়েছেন এবং এর দিনের উজ্জ্বলতা প্রকাশ করেছেন। আর ভূমিকে তারপরে বিস্তৃত করেছেন। তা থেকে পানি এবং তৃণভূমি বের করেছেন। দৃঢ়ভাবে পর্বতমালাকে গেঁথে দিয়েছেন। এসবই তোমাদের এবং তোমাদের গবাদির জীবিকার জন্য। —আন-নাযিয়াত ২৭-৩৩
কোনটা সৃষ্টি করা বেশি কঠিন: তোমরা, নাকি যে আকাশ তিনি বানিয়েছেন, সেটা?
আগে যখন বিদ্যুতের আলো ছিল না, বায়ু দূষণ ছিল না, তখন অন্ধকার পরিষ্কার রাতে আকাশ হতো এক কল্পনাতীত সুন্দর ছবির ক্যানভাস। আমাদের ছায়াপথ এবং মহাবিশ্বের কোটি কোটি তারায় ভরা রাতের আকাশ দেখে, যে কারো মনে সৃষ্টিজগতের সৌন্দর্যের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হতো। যারা সময় নিয়ে, মুগ্ধ হয়ে, রাতের এই অসাধারণ সুন্দর, সুশৃঙ্খল আকাশের ছবি, অনন্ত নক্ষত্র বীথি দেখতেন, গভীরভাবে চিন্তা করতেন: কীভাবে এটা তৈরি হলো? কীভাবে এটা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে? কীভাবে এটাকে এত সুন্দর করে সাজানো হয়েছে? —তাদের পক্ষে অনুধাবন করা কঠিন হতো না যে, এর পেছন এক অসীম সৃজনশীল, প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী কেউ রয়েছেন। যিনি একাই এটি তৈরি করেছেন এবং যিনি একাই সবসময় এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করছেন।
যারা পৃথিবী ঘুরে দেখেছেন, তারা উপলব্ধি করেছেন এই পৃথিবীটা আসলে কত বড়। এই পৃথিবীর আকৃতির তুলনায় আমরা হচ্ছি অনেকটা একটা বিরাট ফুটবল মাঠে পড়ে থাকা এক কণা ধুলোর সমান। আর এই পৃথিবীটা আমাদের সৌরজগতের তুলনায় এতই ক্ষুদ্র যে, সৌরজগত যদি একটা বিরাট ফুটবল মাঠ হয়, তাহলে পৃথিবীটা হবে একটা ছোট মার্বেলের সমান। আর আমাদের সৌরজগত যেই ছায়াপথে আছে, সেটা এত প্রকাণ্ড আকৃতির যে, সেটাকে একটা ফুটবল মাঠ কল্পনা করলে আমাদের সৌরজগত তার তুলনায় হয়ে যাবে একটা ধূলিকণার সমান। এরকম হাজার কোটি সৌরজগত নিয়ে আমাদের ছায়াপথ প্রচণ্ড বেগে ঘুরছে।
এরকম প্রকাণ্ড ছায়াপথ একটি-দুটি নয়, হাজার-হাজার কোটি ছায়াপথ নিয়ে আমাদের মহাবিশ্ব। আমরা এখনো পুরো মহাবিশ্ব দেখতে পারিনি, কোনোদিন পারবোও না। মহাবিশ্বের সব কিছুই মানুষের কল্পনার সীমার বাইরে প্রকাণ্ড সব আকৃতি। পৃথিবী ছেড়ে মহাশূন্যে বের হলেই আমরা এমন বিশাল সব আকৃতি এবং অনন্ত শূন্যতার মধ্যে গিয়ে পড়ি যে, সব কিছুই তখন মানুষের চিন্তার সীমার বাইরে চলে যায়।
তিনি সেটার ছাদকে উঁচু করেছেন, সুবিন্যস্ত করেছেন
আকাশে সাতটি স্তর রয়েছে যেগুলো বিভিন্নভাবে আমাদের রক্ষা করে। প্রথম স্তরে আছে মেঘ। মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়, যা থেকে মাটিতে ফল, ফসল হয় এবং সেগুলো থেকে আমাদের খাবার আসে। মেঘে পানি বিশুদ্ধরূপে জমা থাকে, যেটা বৃষ্টির মাধ্যমে নদী, খাল-বিলে এসে আমাদের খাবার পানির সরবরাহ দেয়। যদি মেঘ না থাকত, তাহলে গরমকালে সূর্যের তাপে এবং শীতকালে জলীয়বাষ্প হারিয়ে গিয়ে পৃথিবীর বেশিরভাগ জায়গা মরুভূমি হয়ে যেত। আকাশের দ্বিতীয় স্তরে আছে ওজোন স্তর, যা আমাদেরকে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে রক্ষা করে। যদি তা না থাকত, তাহলে পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বেঁচে থাকতে পারত না। একইভাবে আকাশের উপরের স্তরগুলো আমাদেরকে প্রতিদিন শত শত উল্কা, মহাজাগতিক ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে।[১৩৬]
এর রাতে আধার দিয়েছেন এবং এর দিনের উজ্জ্বলতা প্রকাশ করেছেন
রাত হওয়াটা একটা বিরাট ঘটনা। আমরা যেই ছায়াপথে আছি, সেটাতেই বিশ হাজার কোটির বেশি তারা আছে। আর এই রকম অকল্পনীয় সংখ্যার তারা নিয়ে তৈরি বিশাল বিশাল ছায়াপথ মহাবিশ্বে আছে হাজার-হাজার কোটি। আমরা আকাশের যে দিকেই তাকাই না কেন, প্রতিটি বিন্দুতেই অসংখ্য তারা রয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে: কেন আকাশের প্রতিটি বিন্দু জ্বল জ্বল করছে না?
মহাবিশ্ব এত প্রচণ্ড বেগে সম্প্রসারিত হচ্ছে যে, আমাদের ছায়াপথ থেকে অন্য অনেক ছায়াপথ আলোর থেকেও বেশি দ্রুত বেগে দূরে সরে যাচ্ছে। যদি তা না হতো, তাহলে আকাশের প্রতিটি বিন্দুতে নক্ষত্র থেকে আসা আলো দেখতে পেতাম। পুরো আকাশের প্রীতিটি বিন্দু নক্ষত্রের আলোতে জ্বল জ্বল করতো, কোথাও কোনো অন্ধকার থাকতো না। আজকে আমরা রাতের আঁধার উপভোগ করতে পারছি, কারণ মহাবিশ্ব প্রতি মুহূর্তে আলোর গতিবেগের থেকেও বেশি জোরে সম্প্রসারিত হচ্ছে। একারণে আকাশের অনেক জায়গায় এখনো নক্ষত্র থেকে ছুটে আসা আলোর রশ্মি আমাদের কাছে পৌঁছুতে পারেনি। সেই জায়গাগুলো একারণেই অন্ধকার।[৩০০]
ভূমিকে তারপরে বিস্তৃত করেছেন। তা থেকে পানি এবং তৃণভূমি বের করেছেন
আল্লাহ تعالى পৃথিবীর উপরের স্তরকে আমাদের জন্য নরম করে দিয়েছেন, যেন আমরা বাসা বানাতে পারি। পৃথিবীর পৃষ্ঠ যদি পাথরের মতো কঠিন হতো, তাহলে আমরা মাটি খুড়ে বাসা বানানো তো দূরের কথা, ঠিকমতো হাটতেও পারতাম না। আবার পৃথিবী যদি শুক্র, বৃহস্পতি, নেপচুন ইত্যাদি গ্রহের মতো পুরোটাই নরম, গলিত হতো, তাহলে আমাদের পক্ষে বহুতল ভবন বানানোও সম্ভব হতো না। আল্লাহ تعالى পৃথিবীর উপরের স্তরে যথেষ্ট জায়গা— একদম শক্তও নয়, আবার একদম নরমও নয়—এমন ভাবে বানিয়ে দিয়েছেন, যেন আমরা বাসা বানিয়ে, ক্ষেত-খামার করে, পরিবার-পরিজন নিয়ে আরামে থাকতে পারি।
পৃথিবীতে একসময় মানুষের মতো জটিল প্রাণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ছিল না। বায়ুমণ্ডলে ব্যাপক পরিমাণে অক্সিজেন ছাড়ার জন্য যেসব ব্যাকটেরিয়া দরকার, তাদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে মলিবডেনাম ছিল না। যখন বড় বড় পর্বতগুলো তৈরি হলো, বিশেষ করে ৭৫০০ ফুটের বেশি উঁচু পর্বতগুলো, তখন সেই পর্বতগুলোর পৃষ্ঠ ক্ষয় থেকে যথেষ্ট পরিমাণে মলিবডেনাম বেরিয়ে এল এবং তা ব্যবহার করে ব্যাকটেরিয়াগুলো বিপুল পরিমাণে অক্সিজেন তৈরি করে বায়ুমণ্ডলে ২০% পর্যন্ত অক্সিজেন সরবরাহ করল। এরপর থেকেই সম্ভব হলো জটিল বহুকোষী প্রাণের বিকাশ। যদি উঁচু পর্বত না থাকত, তাহলে বায়ুমণ্ডলে ২০% অক্সিজেন হতো না, কোনোদিন পৃথিবীতে মানুষ আসত না।[৪৪২]
আল্লাহ تعالى পৃথিবীতে উঁচু পর্বত দিয়েছেন যেন বায়ুমণ্ডলে ২০% পর্যন্ত অক্সিজেন তৈরি হয়, যার ফলে পৃথিবীতে উন্নত প্রাণের বিকাশ ঘটতে পারে।
দৃঢ়ভাবে পর্বতমালাকে গেঁথে দিয়েছেন
পৃথিবীর মোট স্থলভাগের প্রায় ২৭% জুড়ে আছে পাহাড়-পর্বত।[৪৩৩] বেশিরভাগ নদীর উৎপত্তি হয় পাহাড়-পর্বতে। সমুদ্রের পানি বাষ্প হয়ে মেঘ হয়, তারপর তা পাহাড়ের গায়ে লেগে পানির ধারা শুরু হয়, যা বড় হতে হতে একসময় নদী হয়ে যায়। পাহাড় না থাকলে নদী থাকত না, নদী না থাকলে এত মাছ থাকত না, সেচের ব্যবস্থা থাকত না, থাকত না মাল পরিবহন, দূরে যাতায়াতের এত সহজ ব্যবস্থা। পাহাড়গুলো শীতকালে বরফ হিসেবে পানি জমিয়ে রাখে এবং গ্রীষ্ম, বসন্তকালে সেই বরফ গলে পানির ধারা নেমে আসে। যদি পাহাড় শীতকালে এভাবে বরফ জমিয়ে না রাখত, তাহলে অন্য ঋতুতে নদী-নালাগুলো শুকিয়ে যেত, শস্যক্ষেত, বনজঙ্গল শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে যেত।[৪৪৪]
হিমালয়ের মতো বিশাল উঁচু পর্বতগুলো মেঘ আটকিয়ে রেখে বিশেষ আবহাওয়া তৈরি করে, যার কারণে উপমহাদেশে মৌসুমি বৃষ্টি হয়। মৌসুমি বৃষ্টি উপমহাদেশের কৃষি এবং মাছের ব্যাপক প্রাচুর্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয়; যা না থাকলে উপমহাদেশে এত জনসংখ্যা কোনোদিন হতো না, বহু আগেই মানুষ না খেয়ে মারা যেত, অভাবে বছরের পর বছর দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত।[৪৪৫]
তারপর যখন এক মহাসঙ্কট আসবে। সেদিন মানুষ মনে করবে সে কী করে এসেছে। জাহান্নামকে সবার দেখার জন্য প্রকাশ করা হবে। সুতরাং যে সীমালঙ্ঘন করে এবং দুনিয়ার জীবনকে বেশি গুরুত্ব দেয় —জাহান্নামই হবে তার আবাস। —আন-নাযিয়াত ৩৪-৩৯
আমরা জীবনে প্রায়ই এমন কিছু পরিস্থিতিতে পড়ি, যখন ইসলামের নিয়ম মেনে চললে, আল্লাহর تعالى নির্দেশ অক্ষরে-অক্ষরে পালন করলে দেখা যাবে যে, আত্মীয়-বন্ধুদের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটবে, ব্যবসায় কোনো বড় কাস্টমার হারিয়ে ফেলব, চাকরিতে প্রমোশন হাতছাড়া হয়ে যাবে, সমাজে স্ট্যাটাস নষ্ট হয়ে যাবে, লোকজন নানা কথা বলাবলি করবে ইত্যাদি। জীবনে প্রায়ই এমন ঘটনা আসে, যখন নিজেকে বোঝাতে হয়, “থাক না, একদিনেরই তো ব্যাপার। একটু ঘুষ খেলে কী হয়। সবাই খাচ্ছে না?” অথবা হয়তো নিজেকে যুক্তি দেখাই, “আমি যদি এটা না করি, তাতে কী হবে? আমার পরে যে আসবে সে তো ঠিকই করবে। তারচেয়ে এবার একটু অন্যায় করি। পরে বেশি করে ভালো কাজ করে পাপ কেটে নেবো।”
স্ট্যাটাস, সম্পত্তি, ক্ষমতা, সম্মানকে আমরা এতটাই ভালবাসি যে, এদেরকে ধরে রাখার জন্য মাঝে মাঝেই ইসলামকে বিসর্জন দিয়ে দেই। জেনেশুনে আল্লাহর تعالى নির্দেশ অমান্য করি। মনে মনে আল্লাহর تعالى সাথে পাপ-পুণ্যের লেনদেনের হিসেব করি। তাঁকে تعالى বোঝানোর চেষ্টা করি: কেন তাঁর تعالى নিষেধ এবার মানছি না, এবং কেন তাঁর تعالى উচিত এবার আমাকে মাফ করে, আরেকবার সুযোগ দেওয়া।
কিছু মানুষ আছে যাদের জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে পার্টি, ভিডিও গেম, মুভি, প্রেম, ড্রিঙ্ক, নাচ, গান — এসব করে জীবনটা উপভোগ করা। এরা সকালে ঘুম থেকে উঠে পরিকল্পনা করে: আজকে কোথায় ঘুরতে যাবে, কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে বন্ধুদের সাথে খাবে, কোথায় গিয়ে আড্ডা দিবে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কোথায় গিয়ে পার্টি করবে, সন্ধ্যায় কী সিরিয়াল দেখবে, রাতে কী মুভি দেখবে, সারারাত কী ভিডিও গেম খেলবে, কখন কোথায় দাঁড়িয়ে কী পোজ নিয়ে সেলফি তুলবে ইত্যাদি। এরা এই সব আমোদপ্রমোদের ব্যবস্থা সবসময় ধরে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে যা করা দরকার তাই করে। এর জন্য সম্পর্ক, সমাজ, সংস্কৃতি, সততা, আদর্শ, বিবেক বিক্রি করে দিতে হলেও তা করবে। তবে সবার আগে তারা যা বিক্রি করে দেয়, তা হলো ইসলাম।
এরা যখন কোনো মুসলিম ভাই বা বোনকে দেখে, যারা তাদের মতো চিপা বা খোলা জামা পরে ‘জীবনটা উপভোগ’ করে না, ভিডিও গেম, হিন্দি সিরিয়াল, মুভিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বুঁদ হয়ে থাকে না, রেস্টুরেন্টে গিয়ে বাবা-মার কষ্টের অর্জন মুহূর্তের মধ্যে উড়িয়ে দিয়ে আসে না — তখন ভাবে, “ইস! জীবনটা কীভাবে এরা নষ্ট কর্তেসে? মোল্লাগুলো এদের ব্রেইন এমন ওয়াশ করে দিসে! মাথা এক্কেবারে গেসে। এরা কী আনস্মার্ট, ব্যাকডেটেড! হাজার বছর আগের গেঁয়ো আরবদের মতো লাইফস্টাইল এখনো এরা ফলো কর্তেসে।”
কিন্তু এরপরেও কিছু মানুষ আছেন যারা সমাজ, সংস্কৃতি, সম্মান, সম্পদ, ক্ষমতা, স্ট্যাটাস, ‘লোকে কী বলবে’ এসবের থেকে আল্লাহকে تعالى বেশি ভালবাসতে পেরেছেন। তাদের কথার ধরণ, পোশাকের ধরণ, বন্ধু-বান্ধবদের প্রকৃতি, ঘরের আসবাবপত্র, লাইব্রেরিতে সাজিয়ে রাখা বইগুলো, ফেইসবুকের স্ট্যাটাস, মোবাইল ফোনের অ্যাপসগুলো—এই সবকিছু দেখলে বোঝা যায় যে: এদের জীবনে কোনো একটা বিরাট উদ্দেশ্য আছে এবং এরা সেই ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। এরা শপিং মলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেহুদা ঘুরে বেড়ান না, প্রতিদিন ফোনে দুই ঘণ্টা গল্প করেন না, দিনে তিনটা হিন্দি সিরিয়াল দেখেন না, ফেইসবুকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁ করে তাকিয়ে থাকেন না, রাস্তা ঘাটে বসে পুরো সময়টা মোবাইল ফোনে গেম খেলেন না। এদের ভাবসাব পুরোই আলাদা। একদল মানুষ এদেরকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করে, এদেরকে নানা ধরনের নাম দেয়: মোল্লা, নিনজা, তালেবান, হুজুর। কিন্তু আল্লাহ تعالى এদের সম্পর্কে বলেছেন—
আর যে তার রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় করেছে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে —জান্নাতই হবে তার আবাস। —আন-নাযিয়াত ৪০-৪১
“যে তার রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় করেছে” — একজন মুসলিমের জন্য এর চেয়ে ভয়ের কিছু নেই। আমরা অনেক সময় এমন কিছু কাজ করি, যা অন্য কেউ দেখে ফেললে, অথবা মানুষের কাছে প্রকাশ হয়ে গেলে আর মানুষকে মুখ দেখাতে পারবো না। সারা জীবন মাথা নিচু করে অপমানিত হয়ে জীবন পার করতে হবে। এত কষ্ট করে অর্জন করা মান-সম্মান, মানুষের ভালবাসা সব মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। অনেক সম্মানিত মানুষ আছেন যাদেরকে আমরা শ্রদ্ধা করি, অনুসরণ করি। অথচ তাদেরই জীবনে দেখা যায় তারা এমন কিছু করেছেন, যা জানতে পারলে আমরাই তাদের মুখে থুথু মারব। এরকম একটা নোংরা মানুষকে কীভাবে আমরা এতদিন সম্মান করেছি, তা ভেবে নিজেকে ধিক্কার দেবো। প্রতিটি মানুষের জীবনেই এরকম লজ্জার ঘটনা আছে, যা সে সারাজীবন মানুষের কাছে গোপন রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে। মানুষের কাছে গোপন রাখতে পারলেও আল্লাহর تعالى কাছে গোপন করতে পারবে না। একদিন আল্লাহর تعالى সামনে একা দাঁড়িয়ে আমরা এই দুনিয়ায় করা প্রতিটি কাজ এক এক করে দেখতে থাকবো।
তারা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করে, “কবে হবে সেটা?” এ ব্যাপারে তোমার কী বলার আছে? এর চূড়ান্ত জ্ঞান শুধুমাত্র তোমার প্রতিপালক জানেন। তোমাকে পাঠানো হয়েছে শুধুই তাদেরকে সাবধান করার জন্য, যারা একে ভয় করে। যেদিন তারা সেটা দেখতে পাবে, তাদের কাছে মনে হবে যেন এই জীবনটা ছিল শুধুই এক সন্ধ্যা বা সকাল মাত্র। —আন-নাযিয়াত ৪২-৪৬
কেন কিয়ামতের দিন মানুষকে আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া হলো না? যদি ঘোষণা দেওয়া হতো যে, ২০২০ সালে পহেলা বৈশাখ রোজ বুধবার সকাল ১০ ঘটিকায় কিয়ামত হইবে, তাহলে কী সমস্যা হতো?
যেই প্রজন্মের মানুষ বুঝে যেত যে, কিয়ামত তার জীবনকালেই হতে যাচ্ছে, সেই প্রজন্ম গভীর হতাশায় ডুবে যেত। তারা তখন দুনিয়ার আর কোনো কাজেই আগ্রহ পেত না। পড়ালেখা করে আর কী হবে? আগামী বছরই তো কিয়ামত? জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা করে আর কী লাভ? মানব সভ্যতা তো আগামী বছরই শেষ? চাকরি-ব্যবসা করে কী লাভ? সব কর্মচারী ছাটাই করে বাসায় বসে শুধু নামাজ পড়ি? —এভাবে চরম অনীহা, হতাশা, বিতৃষ্ণায় মানুষের জীবন অচল হয়ে যেত। অনেকই তখন এক অস্বাভাবিক আতংকে জীবন পার করা শুরু করতো যে, অল্প যেটুকু হায়াত তারা পেয়েছে, সেটা তো শেষ হয়ে যাচ্ছে। হায় হায়! সেকি যথেষ্ট ভালো কাজ করতে পেরেছে? বহু মানুষ কিয়ামতের কাছাকাছি সময়ে এসে আতংকে পাগল হয়ে যেত।
আর যেই প্রজন্মগুলো গ্যারান্টি পেয়ে যেত যে, কিয়ামত আর তাদের জীবনকালে হচ্ছে না, সেই প্রজন্মগুলোর পাপীদের পাপের পর্যায় হতো ভয়াবহ। কিয়ামত কবে হবে, সেটা নির্দিষ্ট করে না দেওয়াতে মানুষ একধরনের আশা এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকে। এই অনিশ্চয়তা থেকে একধরনের ভয় তৈরি হয়। যদি অনিশ্চয়তা না থাকে, তাহলে এই ভয় মানুষের মন থেকে সহজেই চলে যাবে। মানুষ তখন হিসেব করে এমন সব অপরাধ করা শুরু করবে, যা সে কিয়ামত যে কোনো সময় হতে পারে, তা জানলে আর করতো না।
“যদি আমার জীবনে কিয়ামত না হয়, তাহলে কিয়ামতের ভয় পেয়ে কী লাভ?” —কিয়ামত হবে কি হবে না তার সম্ভাবনা ৫০-৫০। যে এই প্রশ্ন করছে, তাকে একইভাবে, একই গুরুত্ব দিয়ে প্রশ্ন করতে হবে, “যদি আমার জীবনে কিয়ামত হয়, তাহলে কী হবে?” কিন্তু এই প্রশ্ন তারা করবে না। তারা শুধু প্রথম প্রশ্ন করে নিজেকে এবং অন্যদেরকে প্রতারিত করে, যেন কিয়ামত না হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। কীভাবে যেন তারা নিশ্চিত হয়ে গেছে যে, তাদের জীবনে আর কিয়ামত হচ্ছে না, তাই কিয়ামত-এর ভয় পেয়ে কোনো লাভ নেই। এগুলো সবই হচ্ছে ফুর্তি করার অজুহাত তৈরি করা। আসল কথা হচ্ছে এরা ইসলামের নিয়ম মানবে না।
আল্লাহর تعالى অশেষ অনুগ্রহ যে, তিনি আমাদেরকে কিয়ামতের বর্ণনা দিয়েছেন, যেন আমরা প্রস্তুত হতে পারি। না হলে আমরা কোনো রকম পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই কিয়ামতের মুখোমুখি হতাম। তখন গিয়ে দাবি করতাম, “কই? কেউ তো আমাকে বলেনি এই অবস্থা হবে? আগে জানলে তো আমি ভালো হয়ে যেতাম। আমাকে কিছু জানানো হয়নি কেন?”
[১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর। [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ। [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি। [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী। [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি। [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী। [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স। [১৯] তাফসির আল-কাবির। [২০] তাফসির আল-কাশ্শাফ। [৩০০] “Why is the sky dark at night?” Spaceplace.nasa.gov (2015). Retrieved 20 June 2015, from http://spaceplace.nasa.gov/review/dr-marc-space/dark-sky.html [৪৪২] Molybdenum and evolution. (2011, September 1). Retrieved from https://eic.rsc.org/feature/molybdenum-and-evolution/2020196.article [৪৪৩] Why is it Important? (2007, June 6). Retrieved from http://www.cbd.int/mountain/importance.shtml [৪৪৪] Mountains: globally important ecosystems. (n.d.). Retrieved from http://www.fao.org/3/w9300e/w9300e03.htm [৪৪৫] Majestic Mountain Grandeur. (2009, January 21). Retrieved from https://www.reasons.org/explore/blogs/todays-new-reason-to-believe/read/tnrtb/2009/01/21/majestic-mountain-grandeur
I am very pleased to read this app. The Almighty Allah bless us to understand the Holy Quran and we can obey the rules in our everyday life.
খুব ভালো লাগে আপনার জন্য শুভকামনা রইল