কুরআনের কথা

তোমরা কথা দিয়ে কথা রাখোনি — আল-বাক্বারাহ ৮৩ – পর্ব ১


আল্লাহ تعالى এই আয়াতে আমাদেরকে এমন কিছু করতে বলবেন, যেগুলো আমরা সচরাচর শুনতে চাই না। বরং কেউ আমাদেরকে এই কথাগুলো বললে আমাদের গা জ্বালা করে, আমরা নানা টালবাহানা করে, অজুহাত দেখিয়ে এগুলো এড়িয়ে যেতে যাই। আজকে আমরা মুসলিমরা কত নীচে নেমে গেছি, সেটা এই আয়াত থেকে একেবারে পরিষ্কার হয়ে বেড়িয়ে যাবে—

মনে করে দেখ, যখন আমি বনী ইসরাইলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম: “আল্লাহ ছাড়া আর কোনো কিছুরই ইবাদত করবে না; বাবা-মার জন্য সবকিছু সবচেয়ে ভালোভাবে করবে; এবং নিকটাত্মীয়, অসহায়-এতিম আর গরিব-সামর্থ্যহীনদের সাথেও; মানুষের সাথে খুব সুন্দর ভাবে কথা বলবে; সালাত প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত দিবে।” এরপরও তোমাদের কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলে। তোমরা কথা দিয়ে কথা রাখোনি। [আল-বাক্বারাহ ৮৩]

বনী ইসরাইলিরা ছিল সেই যুগের মুসলিম। তাদের কাছ থেকে আল্লাহ تعالى কিছু অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। তারা সেগুলো মানেনি। আল্লাহ تعالى তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আজকের যুগের মুসলিমরা হচ্ছে বনী ইসরাইলের উত্তরসূরি। আমরা কতখানি সেই অঙ্গীকার মানছি দেখা যাক—

অঙ্গীকার ১:  আল্লাহ ছাড়া আর কোনো কিছুরই ইবাদত করবে না

বেশিরভাগ অনুবাদে তা’বুদুনা-কে تَعْبُدُونَ ‘ই’বাদত করো’ বা ‘উপাসনা করো’ অনুবাদ করা হয়, যা মোটেও তা’বুদুনা প্রকৃত অর্থকে প্রকাশ করে না। তা’বুদুনা এসেছে আ’বাদা  عبد থেকে, যার অর্থ দাসত্ব করা। আমরা শুধুই আল্লাহর تعالى উপাসনা করি না, আমরা আল্লাহর تعالى দাসত্ব করি।[১] এমনটি নয় যে, আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়লাম, রোযা রাখলাম, যাকাত দিলাম—ব্যাস, আল্লাহর تعالى সাথে আমাদের সম্পর্ক শেষ, এরপর আমি যা খুশি তাই করতে পারি। বরং আমরা সবসময় আল্লাহর দাস। ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত প্রতিটা কাজে, প্রতিটা কথায় আমাদের মনে রাখতে হবে—আমরা আল্লাহর تعالى দাস এবং আমরা যে কাজটা করছি, যে কথাগুলো বলছি, তাতে আমাদের প্রভু সম্মতি দেবেন কি না এবং প্রভুর কাছে আমি জবাব দিতে পারব কি না।

عبد এর অর্থ অসম্পূর্ণভাবে বা ভুলভাবে বোঝার কারণে মুসলিমদের মধ্যে একটি বহুল প্রচলিত আয়াত নিয়ে ব্যাপক ভুল ধারণা রয়েছে—

আমি জ্বিন এবং মানুষ সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য। [আয-যারিয়াত ৫১:৫৬]

অনেকে মনে করেন, আল্লাহ تعالى জ্বিন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র নামায পড়া, রোযা রাখা, যাকাত দেওয়া, যিকর করা, ইসলামের দাওয়াত দেওয়া, জিহাদ করা ইত্যাদির জন্য। এগুলো ছাড়া আর বাকি যা কিছুই মানুষ করে: পড়ালেখা, চাকরি, ব্যবসা, বেড়ানো, বিনোদন — এই সব কিছু হচ্ছে ফালতু কাজ, সময় নষ্ট। বরং এগুলো করলে এই আয়াতের বিরুদ্ধে যাওয়া হয়। —এটা একটি ভুল ধারণা। এই আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে বোঝানো যে, আল্লাহ تعالى জ্বিন এবং মানুষ সৃষ্টি করেছেন, যেন তারা জীবনের সকল ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আল্লাহর تعالى দাসত্ব করে, অন্য কারো বা কিছুর দাসত্ব না করে।

এরকম মানুষ দেখেছেন কি, যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে গিয়ে পড়ে, কিন্তু ব্যাংকের একাউন্ট থেকে সুদ খায়, সুদের লোন নিয়ে বাড়ি কেনে, কাউকে ভিক্ষা দেবার সময় বা মসজিদে দান করার সময় মানিব্যাগের সবচেয়ে ছোট যে নোটটা আছে সেটা খোঁজে? বা এরকম মানুষ কি দেখেছেন যে হাজ্জ করেছে, বিরাট দাড়ি রেখেছে, কিন্তু বাসায় তার স্ত্রী, সন্তানদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে? অথবা টাখনুর উপর প্যান্ট পরে সালাত আদায় করতে করতে কপালে দাগ পড়ে গেছে এবং ২-৩ বার হাজ্জও করে এসেছেন, কিন্তু তার হাজ্জসহ সকল স্থাবর সম্পত্তি ঘুষের টাকায় করা! এরা সত্যিই আল্লাহর تعالى আবদ্‌ হতে পেরেছে কিনা সেটা আল্লাহ تعالى ভালো জানেন। তবে এরা আল্লাহর تعالى ই’বাদত করছে না। এরা শুধুই কিছু উপাসনা করছে। উপাসনার বাইরে আল্লাহর تعالى প্রতি নিজেকে সমর্পণ করে দিয়ে আবদ্‌ হয়ে আল্লাহর تعالى ইবাদত করতে এখনও বাকি আছে।

আরেক ধরনের মানুষ আছে যারা এখনও আল্লাহর تعالى ইবাদত করা শুরু করতে পারেনি, যারা ঠিকই নামায পড়ে, রোযা রাখে, যাকাত দেয়, কিন্তু ছেলেমেয়ের বিয়ে দেয় বিধর্মীদের বিয়েরীতি অনুসরণ করে গায়ে-হলুদ, বউ-ভাত, পান-চিনি করে। আরেক ধরনের মানুষ হলো যারা মাসজিদে বা ইসলামিক অনুষ্ঠানে যায় একদম মুসলিম পোশাক পড়ে, হিজাব করে, কিন্তু বন্ধু বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীর বাসায় বা বিয়ের অনুষ্ঠানে যায় উগ্র সাজসজ্জা করে। আরেক ধরনের আজব মানুষ দেখেছি যারা হাজ্জ করতে যায় হিজাব পড়ে, কিন্তু প্লেন সউদি আরবের সীমানা থেকে বের হয়ে অন্য এয়ারপোর্টে নামার সাথে সাথে বাথরুমে গিয়ে হিজাব খুলে ফেলে আপত্তিকর পশ্চিমা কাপড় পড়ে নেয়। এদের সবার সমস্যা একটি: এরা এখনও আল্লাহকে تعالى একমাত্র প্রভু হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। এদের কাছে ‘লোকে কী বলবে’ বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ‘আল্লাহ কী বলবেন’ সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।

আমরা যখন নিজেদের আল্লাহর تعالى দাস হিসেবে ঘোষণা দেব, তখনই আমরা আমাদেরকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন করতে পারব। যতদিন সেটা করতে না পারছি, ততদিন আমরা ‘লোকে কী বলবে’-এর দাস হয়ে থাকব। ফ্যাশনের দাস হয়ে থাকব। বিনোদন, সংস্কৃতি, সামাজিকতার দাস হয়ে থাকব। একমাত্র আল্লাহর تعالى প্রতি একান্তভাবে দাসত্ব করতে পারলেই আমরা এই সব মিথ্যা ‘প্রভু’দের দাসত্ব থেকে নিজেদেরকে বের করে আনতে পারব। যারা সেটা করতে পেরেছেন, তারা জানেন এই পৃথিবীতে সত্যিকার স্বাধীনতার স্বাদ কত মধুর!

অঙ্গীকার ২: বাবা-মার জন্য সবকিছু সবচেয়ে ভালোভাবে

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى বলেননি, “বাবা-মার সাথে সবচেয়ে ভালো ব্যবহার করবে” বা “বাবা-মাকে সবচেয়ে বেশি টাকা দিবে”, বা “বাবা-মার সবচেয়ে বেশি দেখাশোনা করবে”, বরং তিনি تعالى বলেছেন, “বাবা-মার জন্য ইহসান।” তিনি কোনো কিছু নির্দিষ্ট করে না দিয়ে এর অর্থকে ব্যাপক করে দিয়েছেন। যার মানে হলো: বাবা-মার জন্য সবকিছুতে আমাদেরকে ইহসান করতে হবে।

সাধারণত ইহসান এর অনুবাদ করা হয়: ভালো কাজ। কিন্তু ইহসান অর্থ শুধুই ভালো কাজ নয়, বরং ভালো কাজটি সঠিক আদাবের সাথে সুন্দরভাবে করা।[৪] যেমন: আপনি একটা ফকিরকে দেখে মানিব্যাগ থেকে সবচেয়ে ছোট ছেড়া নোটটা বের করে তাকে দিতে পারেন। অথবা, আপনি এটিএম মেশিন থেকে তোলা একটা ঝকঝকে নোট তাকে দিতে পারেন এবং দেওয়ার পর তার দিকে তাকিয়ে একটা সুন্দর হাঁসি দিতে পারেন – এটা হবে ইহসান। আপনি আপনার কাজের-মেয়েকে এই ঈদে ফার্মগেটের খোলা বাজার থেকে সস্তায় একটা নতুন জামা কিনে দিতে পারেন। অথবা আপনি তাকে আপনার মেয়ের সাথে শপিং মলে নিয়ে গিয়ে, একই দোকান থেকে দুজনকে একই জামা কিনে দিতে পারেন – এটা হবে ইহসান। যারা ইহসান করে তাদেরকে আল্লাহ تعالى কু’রআনে বহু জায়গায় এত সুন্দর সব পুরস্কারের কথা বলেছেন, যা বুঝলে মুসলিমদের মধ্যে হাতাহাতি লেগে যেত ইহসান করার প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে।

বাবা-মার সাথে আল্লাহ تعالى সব ব্যাপারে ইহসান করতে বলেছেন। সেটা তাদের সাথে কথা বলা, ব্যবহার, পরিচর্যা, ঘরের কাজ, সপ্তাহের বাজার, ঈদের উপহার ইত্যাদি সবকিছুই ইহসান হতে হবে। অথচ আজকে আমরা অনেকেই তার উল্টোটা করি। মা-র সাথে দশ মিনিট বসে কথা বলার ধৈর্য হয় না, অথচ ওদিকে বন্ধু-বান্ধব, অফিসের কলিগের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে খোশ গল্প করতে পারি। বাবা-র সাথে দশ মিনিট কথা বলতে গেলেই শুরু হয়ে যায় তর্ক। ওদিকে অফিসের বসের অন্যায় আবদার, পিত্তি জ্বালানো অপমানকর কথা ঠিকই আমরা ফ্যাকাসে হাঁসি দিয়ে আধা ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থেকে দিনের পর দিন হজম করি। মা ওষুধ আনতে বললে ধীরে সুস্থে হাতের সব কাজ শেষ করে, তিন দিন ভুলে যাওয়ার পর চারদিনের দিন গিয়ে নিয়ে আসি। ওদিকে গার্লফ্রেন্ড এসএমএস করল: “টিএসসি চত্বর, এক ঘণ্টার মধ্যে”, সাথে সাথে হাতের বই, খাবার সব ফেলে, লাফ দিয়ে উঠে ছুটে যাই। ঈদের দিনে বাবা-মার জন্য হাজার টাকা দামের কাপড় কিনি। ওদিকে বউয়ের জন্য বিশেষ ফ্যাশন হাউজ থেকে লক্ষ টাকার শাড়ি কিনি। আমরা বেশিরভাগ মুসলিমরা হচ্ছি ‘মুসলিম’ নামের কলঙ্ক। অমুসলিমরা একসাথে মিলে ইসলামের যা বদনাম করছে, আমরা নামে-মুসলিমরা তার থেকে বহুগুণ বেশি ইসলামের বদনাম করছি।

আপনি যখন জন্ম নিয়েছিলেন, বাথরুম করে গা মাখামাখি করে ফেলতেন, তখন আল্লাহ تعالى আপনাকে দুজন মানুষ আপনার সেবায় ২৪ ঘণ্টা নিবেদিত করে দিয়েছিলেন, যাতে আপনার মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটাতে আপনাকে কিছুই করতে না হয়। তারা কোনো এক অদ্ভুত কারণে নিজেদের খাওয়া, ঘুম, আরাম — সব ত্যাগ করে, চরম মানসিক এবং শারীরিক কষ্ট সহ্য করে, নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, আপনার জন্য যখন যা করা দরকার তাই করেছিলেন। তারপর আপনি একটু বড় হলেন। আপনার খাবার, জামাকাপড়, পড়ালেখা সব কিছুই তারা আপনার জন্য দিনরাত খেটে জোগাড় করে আনলেন। তাদের জীবনের কত স্বপ্ন ছেড়ে দিয়ে, কীভাবে আপনাকে একটি সুন্দর জীবন দেওয়া যায়, তার জন্য কত ত্যাগ করলেন। এই দুজন মানুষের জন্য আমরা যদি ইহসান না করি, তাহলে কার জন্য করব?

বাবা-মার সাথে ইহসান করাটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, আল্লাহ تعالى একে তাঁর ইবাদত করতে বলার ঠিক পরেই স্থান দিয়েছেন।[৪][১১] এমনকি নামায এবং যাকাতের অঙ্গীকারের আগে। একজন মুসলিমের জন্য তাওহিদের পরেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে বাবা-মা।[৪][১১] আমরা যতই ইসলামের দাওয়াতের কাজ করি, দাড়ি রাখি, হিজাব করি, জিহাদ করি, যদি আমাদের বাবা-মা কিয়ামতের দিন আল্লাহর تعالى কাছে আমাদের বিরুদ্ধে কষ্ট নিয়ে অভিযোগ করেন, তাহলে আমরা শেষ!

অঙ্গীকার ৩: নিকট আত্মীয়দের সাথে ইহসান

আমাদের অনেকেরই অফিসের কলিগ, বন্ধু-বান্ধবের সাথে অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক আছে। আমরা তাদেরকে প্রতিনিয়ত ফোন করে খোঁজ খবর নেই। তাদের বার্থ-ডে, ম্যারেজ-ডে, গ্রাজুয়েশন-ডে, ফাদার-ডে, মাদার-ডে, সারভেন্ট-ডে —সব ধরনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হই। তাদের পরিবারের কেউ হাসপাতালে ভর্তি হলে সাথে সাথে ছুটে যাই। কিন্তু নিকটাত্মীয়ের সাথে থাকে চুলাচুলি সম্পর্ক। কেন ওরা আমার ছেলের জন্মদিনে কেক নিয়ে আসলো না? কেন ওরা আমাকে আগে দাওয়াত না দিয়ে অমুককে আগে দাওয়াত দিলো? কেন বিয়ের দিন ওরা আমার সাথে খেতে বসলো না? কেন ওরা ঈদের দিন আমাকে গরুর রান পাঠাল না? —এইসব ব্যাপার নিয়ে প্রতিনিয়ত আত্মীয়দের সাথে চলে ঝগড়াঝাটি। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে বলেছেন আত্মীয়দের সাথে অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক রাখতে। অথচ আমাদের অনেকেরই আত্মীয়দের সাথে থাকে চরম শত্রুতার সম্পর্ক।

অনেক সময় আমাদের আত্মীয়দের মধ্যে অনেকে থাকেন যারা ধর্মের ব্যাপারে বেশ কঠিন। তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, মেয়েরা হিজাব করেন, কোনো গানবাজনার অনুষ্ঠানে যান না। অন্যদিকে কিছু আত্মীয় থাকেন, যারা ঠিক মুসলিম কিনা এই ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নন। তারা হয়ত বছরে দুইবার ঈদের নামাজে আল্লাহর تعالى সাথে দেখা করেন। কিন্তু তাদের আল্লাহর تعالى সাথে সম্পর্ক এই পর্যন্তই।  ওদিকে তারা সপ্তাহে কয়েকদিন বেশিরভাগ সময় শপিং সেন্টারে, রেস্টুরেন্টে, পার্টি সেন্টারে পার করেন। সিঙ্গাপুরে যান ঈদের শপিং করতে। ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেন হিন্দুদের রীতি অনুসারে গায়ে-হলুদ, বউভাত, পান-চিনি ইত্যাদি সাত-দিন ধরে নারী-পুরুষ সব একসাথে মাখামাখি করে অনুষ্ঠান করে।

এই দুই প্রজাতির আত্মীয়রা যখন একসাথে হন, তখন ঘটে ভয়ংকর ঘটনা। ইসলামী মানসিকতার আত্মীয়রা ঈদের দিন যখন এদের বাসায় যান, তখন এই প্রগতিবাদী-আত্মীয়রা বলে উঠেন, “আরে! মাওলানা সাব এসেছেন! আসেন, আসেন, বসেন। কী সৌভাগ্য আমাদের!” মহিলারা যারা হিজাব করেন, তারা সবাই জড়সড় হয়ে বসেন এক সোফায়, আর হিজাব ছাড়া যারা, তারা যতটুকু সম্ভব দূরে ঘোরাঘুরি করেন, আর কিছুক্ষণ পরপর হিন্দি সিরিয়ালের শাশুড়ির দৃষ্টিতে হিজাব পরিহিতাদের দিকে তাকান। তারপর সারাদিন ধরে ইসলামী-আত্মীয়দের উপর চলে প্রগতিবাদীদের নানা ধরনের বিব্রতকর প্রশ্ন:

“আচ্ছা ভাই, সত্যি যদি আল্লাহ থাকে, তাহলে পৃথিবীতে এত গরিব মানুষ কেন? এত দুঃখ-কষ্ট  কেন?”
“ভাই, ইসলাম না সত্যি ধর্ম? তাহলে মুসলিমদের অবস্থা আজকে সবচেয়ে খারাপ কেন? আল্লাহ আপনাদের এই রকম বেহাল অবস্থা করে রেখেছেন কেন?”
“ভাই, আমি তো আল্লাহকে বলিনি আমাকে বানাতে? কেন সে আমাকে বানাল? তারপর আবার আমাকে এত নিয়ম কানুন দিয়ে দিলো, যা না মানলে আমাকে আবার ভয়ংকর শাস্তিও দেবে?”
“ভাই, এই যে দিন রাত নামায-রোযা করছেন। ধরেন মরার পরে গিয়ে দেখলেন ধর্মটর্ম সব মিথ্যা। তখন কী করবেন? জীবনটা তো কিছুই উপভোগ করলেন না?”

যখন প্রগতিবাদী আত্মীয়রা কোনো অনুষ্ঠানে কাকে দাওয়াত দিবেন পরিকল্পনা করেন, তখন তাদের মধ্যে আলাপ চলে, “না না, ওই মাওলানা-সাবদের দাওয়াত দেওয়া যাবে না। ওরা এই পার্টিতে আসলে আমার সব প্রেস্টিজ শেষ। এবার আমার অফিসের কলিগরা আসবে। ওদের সামনে বোরকা পড়া কয়েকটা ভয়ংকর মহিলা বসে থাকবে। আমি বন্ধুদেরকে মুখ দেখাতে পারব না। থার্টি ফার্স্টের পার্টিতে আমাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করবে।”

এর উল্টোটাও ঘটে। ইসলামী-আত্মীয়রা নিজেদের মধ্যে আলাপ করেন, “না ভাই। আমাদের এই খাস মোলাকাতে ওই জাহিলদের কোনোভাবেই দাওয়াত দেওয়া যাবে না, মা’আয আল্লাহ। ঈদের দিন একটা মুবারাক দিন। এই দিনে ওদের নাপাকি কথা-বার্তা, বেগানা আওরাতের ঘোরাফেরা, এই সব কোনোভাবেই মঞ্জুর করা যায় না। মাসজিদের ইমাম, খাতিবরা এসে ওই জাহিলদেরকে দেখলে আমার ইজ্জাত খাতাম হয়ে যাবে। নিকাহের দাওয়াতে দেখা করব, আমার দায়িত্ব শেষ, ইন শাআ আল্লাহ।”

শুধু তাই না, বছরে একবার যখন তারা যখন যাকাত দেন, তখন তাদের যেই গরিব আত্মীয়রা নামায, রোযা করে এবং তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখে, তাদেরকে যাকাত দেন। বাকি আত্মীয়রা আরও বেশি গরিব হলেও, তারা আর যাকাত পায় না।

আগামি পর্বে এতিমদের সাথে ইহসান, গরিবদের সাথে ইহসান, মানুষের সাথে খুব সুন্দর ভাবে কথা বলা, সালাত প্রতিষ্ঠা করা, এবং যাকাত দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে আলোচনা হবে, ইন শাআ আল্লাহ।


সূত্র:

নতুন আর্টিকেল বের হলে জানতে চাইলে কু’রআনের কথা ফেইসবুক পেইজে লাইক করে রাখুন—

Exit mobile version