কীভাবে কোনো কিছুর সৃষ্টি হয়, এনিয়ে নানা ধর্মে নানা মতবাদ রয়েছে। কিছু ধর্ম মতে: বস্তু এবং শক্তি সবসময়ই ছিল, সেগুলোর শুধুই রূপান্তর হয়। এর বিরুদ্ধে খুব সহজ কিছু যুক্তি এবং পর্যবেক্ষণ দিয়ে তা ভুল প্রমাণ করা যায় (দেখুন আল-বাক্বারাহ ১০৮)। আবার কিছু ধর্ম (এমনকি বৈজ্ঞানিক মতবাদও) প্রচার করে: মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে এক মহা-মহাবিশ্ব ছিল, যেখানে যা কিছু সৃষ্টি হওয়া সম্ভব, তার সবকিছু সৃষ্টি হচ্ছে, এবং আমাদের মহাবিশ্বের মত আরও অসংখ্য মহাবিশ্ব রয়েছে।
আবার কিছু ধর্ম এবং বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব প্রচার করে: বস্তু এবং শক্তির আগে ‘কিছু’ একটা ছিল, যা থেকে সবকিছু এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের চারপাশে যে বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিজগৎ আমরা দেখছি, তার জন্য কোনো বুদ্ধিমান বা ব্যক্তিত্ববান স্রষ্টার কোনো প্রয়োজন নেই। এগুলো সব কিছুই সেই ‘কিছু’ একটা থেকে এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে। —এর বিরুদ্ধেও খুব সহজ যুক্তি দিয়ে তা সহজেই ভুল প্রমাণ করা যায়।
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত ধারণা, যার বিরুদ্ধে কোনো ফিলসফিকাল যুক্তি ধোপে টিকতে পারেনি, তা পাওয়া যায় কু’রআনে—
সবগুলো আকাশ এবং পৃথিবীর অস্তিত্বদানকারী তিনি। যখন তিনি কিছুর অস্তিত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তিনি সেটাকে শুধু বলেন: ‘হও’, আর তা হয়ে যায়। [আল-বাক্বারাহ ১১৭]
আল্লাহর تعالى কোনো কিছুকে সৃষ্টি করার জন্য অন্য কোনো কিছুর সাহায্য নেওয়ার দরকার হয় না। যদি দরকার হত, তাহলে প্রশ্ন আসতো: সেই সাহায্যকারীকে কার সাহায্যে সৃষ্টি করা হয়েছে? বেশিরভাগ ধর্মে তাদের সৃষ্টিকর্তার কোনো কিছু সৃষ্টি করার যে সব পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া হয়, তা সমাধান না দিয়ে বরং আরও প্রশ্ন এনে দেয়। কারণ সৃষ্টিকর্তাকে যদি কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়, তাহলে সেই পদ্ধতি কে নির্ধারণ করলো? সেই পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ কোথা থেকে আসলো? —এই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না। কিন্তু ইসলামে এই সমস্যা নেই, কারণ আল্লাহ تعالى বলেন ‘হও’, আর তা হয়ে যায়।
এই আয়াতে একটি বিশেষ শব্দ রয়েছে: بَدِيعُ (বাদি’উ) যার অর্থ উদ্ভাভক, অস্তিত্বদানকারী। তিনি এমনকিছু সৃষ্টি করেন, যার আগে কোনো অস্তিত্ব ছিল না। যার কোনো ধারণা কারো কাছে ছিল না, কেউ ধারণাই করতে পারে না। তিনি আগেও সৃষ্টি করেছেন, এবং এখনো সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। তিনি সবগুলো আকাশ এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, এক বিশাল সৃষ্টিজগৎ, যার কোনো ধারণা আগে ছিল না। তিনিই প্রথম উদ্ভাবক[১৪]
এই আয়াত পড়ে অনেকে ভাবেন, কিছু সৃষ্টি করার আগে আল্লাহ تعالى হয়তো আরবিতে উচ্চারণ করেন, ‘কুন’, কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। এখানে ‘কুন’ বলাটা একটি প্রতীক মাত্র।
আবার অনেকে মনে করেন যে, তিনি কোনো কিছুকে ‘হও’ বললেই সেটা আমাদের দৃষ্টিতেও সাথে সাথে ঘটে যায়। ব্যাপারটা তা নয়। কোনো কিছুকে ‘হও’ বলাটা আমাদের জানা বাস্তবতার বাইরে ঘটে। সেটি কোনো স্থান-কালের মধ্যে ঘটে না। কিন্তু তাঁর আদেশের বাস্তবায়ন যখন আমাদের পরিচিত স্থান-কালের মধ্যে ঘটে, তখন সেটা স্থান-কালের গণ্ডির মধ্যেই ঘটে। যেমন, কু’রআনে একটি আয়াতে আছে—
إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُن فَيَكُونُ
ঈসার উদাহরণ হলো আদমের মত, যাকে তিনি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনি তাকে বলেছিলেন, ‘হও’, আর তিনি হয়ে যান। [আল-ইমরান ৩:৫৯]
আমরা জানি, নবি ঈসা عليه السلام একদিন হঠাৎ করে জন্ম হননি। তার মা তাকে গর্ভে ধারন করেছেন, দীর্ঘ প্রসব বেদনার মধ্য দিয়ে জন্ম দিয়েছেন। সেটা এতটাই ভয়ঙ্কর কষ্টের ছিল যে, তার মা যে তাকে জন্ম দেওয়ার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে, আল্লাহর تعالى কাছে মরে যেতে চেয়েছিলেন, সেটা কু’রআনেই রেকর্ড করা আছে। সুতরাং, আমরা দেখতে পাই, আল্লাহর تعالى ‘হও’ বলা মানে এই নয় যে, আমাদের সৃষ্টিজগতেও সেটা এক মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যায়। বরং সৃষ্টি প্রক্রিয়া আল্লাহর تعالى নির্ধারিত মহাবিশ্ব পরিচালনার নিয়মের মধ্যে দিয়েই হয়, যদি না আল্লাহ تعالى অন্য কিছু ইচ্ছা না করেন।
বিবর্তনবাদ কি মিথ্যা?
অনেকে বিবর্তনবাদকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন এই আয়াত দেখিয়ে। কিন্তু এই আয়াতের সাথে বিবর্তনবাদের কোনোই সম্পর্ক নেই, কারণ এই আয়াতে আল্লাহ تعالى কোনো কিছু কী প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সৃষ্টি হয়, তা বলেননি। তিনি শুধুই বলেছেন যে, তাঁর দৃষ্টিতে সৃষ্টির জন্য কোনো সময় প্রয়োজন হয় না। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিতে সবকিছুই আমরা সময়ের মাধ্যমেই উপলব্ধি করি। আল্লাহ تعالى আজকের মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন ‘হও’ বলে, কিন্তু আমাদের দৃষ্টিতে তা ঘটেছে ১৬০০ কোটি বছর ধরে।
নাস্তিকদের প্রশ্ন
এই ধরনের আয়াত পড়ে কিছু উঠতি নাস্তিক আজকাল ইন্টারনেট থেকে কপি করে জিজ্ঞেস করে—
আল্লাহ تعالى যদি সবকিছু করতে পারেন, তাহলে তিনি কি এমন ভারি একটা পাথর বানাতে পারবেন, যা তিনি নিজেই তুলতে পারবেন না?
আল্লাহ تعالى যদি সবকিছু করতে পারেন, তাহলে তিনি কি নিজেকে ধ্বংস করতে পারবেন?
এগুলো হচ্ছে শত বছর ধরে চলে আসা কিছু ফিলসফিকাল প্যাঁচ, যা ব্যবহার করে ফিলোসফার, নাস্তিকরা চেষ্টা করে আস্তিকদের ঘাবড়ে দিতে। আস্তিকরা এই ধরনের প্রশ্ন শুনে ধাঁধায় পড়ে যায়, কারণ এই সব প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বললেও বিপদ, ‘না’ বললেও বিপদ।
এই প্রশ্নগুলো এক বিশেষ প্যাটার্নের প্রশ্ন। প্যাটার্নটি হচ্ছে—
একটি ঘটনা ঘটলে অন্য ঘটনা ঘটতে পারে না, এরকম দুটি বিপরীত ঘটনা কি ঘটানো যায়?
এই ধরনের প্যাটার্নের প্রশ্ন আপনিও করতে পারেন—
মানুষ খাবার খেতে পারে। তাহলে মানুষ কি মুখ না খুলে এক প্লেট ভাত খেতে পারবে?
মানুষ কথা বলতে পারে। তাহলে মানুষ কি শব্দ না করে একটা কথা শোনাতে পারবে?
আরেকটি ব্যাপার হলো: এই ধরনের প্রশ্ন করার সময় এমন একটা শর্ত দেওয়া হচ্ছে যে, এর উত্তর হ্যাঁ বা না —এর যে কোনো একটা হতে হবে। এই ধরনের প্রশ্নের কমপক্ষে তিনটি উত্তর হয় — হ্যাঁ, না, প্রযোজ্য নয়। উপরের প্যাটার্নের প্রশ্নগুলোর উত্তর হচ্ছে — প্রযোজ্য নয়।
তিনি ‘সেটাকে’ বলেন…
এই আয়াতে একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, আল্লাহ تعالى বলছেন, “তিনি ‘সেটাকে’ বলেন…” প্রশ্ন আসে, যদি কোনো কিছুর অস্তিত্ব না থাকে, তাহলে ‘সেটাকে’ কিছু বলা যায় কীভাবে?
এই নিয়ে দুটি মত রয়েছে। আশআরি মত হলো, এই আয়াতে রূপক অর্থে ‘সেটাকে’ বলা হয়েছে। আসলে আয়াতটির অর্থ হলো, আল্লাহর تعالى নির্দেশ এবং কোনো কিছুর অস্তিত্ব পাওয়ার মধ্যে কোনো দেরি নেই। মুহূর্তের মধ্যেই সেটার অস্তিত্ব হয়ে যায়[৪]
মাতুরিদি মত হলো, এখানে আল্লাহ تعالى আক্ষরিক অর্থেই সেটাকে হতে বলেন। তবে সেটা তখন আছে তাঁর জ্ঞানের মধ্যে। যেহেতু আল্লাহ تعالى সর্বজ্ঞানী, তিনি জানেন যা কিছুই তিনি সৃষ্টি করেছেন, এবং তিনি একই সাথে জানেন যা কিছু তিনি এখনো সৃষ্টি করেননি, বা যার অস্তিত্ব নেই। যখন তিনি কোনো কিছু সৃষ্টি করার ইচ্ছা করেন, তিনি জানেন সেটা কী হবে। তিনি তাঁর জ্ঞানের মধ্যে থাকা ‘সেটাকে’ বলেন ‘হও’, আর তা অস্তিত্ব পেয়ে যায়[৪]
‘হও’ বলার কী দরকার?
প্রশ্ন আসে, আল্লাহ تعالى কেন বিশেষভাবে বললেন যে, তিনি ইচ্ছা করার পাশাপাশি ‘হও’ বলেন? এই নির্দেশের তাৎপর্য কী?
কিছু ধর্ম, এমনকি বৈজ্ঞানিক মতবাদ প্রচার করে যে, যা কিছুই সৃষ্টি হয়েছে, তা স্বাভাবিকভাবে এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোর সৃষ্টি হওয়ারই কথা। যা থেকে আজকের এই সৃষ্টিজগৎ সৃষ্টি হয়েছে, তা একটি ব্যক্তিত্বহীন অস্তিত্ব, যার মধ্যে সকল সম্ভাবনা বিদ্যমান। আমরা যা কিছুই আছে বলে জানি এবং যা কিছুই থাকা সম্ভব: পদার্থ, শক্তি, তথ্য, মন, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি সবকিছুই এসেছে সেই অস্তিত্ব থেকে। সেই অস্তিত্ব কোনো ব্যক্তিত্ববান ‘কেউ’ নন, বরং তা ‘কিছু একটা’। ‘সেটার’ কোনো ইচ্ছা নেই। যা কিছুই সৃষ্টি হওয়া সম্ভব, তার সবকিছুই ‘সেটা’ থেকে এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে এবং হয়ে যাবে।
আল্লাহ تعالى এই আয়াতে আমাদেরকে শেখাচ্ছেন: এগুলো সব অযৌক্তিক, ফালতু কথা। কোনো কিছু সৃষ্টি করার জন্য অবশ্যই ‘ইচ্ছা’ প্রয়োজন। কোনো কিছুই এমনিতেই সৃষ্টি হয় না। আজকে আমরা যা কিছুই দেখছি আমাদের চারপাশে, সেগুলো এমনিতেই তাঁর থেকে সৃষ্টি হয়নি। তিনি ইচ্ছা করেন, আদেশ করেন দেখেই সেগুলোর সৃষ্টি হয়। তিনি একজন ব্যক্তিত্ববান স্রষ্টা। তাঁকে কেউ বাধ্য করতে পারে না সৃষ্টি করতে। একইভাবে কোনোকিছু এমনিতেই তাঁর অনুমতি ছাড়া নিজে থেকে সৃষ্টি হতে পারে না।
এত ফেরেশতার কী দরকার?
অনেকে প্রশ্ন করেন, যদি আল্লাহ تعالى ‘হও’ বললেই সবকিছু হয়ে যায়, তাহলে ফেরেশতার কী দরকার? এই প্রশ্নের উত্তরে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার উত্তরের মত একই উত্তর দেওয়া যায়। আল্লাহ تعالى যেদিন ইচ্ছা করেছিলেন তিনি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করবেন, সেদিন তিনি তাঁর জ্ঞানের মধ্যে মহাবিশ্বকে ‘হও’ বলেছিলেন। কিন্তু তাই বলে সেটা কোনো সময় ছাড়াই মুহূর্তের মধ্যেই সৃষ্টি হয়ে যায়নি এবং আপনি-আমি হঠাৎ করে আমাদের জীবন শুরু করে দেইনি। বরং ১৬০০ কোটি বছর সময় নিয়ে এক প্রচণ্ড জটিল এবং অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ تعالى এভাবেই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করার ইচ্ছা করেছিলেন।
একইভাবে তিনি ইচ্ছা করেছেন: তাঁর সৃষ্টির মধ্যে ফেরেশতারা থাকবে, যারা মহাবিশ্বের বেশ কিছু প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করবে। তাঁর ইচ্ছা ছিল না যে, মহাবিশ্ব সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে থাকবে। বরং তিনি ইচ্ছা করেছেন যে, কিছু বুদ্ধিমান সত্তা এর কিছু প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকবে। কেন তিনি এরকম ইচ্ছা করলেন, কেন তিনি মহাবিশ্বকে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় হতে দিলেন না —এই সব অবান্তর প্রশ্ন না করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যারা এধরনের প্রশ্ন করে, তাদেরকে আমাদেরকে প্রশ্ন করতে হবে: ফেরেশতা সৃষ্টি করাতে কার কী অসুবিধা হয়েছে? কেন আমরা খামোখা এই প্রশ্ন করছি?
এই সব উচ্চমার্গের চিন্তাভাবনা করে কী লাভ?
অনেকেই প্রশ্ন করেন, এই সব উচ্চ মার্গের আয়াত নিয়ে এত ফিলোসফিকাল চিন্তা করে কী লাভ? এসব নিয়ে চিন্তা করে আমি তো জান্নাত পেয়ে যাবো না? আল্লাহ تعالى তো আমাকে এই সবের হিসাব দিতে বলবেন না? এগুলো নিয়ে চিন্তা করা তো নামাজ, রোজা, যাকাত, হাজ্জ এগুলোর মত এত গুরুত্বপূর্ণ না?
কয়েকটি লাভ—
- এই ধরনের আয়াত অমুসলিমদেরকে দেখিয়ে দেয়: ইসলামে স্রষ্টার ধারণা, আর তাদের স্রষ্টার ধারণার মধ্যে পার্থক্য কোথায়। অনেক অমুসলিম এই ধরনের আয়াত পড়ে চমৎকৃত হয়ে ভাবেন, “আরে! ইসলামের স্রষ্টার ধারণা দেখি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। ঠিক এইরকম একটা ধর্মই তো আমি খুজছিলাম এতদিন!” তারপর তারা ইসলাম নিয়ে আরও পড়াশুনা করে একসময় মুসলিম হয়ে যান।
- মুসলিমরা ছোট বেলা থেকে হিন্দু, খ্রিস্টান ধর্মের নানা বই, টিভি সিরিয়াল, চলচ্চিত্র দেখতে দেখতে তাদের মধ্যে আল্লাহর تعالى সম্পর্কে নানা ধরনের ভুল ধারণা চলে আসে। এই ধরনের আয়াতগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে, আল্লাহর تعالى সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণার অবসান হয়।
- চিন্তাশীল মানুষরা স্বভাবতই এইসব ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করতে পছন্দ করেন। তাদেরকে যদি চিন্তার সঠিক উপকরণ দেওয়া না হয় এবং সঠিকভাবে চিন্তা করার পথ না দেখানো হয়, তাহলে তারা ভুল পথে চিন্তা করবেই। বিশেষ করে একাডেমিক ক্ষেত্রগুলো যেহেতু গ্রিক ফিলোসফিতে ভরপুর, তাই সেগুলো পড়ে মুসলিমদের ভুল পথে চিন্তা শুরু করাটা অস্বাভাবিক নয়। এজন্য তাদেরকে কু’রআনে যথেষ্ট চিন্তার খোরাক এবং সঠিকভাবে চিন্তার পথ দেখানো হয়েছে।
আল্লাহ تعالى কু’রআনে কোনো আয়াত এমনিতেই দেন না। প্রত্যেকটি আয়াতের পেছনে অনেক বড় কারণ রয়েছে, যা শুধু চিন্তাশীলরাই ধরতে পারেন। যারা কুরআন নিয়ে চিন্তা করেন না, তারা কুরআনের আয়াতের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অসাধারণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন না। কুরআন তাদের কাছে আরেকটি ‘নামাজ শিক্ষা’ ধরনের নিয়ম-কানুনের শুকনো বই হয়ে যায় মাত্র। আর যারা চিন্তা করেন, তারা কু’রআনের আয়াত পড়েন, আর গভীর চিন্তায় ডুবে যান, নতুন কিছু প্রথমবারের মত উপলব্ধির, আবিষ্কারের আনন্দে অভিভূত হয়ে যান।
সূত্র:
- [১] নওমান আলি খানের সূরা আল-বাকারাহ এর উপর লেকচার এবং বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর।
- [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ।
- [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি।
- [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী।
- [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran
- [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran
- [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি।
- [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী।
- [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ।
- [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি
- [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি
- [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ।
- [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস।
- [১৪] তাফসির আল কুরতুবি।
- [১৫] তাফসির আল জালালাইন।