কুরআনের কথা

কেউ যদি জিবরাইলের শত্রু হয় — আল-বাক্বারাহ ৯৭-৯৮

একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে একজন সন্মানিত সত্তা উপরের মহাজগত থেকে রওনা হয়েছেন নিচে মহাবিশ্বের দিকে। তার গন্তব্য ছায়াপথের বাইরের দিকে সূর্য নামের একটি বিশেষ নক্ষত্রের তৃতীয় গ্রহ পৃথিবী। এই গ্রহে মাটি থেকে তৈরি বুদ্ধিমান প্রাণীরা মারামারি, খুনাখুনি, নৈতিকভাবে জঘন্য সব কাজ করে নিজেদেরকে শেষ করে ফেলছে। তাদেরকে সংশোধন করার জন্য সর্বোচ্চ ক্ষমতাবানের কাছ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণী এসেছে, যা তিনি নিয়ে যাচ্ছেন সেই বুদ্ধিমান প্রাণী ‘মানবজাতি’র বিশেষ একজনের কাছে পৌঁছে দিতে।

কিন্তু সেই গ্রহে আরেক ধরনের শক্তিশালী বুদ্ধিমান প্রাণী রয়েছে, যারা শক্তির তৈরি। এদের অনেকে নিজেদেরকে মাটির তৈরি প্রাণীদের থেকে উঁচু পর্যায়ের মনে করে। এরা চায় না সেই বাণী মানুষ নামের ‘নিচুস্তরের’ প্রাণীদের কাছে পৌঁছাক। হাজার বছর ধরে তারা নানা ভাবে মানুষকে প্রতারিত করেছে, ভুল পথে নিয়ে গেছে। মানব জাতিকে শেষ করে দেওয়া তাদের উদ্দেশ্য।

জিন নামের শক্তির তৈরি এই প্রাণীদের মধ্যে আবার একজন আছে, যে ভয়ঙ্কর। তার নাম ইবলিস। সে একসময় এতটাই উপরে উঠে গিয়েছিল যে, এই সন্মানিত সত্তার মতো সেও একসময় মহান স্রষ্টার সাথে কথা বলতে পারত। অনেক কাল আগে সে স্রষ্টার সাথে এক ভয়ঙ্কর বেয়াদবি করে উপরের জগত থেকে বিতাড়িত হয়েছে। তখন সে স্রষ্টার কাছ থেকে অমরত্ব চেয়ে নিয়েছিল, যেন সে মানবজাতিকে সারা জীবন ভুল পথে তাড়িয়ে নিতে পারে। সে কোনোভাবেই চায় না মানুষের জন্য ভালো কিছু হোক। তাই সে তার বাহিনী নিয়ে প্রস্তুত। যেভাবেই হোক মানুষের কাছে এই বাণী পৌঁছানো আটকাতে হবে। আর পৌঁছে গেলেও, সেটা যেন মানুষের মধ্যে প্রচার না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

সেই সন্মানিত সত্তা পৃথিবীতে এসে পৌঁছালেন। ইবলিস এবং তার বাহিনীর ব্যাপারে তিনি মোটেও চিন্তিত নন, কারণ তার প্রচণ্ড ক্ষমতার কাছে ওরা কিছুই না। তিনি আরও উচ্চতর শক্তির তৈরি। সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান মহান স্রষ্টা নিজে তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। সৃষ্টিজগতে দ্বিতীয় আর কেউ নেই, যে এই গুরু দায়িত্ব তাঁর থেকে ভালো ভাবে পালন করতে পারে। ইবলিস এবং তার বাহিনী হাজার চেষ্টা করেও কিছুই করতে পারল না। তিনি সেই বিশেষ মানুষটির কাছে স্রষ্টার বাণী পৌঁছে দিলেন।

এই সন্মানিত সত্তার নাম জিবরাইল। তিনি বহুবার পৃথিবীতে এসে নবীদের عليه السلام কাছে মহান আল্লাহর تعالى বাণী পৌঁছে দিয়েছেন—

বলে দাও, “কেউ যদি জিবরাইলের শত্রু হয় —যে কিনা নিঃসন্দেহে আল্লাহর অনুমতিতে কু’রআনকে নিয়ে এসেছে তোমার অন্তরে, এর আগে যা এসেছিল তাকে সত্যায়িত করে —যা একটি পথনির্দেশ এবং বিশ্বাসীদের জন্য সুসংবাদ।” [আল-বাক্বারাহ ৯৭]

নবী মুহাম্মাদ عليه السلام এর সময়কার একদল ইহুদিরা কোনোভাবেই মানতে পারছিল না যে, জিবরাইল (আ) তাদের বংশের একজন ইহুদির কাছে বাণী নিয়ে না এসে, তাদের চেয়ে ‘নিচু’ বংশের আরবদের কাছে বাণী নিয়ে গেছে। সেই বাণীকে অস্বীকার করার জন্য তারা কত ধরনের বাহানা করেছিল, সেটা আমরা এর আগের আয়াতগুলোতে পড়েছি। এই আয়াতে তাদের আরেক নতুন বাহানাকে তুলে ধরা হয়েছে। তারা দাবি করা শুরু করল যে, জিবরাইল(আ) হচ্ছে ধ্বংস এবং যুদ্ধের ফেরেশতা। তারা তাঁর বাণী মানবে না। তাঁর কারণে তাদের পূর্ব পুরুষরা অনেক শাস্তি পেয়েছে, কারণ তিনি এর আগের নবীদের عليه السلام কাছেও বাণী নিয়ে গেছেন এবং সেই বাণী না মানার কারণে তারা অনেক শাস্তি পেয়েছে। একারণে জিবরাইল(আ) হয়ে গেছেন তাদের দৃষ্টিতে: মৃত্যুর অশনি সঙ্কেত।[১][২][১১] একারণে তাঁকে তারা নিজেদের শত্রু মনে করা শুরু করল।

এই ভুল ধারণার উত্তর দেওয়া হয়েছে এই আয়াতে: কেউ যদি জিবরাইলের শত্রু হয় —যে কিনা নিঃসন্দেহে আল্লাহর অনুমতিতে কু’রআনকে নিয়ে এসেছে। জিবরাইল(আ) এখানে নিজে কিছুই করছেন না। তিনি শুধুই আল্লাহর تعالى নির্দেশ পালন করছেন। জিবরাইল (আ) এর নামে এইসব মনগড়া কথা বলে কোনো লাভ নেই। আসল কথা হচ্ছে তারা আল্লাহর تعالى বাণী মানবে না। এর মধ্যে জিবরাইল(আ) নিয়ে আসার কোনো দরকার নেই।

ফেরেশতাদেরকে নিয়ে আজকাল সুধীবৃন্দরা প্রশ্ন করেন:

কেন আল্লাহর ফেরেশতাদের দরকার হয়? তিনি নিজে কি নবীদেরকে তাঁর বাণী শেখাতে পারেন না?

ইউনিভার্সিটির উদাহরণ দেই। ধরুন, ছাত্ররা একজন অত্যন্ত উঁচু পর্যায়ের, ডাবল পিএইচডি করা, বয়স্ক একজন প্রফেসরের ক্লাস করছে। প্রফেসর অত্যন্ত জটিল একটি ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করছেন। এখন ছাত্ররা কি সেই সন্মানিত প্রফেসরকে ক্লাসের মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে বলবে, “দাঁড়ান, বুঝলাম না। আবার বলেন, কী বোঝাতে চাচ্ছেন।” বেশিরভাগ ছাত্রই কিছু না বুঝলেও, ভদ্রতা বশত চুপচাপ শুনে যাবে, তারপর টি.এ. -র (Teacher’s Assistant) কাছে গিয়ে যত প্রশ্ন আছে, সব করবে। খোলাখুলি কথা বলবে, আলোচনা করবে, আপত্তি জানাবে। নিঃসঙ্কোচে নিজের দুর্বলতাগুলোকে তুলে ধরবে। ছাত্রদের সাথে প্রফেসরের যে বিরাট ব্যবধান, যা তাদের ভিতরে একধরনের মানসিক দেয়াল তৈরি করে, সেই দেওয়াল টিএ-র সামনে থাকবে না।

মহান আল্লাহর تعالى সাথে মানুষের অকল্পনীয় ব্যবধান। একজন সাধারণ মানুষ নবীর عليه السلام মনে এমন অনেক প্রশ্নই আসতে পারে, যা তিনি হয়ত লজ্জায় বা সঙ্কোচে সরাসরি আল্লাহকে تعالى করতে দ্বিধাবোধ করবেন। স্বাভাবিকভাবেই আকাশ থেকে আসা স্রষ্টার অপার্থিব কণ্ঠস্বরের সাথে বেশিক্ষণ আলাপ চালিয়ে যাওয়া কঠিন। বা বিশাল কোনো অতিপ্রাকৃত রূপে প্রকাশ হওয়া কোনো অলৌকিক সত্তার সাথে খোলাখুলি আলোচনা করাটা কঠিন ব্যাপার। একারণেই এই বিরাট ব্যবধানটা কমানোর জন্য একজন ফেরেশতাকে পাঠানো হয়, যিনি মানুষের রূপ ধরে আসেন, যেন নবীর عليه السلام জন্য ব্যাপারটা আরও সহজ হয়ে যায়। একজন ফেরেশতা যদি মানুষ বা অন্য কোনো সহজ কোনো রূপে আসেন, তখন এই শেখানোর ব্যবস্থাটা একজন মানুষের জন্য অনেক সহজ, স্বাভাবিক করে ফেলা যায়।

আল্লাহ تعالى জিবরাইল নামের একজন বিশেষ ফেরেশতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, মানবজাতির কাছে তাঁর تعالى বাণী পৌঁছে দেওয়ার জন্য। আমরা এটা বিশ্বাস করতে পারি যে, তাঁর থেকে যোগ্য কোনো সত্তা আর নেই, যে কিনা এত বড় একটা দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে পারে। আল্লাহর تعالى আরও অনেক সৃষ্টি রয়েছে, যারা মানুষকে ঠিক পছন্দ করে না। তারা চেষ্টা করে মানুষকে বিপথে নিয়ে ধ্বংস করে দেওয়ার, যেন তারা আবার পৃথিবী দখল করে নিতে পারে। তাই এমন কোনো শক্তিশালী সত্তা দরকার, যাকে এইসব অশুভ সত্তারা আক্রমণ করে, বা অন্য কোনোভাবে বাধা তৈরি করে, মানবজাতিকে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়াটায় কোনো ত্রুটি তৈরি করতে না পারে। মানবজাতিকে আল্লাহর تعالى বাণী পৌঁছে দেওয়াতে সামান্য কোনো ত্রুটি হলেও মানুষের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। কু’রআনের বাণীর একটা আয়াত এদিক ওদিক হলে বিরাট ভুল বোঝাবুঝি হবে। একারণে দরকার এমন কোনো প্রচণ্ড শক্তিশালী সত্তা, যার উপস্থিতিতে অন্য কোনো অশুভ সৃষ্টি এসে কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি করার কথা চিন্তাও করতে পারবে না।

একারণে কু’রআনে আল্লাহ تعالى জিবরাইলকে অনেক বড় সন্মান দিয়েছেন। আমরা সেটা বিশ্বাস করতে পারি, অথবা অনর্থক তর্ক করে, তাঁর ক্ষমতা, সন্মান, এবং দায়িত্বকে অস্বীকার করে, তাঁর শত্রু হয়ে যেতে পারি।

নিঃসন্দেহে এটি একজন সন্মানিত বার্তাবাহকের বার্তা। যিনি ক্ষমতাশালী। আরশের অধিপতির কাছে উচ্চ পদমর্যাদার অধিকারী। সেখানে সবাই তাকে মানে, সবাই তাকে বিশ্বাস করে। [আত-তাকয়ির ৮১:১৯-২১]

এখন সুধীবৃন্দরা আরেকটি প্রশ্ন করেন—

কেন আল্লাহ মানুষ নবী পাঠান? একজন ফেরেশতাকে নবী হিসেবে পাঠালে কি আরও বেশি লাভ হতো না?

অনেকের মনে হতে পারে যে, একজন সাধারণ মানুষকে নবী হিসেবে পাঠালে মানুষ কেন তাকে পাত্তা দেবে? তারচেয়ে একজন ফেরেশতাকে পাঠালে কি মানুষ নির্দ্বিধায় তাকে আল্লাহর تعالى দূত হিসেবে মেনে নিয়ে, সাথে সাথে মুসলিম হয়ে যাবে না?

একটা উদাহরণ দেই। ধরুন একদিন সৌদি আরবে মহাকাশ থেকে অন্য গ্রহের একটি প্রাণী এসে নামল। সে দেখতে অদ্ভুত, তার কোনো দেহ নেই, উজ্জ্বল সাদা আলোর তৈরি। সে সৌদি আরবে ভেসে বেড়াচ্ছে এবং মানুষকে বার বার বলছে: ভালো হয়ে যেতে, সত্য কথা বলতে, সুদ-ঘুষ না খেতে, সুদের লোন নিয়ে বাড়ি না কিনতে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে, কোনো যুদ্ধ না করতে ইত্যাদি। প্রথম দিকে সে যখন পৃথিবীতে আসবে, সাথে সাথে পৃথিবীতে হুলুস্থুল কান্ড শুরু হয়ে যাবে। মানুষ বিবিসি, সিএনএন, ডিসকভারি চ্যানেলে সারাদিন তাকে নিয়ে করা ডকুমেন্টারি দেখতে থাকবে। অনেক মানুষ ভক্তি নিয়ে তাকে পূজা করা শুরু করবে। অনেক মানুষ তার পোস্টার বানিয়ে, তার নামে বই লিখে বিরাট ব্যবসা শুরু করে দেবে। তাকে নিয়ে নানা ধরনের চলচ্চিত্র তৈরি হবে, ফেইসবুক পেইজ তৈরি হবে, খবরের কাগজে নানা ধরনের কেচ্ছা কাহিনী লেখা হতে থাকবে।

কিন্তু পঞ্চাশ বছর পরে সে একটা পুরনো খবর হয়ে যাবে। সে একদিকে তার মতো ভালো কথা বলে যাবে, আর অন্যদিকে পৃথিবীর মানুষরা তাদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে। তখন তার ভালো ভালো উপদেশ শুনে কি সারা পৃথিবীর সব ব্যাংক সুদ দেওয়া এবং নেওয়া বন্ধ করে দেবে? তখন সারা পৃথিবীতে সবাই কি ঘুষ খাওয়া বন্ধ করে দেবে? সুদের লোন নিয়ে বাড়ি কেনা বন্ধ করে দেবে? তখন আমেরিকা, মিশর, সিরিয়া, বাংলাদেশের সরকার কি সাচ্চা মুসলিম হয়ে দেশে শারিয়াহ আইন চালু করবে? সারা পৃথিবীর সব মানুষ কি হিন্দি সিরিয়াল, সিনেমা, ফেইসবুক, ভিডিও গেম, মিউজিক কনসার্ট , ফুটবল খেলা দেখা বাদ দিয়ে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে থাকবে?

তাছাড়া এরকম একজন মহাজাগতিক প্রাণীর সামনে গিয়ে কি কেউ তার জীবনের সুখ দুঃখের কথা খুলে বলবে? তার জীবনের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করবে? করবে না। মানুষ এবং তার মধ্যে যে বিরাট ব্যবধান, তা তার বাণী প্রচার করার মধ্যে বরং একটা বাধা হয়ে দাঁড়াবে। বরং সেই প্রাণীটা যদি গোপনে একজন সাধারণ মানুষের রূপ নিয়ে, সমাজের মধ্যে বাস করা শুরু করে, তখন সে নিজে যেমন মানুষকে ভালো করে বুঝবে, তেমনি মানুষও তার সামনে স্বাভাবিক হতে পারবে।

বিশ্বাসীদের উপর আল্লাহর অনেক বড় অনুগ্রহ যে, তিনি তাদেরই মধ্য থেকে একজনকে রাসুল হিসেবে পাঠান, যে তাঁর বাণী তাদেরকে শোনায়। তারা কীভাবে নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করতে পারে, তা শেখায়। তাদেরকে কিতাব শেখায় এবং প্রজ্ঞা শেখায়।, যেখানে কিনা তারা একেবারেই ভুল পথে চলে গিয়েছিল। [আল-ইমরান ১৬৪]

ফেরেশতা না পাঠিয়ে একজন মানুষকে মানুষের জন্য শিক্ষক হিসেবে পাঠানোর অনেক বড় উদ্দেশ্য রয়েছে। একজন ফেরেশতা, যে কিনা মানুষের দুর্বলতার ঊর্ধ্বে, তার পক্ষে মানুষের দুর্বলতাকে উপলব্ধি করে, মানুষের জন্য সবচেয়ে মোক্ষমভাবে ইসলামের শিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়।[১৮৬] একজন মানুষের পক্ষেই সম্ভব মানুষের কষ্ট উপলব্ধি করে মানুষকে শিক্ষা দেওয়ার। আমরা নবীদের عليه السلام জীবনী দেখলে দেখব: বেশিরভাগ নবীই عليه السلام জীবনে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছেন। অনেকেই চরম অভাবে জীবন পার করেছেন। তাদের অসুখ হয়েছে। ক্ষুধার কষ্ট কী, সেটা তারা খুব ভালোভাবে বুঝেছেন। জীবনের একটা বড় সময় সমাজের ক্ষমতাশালী মানুষদের অন্যায়, অত্যাচার সহ্য করেছেন। নিজে কষ্ট করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। নিজে কষ্ট করে উপার্জন করেছেন, পরিবার গড়েছেন, সন্তান পালন করেছেন। অনেকে তাদের স্ত্রী এবং শিশু সন্তানের মৃত্যুর মতো প্রচণ্ড কষ্টের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন। নবীদেরকে عليه السلام আল্লাহ অত্যন্ত কঠিন ট্রেনিং দিয়েছেন, যেন তারা মানুষকে গভীরভাবে বুঝতে শেখেন। মানুষের জীবনের জটিলতাগুলো উপলব্ধি করে মানুষকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সঠিক উপদেশ দিতে পারেন।

আল্লাহ تعالى এর পরের আয়াতে আবারও বলেছেন, আমরা যেন তাঁর تعالى ফেরেশতাদেরকে অস্বীকার না করি। তিনি বিশেষভাবে দুজন ফেরেশতাকে নাম দিয়ে উল্লেখ করেছেন— জিবরাইল, মিকাইল।

কেউ যদি আল্লাহর শত্রু হয়, তার ফেরেশতাদের এবং তার রাসুলদের, বিশেষ করে জিবরাইলের এবং মিকাইলের; তাহলে জেনে রাখো: নিঃসন্দেহে এই ধরনের অস্বীকারকারীদের শত্রু হবেন স্বয়ং আল্লাহ। [আল-বাক্বারাহ ৯৮]

ইহুদিরা জিবরাইলকে শত্রু মনে করলেও তারা মিকাইলকে পছন্দ করত, কারণ তাদের কাছে মিকাইল হচ্ছে বৃষ্টি এবং উর্বরতার ফেরেশতা। তারা দাবি করত যে, যদি মিকাইল বাণী নিয়ে আসত, তাহলে সেটা অনেক শান্তি প্রিয় বাণী হতো। জিবরাইলের মতো এরকম যুদ্ধ, মারামারি, ধ্বংসে ভরা বাণী হতো না। এরকম নানা ধরনের বিকৃত সব চিন্তা ভাবনা তারা করত। তারা ভালো করে জানে যে, ফেরেশতারা হচ্ছেন শুধুই বার্তাবাহক। তারা নিজেরা বাণী তৈরি করেন না। তারা শুধুই মহান আল্লাহর تعالى বাণী বহন করে নিয়ে আসেন। তারপরেও সেই ইহুদিরা কু’রআনের বাণী না মানার জন্য তাদের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে যতসব ফালতু যুক্তি বের করত।[১১]

নিঃসন্দেহে এই ধরনের অস্বীকারকারীদের শত্রু হবেন স্বয়ং আল্লাহ

এই অংশটুকু আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর সাবধান বাণী। আমরা যদি ফেরেশতা এবং রাসুলদের প্রচারিত বাণীতে বিশ্বাস না করি, নানা ধরনের অজুহাত দেখিয়ে কু’রআনের বাণীকে অস্বীকার করি, তাহলে আমরা আসলে ফেরেশতা এবং নবীর সংজ্ঞাকে অস্বীকার করছি। আমরা মনে করছি: তারা হয় ঠিকমত তাদের দায়িত্ব পালন করেননি, নাহলে তারা যা করেছেন, তা নিজেদের মনগড়া কাজ। —এগুলো সবই ভয়ঙ্কর দাবি। এই দাবির ফলাফল ভয়ঙ্কর: আল্লাহ تعالى আমাদেরকে তাঁর শত্রু হিসেবে নিয়ে নেবেন। সকল সৃষ্টির স্রষ্টা, সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান সত্তা যদি কাউকে শত্রু হিসেবে নেন, সেটা কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার, তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।

ধরুন, আজকে আটটার সংবাদে বলা হলো, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এক ঘণ্টা আগে ঘোষণা দিয়েছেন যে, বাংলাদেশ আজকে থেকে আমেরিকার শত্রু। খুব শীঘ্রই আমেরিকা তাদের সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে বাংলাদেশকে আক্রমন করবে। এই খবর শোনার পর ভয়ে আমাদের আত্মা শুকিয়ে যাবে। আমরা সাথে সাথে পরিবার পরিজনদের ফোন করে পরিকল্পনা করতে থাকব: কীভাবে আজ রাতের মধ্যেই দেশ ছেড়ে পালানো যায়। সবাই দৌড়াদৌড়ি করে ব্যাংক, এটিএম মেশিন থেকে যত টাকা পারে তুলে নিয়ে আসবে। দোকানগুলোতে ভাংচুর শুরু হয়ে যাবে, কে কত বেশি খাবার হাতিয়ে নিতে পারে। নৌ, বিমানবন্দর, রেলওয়ে স্টেশনগুলো মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে অকেজো হয়ে যাবে। পুরো দেশটা একটা নৈরাজ্যে ডুবে যাবে।

এই হলো আমেরিকা নামের একটা দেশের আমাদেরকে শত্রু ঘোষণা করার ফলাফল। অথচ আমরা পুরো সৃষ্টিজগতের মহান স্রষ্টার বাণীকে অস্বীকার করে, তাঁর ফেরেশতা এবং নবীদেরকে অসন্মান করে, সেই মহান স্রষ্টাকে আমাদের শত্রু বানিয়ে ফেলার মতো স্পর্ধা ও দুঃসাহস দেখাই। আমাদের বোধশক্তি কোথায় চলে গেছে!

সূত্র:

নতুন আর্টিকেল বের হলে জানতে চাইলে কু’রআনের কথা ফেইসবুক পেইজে লাইক করে রাখুন—

Exit mobile version