কুরআনের কথা

আমরা শুনলাম এবং আমরা অস্বীকার করলাম — আল-বাক্বারাহ ৯২-৯৩

কোনো এক অদ্ভুত কারণে হাজার হাজার বছর আগে থেকেই মানুষের গরুর প্রতি একধরনের বিশেষ প্রীতি ছিল। প্রাচীন মিশরীয়রা গরু পূজা করত।[১৮২] বনী ইসরাইল জাতি গরু পূজা করত। আজকে অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বী গরুকে দেবতা মনে করে। তারা গরুকে এক বিশেষ পবিত্র সৃষ্টি মনে করে বছরে এক বিশেষ দিন গরুর সন্মানে উদযাপন করে।[১৮২] শয়তান পূজারিরা গরুর মাথার কঙ্কাল এবং রক্ত ব্যবহার করে। এমনকি শয়তানের চিত্রকর্মে তাকে গরুর মত শিং দেওয়া হয়। নানা ধরনের প্রাচীন জাদু, ডাইনীবিদ্যায় গরুর জিনিসপত্র ব্যবহার করা হয়।[১৮৩] এমনকি আমাদের সময় স্কুলে বাংলা কোর্সে এত প্রাণী থাকতে গরুর রচনাই লিখতে দেওয়া হত ।

কোনো সন্দেহ নেই, মুসা তোমাদেরকে পরিষ্কার নিদর্শন এনে দেখিয়েছিল। তারপর সে যখন অনুপস্থিত ছিল, তোমরা বাছুরকে পূজা করাশুরু করলে। তোমরা চরম অন্যায়কারী ! [আল-বাক্বারাহ ৯২]

আল্লাহর تعالى বাণী নিয়ে মানুষের তামাশা করার প্রবণতার আরেকটি উদাহরণ আমরা এই আয়াতে পাব। বনী ইসরাইলিরা দেখল যে, নবী মূসা عليه السلام আল্লাহর تعالى কাছ থেকে যে তাওরাতের বাণী নিয়ে এসেছেন, সেই বাণী মেনে চলাটা বেশ কঠিন। তখন তারা সেটা থেকে বাঁচার জন্য অজুহাত খোঁজা শুরু করল। প্রথমে তারা নবী মূসাকে عليه السلام বলল: তার মুখের কথা তারা বিশ্বাস করবে না, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর تعالى কাছ থেকে নিজের কানে না শুনছে।[৪][৮]

তখন নবী মূসা عليه السلام তাদের মধ্য থেকে ৭০ জন প্রতিনিধিকে বাছাই করে তূর পাহাড়ে নিয়ে গেলেন। সেখানে আল্লাহ تعالى তাদেরকে সরাসরি তাওরাত মেনে চলার হুকুম দিলেন। তারপর সেই প্রতিনিধিরা ফিরে এসে নিজ নিজ গোত্রের সামনে স্বীকার করল যে, আল্লাহ تعالى সত্যিই তাদেরকে তাওরাত মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এর সাথে তারা আর একটি কথা যোগ করে দিল: “আল্লাহ বলেছেন যে, তোমাদের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব, ততটুকু মেনে চলবে। যা মেনে চলতে পারবে না, তা তিনি ক্ষমা করে দিবেন।”

এরপর থেকে তাওরাতের যেই নির্দেশই তাদের কাছে কঠিন মনে হতো, সেটাকেই তারা ছেড়ে দিত — এই মনে করে যে, আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিবেন।[৪][৮] তাদের এই ভণ্ডামিতে আল্লাহ تعالى রেগে গিয়ে এক অসাধারণ ঘটনা ঘটালেন —

মনে করে দেখো, যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছিলাম (তাওরাত অনুসরণ করার জন্য), এবং তূর পর্বতকে তোমাদের মাথার উপর তুলে ধরেছিলাম, “শক্ত করে ধর, যা কিছুই আমি তোমাদেরকে দিয়েছি এবং শোনো, যা বলা হচ্ছে।” কিন্তু তারা বলল, “আমরা শুনলাম, এবং আমরা অস্বীকার করলাম।” তাদের অবিশ্বাসের কারণে তাদের অন্তর সেই বাছুরের প্রেমে ডুবে গেল। (মুসা ওদেরকে) বল, “তোমাদের বিশ্বাস কী জঘন্য কাজই না করায় তোমাদেরকে দিয়ে, তোমাদের বিশ্বাস বলে আসলে যদি কিছু থাকে।” [আল-বাক্বারাহ ৯৩]

আল্লাহ تعالى তূর পাহাড়কে তাদের মাথার উপরে তুলে বললেন যে, তাওরাতের সব বিধান মেনে চলতে হবে। তারা এই ভয়ংকর ঘটনা দেখে ভয় পেয়ে গেল, এবং কথা দিলো যে, তারা এখন থেকে তাওরাতের সব বিধান মেনে চলবে।[৪][৮] কিন্তু এক সময় তারা আবার তাওরাতের নির্দেশ ভাঙ্গা শুরু করল। তূর পর্বত নিয়ে এই অসাধারণ ঘটনাটি বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আল-বাক্বারাহ’র ৬৩ আয়াতের বর্ণনায়, যেখানে এই আয়াত নিয়ে সুধীবৃন্দদের নানা ধরনের কুতর্ক, কেন অলৌকিক ঘটনার দরকার হয়, আমাদের জন্য কী ধরনের অলৌকিক ঘটনা রয়েছে ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

আজকের যুগের অনেক মুসলিমকে দেখবেন: তারা ঠিক একই কাজ করছে। ইসলামের যে নিয়মটা মানতে তাদের কষ্ট হয়, তারা সেটা ছেড়ে দেয়। তারপর তারা আল্লাহর تعالى সম্পর্কে তাদের সুগভীর উপলব্ধির উপরে একটা বক্তৃতা দিয়ে, কেন তারা সেই নিয়মটা ঠিকমতো অনুসরণ করে না, তার পক্ষে উচ্চমার্গের দার্শনিক যুক্তি উপস্থাপন করে।

যেমন, আপনি যখন এদের কাউকে বলেন, “ভাই, আপনাকে তো পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তে দেখি না। দিনে দুই-এক ওয়াক্ত পড়েন, তাও আবার যখন শুধু বাসায় থাকেন।” সে বলবে, “আরে ভাই, প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায সবসময় পড়া যায় নাকি? আমি যতটুকু পারি পড়ার চেষ্টা করি। আমাকে কোনোদিন দেখেছেন জুম্মার নামায ছেড়ে দিতে? আল্লাহ এত কঠিন না ভাই। আপনারাই ইসলামকে বেশি কঠিন করে ফেলেন।”

আবার আপনি যদি এদের কাউকে বলেন, “আপা, আপনি তো দেখি প্রায়ই নামায পড়েন, কু’রআনও পড়েন। তাহলে এরকম আপত্তিকর কাপড় পড়ে ঘোরাফেরা করাটা কি ঠিক? নামাজ যেমন ফরজ, হিজাব করাও তো ফরজ, তাই না?” সে বলবে, “আপত্তিকর কাপড় কোথায় দেখলেন! আমি তো আজকের সংস্কৃতি অনুসারে যথেষ্ট ভদ্র জামাকাপড় পরছি। এখন টাইট ড্রেসের ফ্যাশন। যখন লুজ পোশাকের ফ্যাশন ছিলো তখন সেটাও পরেছি। আপনারা সব তালেবান হয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের এই সব মান্ধাতা আমলের চিন্তা-ভাবনা আজকের যুগে চলে না। আমাদের অন্তরে কী আছে, সেটা আল্লাহ দেখেন। যাদের অন্তর পরিষ্কার, তাদের হিজাব করা লাগে না।”

আজকাল এদের উপরে আল্লাহ تعالى তূর পর্বত তুলে ধরেন না। কিন্তু মাঝে মাঝে দেখা যায়, এদের অনেকের পরিবারের সদস্যদের একটার পর একটা বড় অসুখ হয়, যার চিকিৎসার খরচ দিতে গিয়ে বাড়ি, গাড়ি, জমি সব বিক্রি করে ফেলতে হয়। আবার এদের অনেকে ঘুষ খেয়ে কোটি কোটি টাকা বানিয়ে, লিভার সিরোসিসে ভুগে, একসময় কিডনি নষ্টের কারণে ডায়ালাইসিস করতে করতে, সব সম্পদ শেষ করে মারা যায়। এদের অনেকের ছেলে একদিন মাদকাসক্ত হয়ে জেলে যায়। তখন তাদেরকে যদি জিজ্ঞেস করেন, “আহারে, আপনাদের খুব কঠিন দিন যাচ্ছে না?” তারা বলবে, “মাথার উপর পাহাড় ভেঙ্গে পড়েছে ভাই! জীবনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে!”

বনী ইসরাইলকে আল্লাহ تعالى বলেছিলেন: خُذُوا۟ مَآ ءَاتَيْنَٰكُم بِقُوَّةٍ অর্থাৎ: যা কিছুই দিয়েছি, তার সব কিছু শক্ত করে ধর।خُذُوا۟ এসেছে أخذ থেকে যার অর্থ: কোনো কিছু দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ করে, নিষ্ঠার সাথে পালন করা।[৫] এরপর তিনি বলেছেন: مَآ ءَاتَيْنَٰكُم অর্থাৎ: যা কিছুই দিয়েছি, তার সব কিছু; কোনো ফাঁকিবাজি করা যাবে না।بِقُوَّةٍ অর্থ: একদম শক্ত করে, শক্তি দিয়ে।[৫] এখানে আল্লাহ আমাদেরকে সাবধান করে দিচ্ছেন যে, ধর্মীয় নির্দেশ কোনো হেলাফেলার জিনিস নয় যে, আমরা যখন ইচ্ছা মানবো, যখন একটু ঝামেলার মনে হবে, তখন মানবো না —এইসব চলবে না।

আমরা যখন কালেমা পড়ে ঘোষণা দেই – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ – তখন আমরা শপথ করি, “আমার জীবনে আল্লাহর থেকে বড় আর কেউ নেই। আজ থেকে আমার প্রতিটা সিদ্ধান্ত এবং কাজে আল্লাহ تعالى থাকবেন সবার আগে, তারপরে অন্য কিছু। আমি আর কোনোদিন, অন্য কোনো কিছুকে আল্লাহর থেকে বেশি গুরুত্ব দিবো না। আজ থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমি আল্লাহর تعالى আদেশ-নিষেধ মেনে চলব, কখনো অবাধ্য হবো না।”

কিন্তু তারপর যা ঘটে তা হচ্ছে অনেকটা এরকম—

এই ধরনের মানুষদের মানসিকতার পরিচয় দেওয়া হয়েছে এই আয়াতে— “আমরা শুনলাম, এবং আমরা অস্বীকার করলাম।”

তাদের অবিশ্বাসের কারণে তাদের অন্তর সেই বাছুরের প্রেমে ডুবে গেল

অন্য হাজারো প্রাণী থাকতে কেন মানুষের এত গরু প্রীতি?

গরু আল্লাহর تعالى এক অসাধারণ সৃষ্টি। লক্ষ করলে দেখবেন: এটির মাথা থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত সবকিছুই মানুষের কাজে লাগে। গরুর শিং ব্যবহার করা হয় চিরুনি, শ্যাম্পু, আঠা ইত্যাদি তৈরিতে। এর চামড়া লেদারের সোফা, জ্যাকেট, গাড়ির সিট তৈরিতে ব্যবহার হয়। এর দুধ আমরা পান করি, মাংস খাই। মগজ থেকে ক্রিম, ওষুধ তৈরি হয়। রক্ত, হাড্ডি ব্যবহার হয় আঠা, শ্যাম্পু, ল্যামিনেট ইত্যাদি তৈরিতে। এর নাড়িভুঁড়ি ব্যবহার হয় ওষুধ, গিটারের তার, ব্যাডমিন্টন র‍্যাকেটের নেট ইত্যাদি তৈরিতে। এর চর্বি ব্যবহার হয় চিউইং গাম, চকলেট, ডিটারজেন্ট, শেভিং ক্রিম ইত্যাদি তৈরিতে। গরুর নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার করা হয় ইনসুলিন, রক্ত জমাট বাধার ওষুধ, থাইরয়েডের সমস্যার ওষুধ সহ নানা ধরনের ওষুধ তৈরিতে। এমনকি গরুর উপর নানা ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করে পরীক্ষা করে দেখা হয় তা মানুষকে দেওয়া যাবে কিনা।[১৮৪]

এত উপকারী প্রাণীটি শুধু তার শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়েই আমাদের উপকার করে না, সে নিজে যথেষ্ট শক্তিশালী: চাষবাস এবং মালপরিবহন করার জন্য। এই অসাধারণ প্রাণীটি গ্রামের মানুষদেরকে খাবার, পানীয় সংস্থান দেয়, তাদের যানবাহনের প্রয়োজন মেটায়, একই সাথে ক্ষেতে ট্রাক্টরের কাজও করে। এত শক্ত সামর্থ্য একটা প্রাণীকে আল্লাহ تعالى আমাদের জন্য শান্তশিষ্ট করে দিয়েছেন, যাতে আমরা সহজেই একে পালতে এবং কাজে লাগাতে পারি। যদি এটা বাঘের মত হিংস্র হতো, তাহলে আমাদের সর্বনাশ হয়ে যেত।

গরুর এত ‘মহত্বের’ কারণেই হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা গরুকে এত সন্মান করে। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে তারা ভুলে গেছে যে, এতে গরুর নিজের কোনো কৃতিত্ব বা মহত্ত্ব কিছুই নেই। গরুর যদি সামান্য বুদ্ধিও থাকত, তাহলে সে নিজে এত কষ্ট করত না, বা নিজেকে এভাবে অন্যের জন্য বিলিয়ে দিত না। বরং মহান আল্লাহ تعالى গরুকে বিশেষভাবে ডিজাইন করেছেন যেন, গরু আমাদের এই প্রয়োজনগুলো মেটায়, আমাদের অধীনে বাধ্য হয়ে থাকে। আমরা যদি সেজন্য তাঁর প্রশংসা না করে গরুর প্রশংসা করি, তাঁর সামনে মাথা নত না করে গরুর সামনে মাথা নত করি, তাহলে এর চেয়ে অবিচার, অন্যায় আর কিছু হতে পারে না।

একারণেই ইসলামে শির্‌ককে এত ঘৃণা করা হয়। শির্‌ক মানেই হচ্ছে মহান আল্লাহর تعالى কৃতিত্বকে মূল্য না দিয়ে, তাঁর অনুদানকে স্বীকার না করে, তাঁর সৃজনশীলতাকে সন্মান না দিয়ে, কিছু সৃষ্টিকে, যাদের নিজেদের কোনো সৃজনশীলতা, বুদ্ধি, কৃতিত্ব কিছুই নেই — তাদেরকে সন্মান দেওয়া। এটা সৃষ্টিকর্তাকে تعالى চরম অপমান করা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।

শির্‌ক কতটা অযৌক্তিক তার একটা উদাহরণ দেই। আপনি প্রতিদিন সকালে উঠে যদি আপনার সামনে ফেইসবুক খুলে রেখে তার সামনে আগরবাতি জ্বালিয়ে, কম্পিউটারকে ফুলের মালা দিয়ে সাজিয়ে ফেইসবুকের প্রতি ভক্তি প্রদর্শন করেন, কারণ ফেইসবুক আপনার অনেক কাজে লাগে, আপনাকে বিনোদন দেয়, আপনার পরিবারের সাথে আপনাকে যুক্ত রাখে — তাহলে ব্যাপারটা কতখানি হাস্যকর ভেবে দেখেছেন? যদি আপনার সন্মান দেখাতেই হয়, দেখাবেন ফেইসবুকের নির্মাতাকে। ফেইসবুকের নিজের তো কোনো কৃতিত্ব নেই?

এই আয়াতে গরুর প্রতি মানুষের ভালবাসা তুলে ধরার জন্য যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তা লক্ষ্য করার মতো: তাদের অবিশ্বাসের কারণে তাদের অন্তর সেই বাছুরের প্রেমে ডুবে গেল। وَأُشْرِبُوا۟ فِى قُلُوبِهِمُ — তারা ভক্তিতে গদ গদ হয়ে বাছুরের প্রতি ভালবাসা হৃদয়ে পান করল।

কেন মানুষ শির্‌ক এত পছন্দ করে?

আসুন বোঝার চেষ্টা করি মানুষ কেন শির্‌ক করে। ধরুন আপনি একটা কোম্পানিতে চাকরি করেন, যার চেয়ারম্যান খুবই ন্যায়পরায়ণ মানুষ। তিনি কাউকে কোনো ছাড় দেন না। প্রত্যেকের সাথে সমান আচরণ করেন এবং প্রত্যেকের কাজের খুঁটিনাটি হিসাব রাখেন। এখন তার অধীনে যে ডিরেক্টররা আছে, তার মধ্যে একজন হচ্ছে আপনার মামা। আপনি জানেন যে আপনি যদি অফিসে একটু দেরি করে আসেন, মাঝে মধ্যে না বলে ছুটি নেন, হাজার খানেক টাকা এদিক ওদিক করে ফেলেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। যদি চেয়ারম্যানের কাছে একদিন ধরা পড়েও যান, আপনার মামা ঠিকই আপনাকে বাঁচিয়ে দিবে। হাজার হোক, মামা তো। সেজন্য মামাকে খুশি রাখার জন্য আপনি প্রতি মাসে তার বাসায় উপহার নিয়ে যান, অফিসে তাকে শুনিয়ে সবার কাছে তার নামে প্রশংসা করেন, তার বাসায় বাজার করে দিতে বললে আপনি অফিসের সব কাজ ফেলে রেখে ছুটে যান বাজারে। যেভাবেই হোক মামাকে হাতে রাখতেই হবে। মামা না থাকলে সর্বনাশ।

এই হচ্ছে শির্‌কের সমস্যা। মানুষ জানে যে, আল্লাহ تعالى (বা অন্য ধর্মের সর্বোচ্চ সৃষ্টিকর্তা) হচ্ছেন Absolute Just – পরম বিচারক, পরম ন্যায়পরায়ণ। তিনি সব কিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার করবেনই। এখন মানুষ যে প্রতিদিন আল্লাহর تعالى দেওয়া নিয়ম ভাঙছে, এদিক ওদিকে ফাঁকি দিচ্ছে, নিজের সুবিধার জন্য একটু ঘুষ দিচ্ছে, একটু সুদ দিচ্ছে —এগুলোর প্রত্যেকটা যদি গুণে গুণে হিসাব করা হয় এবং প্রতিটা অপকর্মের বিচার করা হয়, তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে! বেহেশত পাওয়ার কোনো আশাই থাকবে না! তাহলে কী করা যায়? দেখি আল্লাহর تعالى অধীনে কাউকে হাত করা যায় কি না। তাহলে তাকে দিয়ে কিয়ামতের দিন আল্লাহকে বলালে হয়ত আল্লাহ تعالى কিছু দোষ মাফ করে দিবেন।

এই ধারণা থেকে মানুষ চেষ্টা করে কোনো এক পীর বাবার মুরিদ হবার, কোনো এক নবীর দিনরাত গুণগান করার, কোনো এক দেবতাকে সন্তুষ্ট করার, যাতে করে সেই পীর/নবী/দেবতা একদিন সৃষ্টিকর্তার কাছে তার অপকর্মের বিচার হালকা করার জন্য তদবির করতে পারে। মানুষ জানে যে সে এতো অপকর্ম করেছে যে, সে আর আল্লাহকে تعالى মুখ দেখাতে পারবে না। তাই কত ভাবে দুই নম্বরি করে পালানো যায়। সে নামায ফাঁকি দেওয়া বন্ধ করবে না, ঘুষ খাওয়া বন্ধ করবে না, অর্ধ নগ্ন হয়ে বিয়ের দাওয়াতে যাওয়া ছাড়বে না। কিন্তু ঠিকই চেষ্টা করবে কীভাবে আল্লাহর تعالى ‘কাছাকাছি’ কাউকে হাত করে বিচার থেকে পালানো যায়। কীভাবে ভাবে দোষগুলো কোনোভাবে ধামাচাপা দেওয়া যায়।

এভাবে মানুষ নিজেকে সংশোধন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা না করে যতসব দুই নম্বরি উপায় নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাদেরকে দেখে অন্যরাও একই কাজ করা শুরু করে। শুরু হয় সমাজের এবং দেশের পতন। মাঝখান থেকে তাদের ধর্মীয় বেশভূষায় করা অপকর্মের কারণে তাদের ধর্মের ব্যাপক বদনাম হয়ে যায় এবং মানুষ সেই ধর্মের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে।

কেন আল্লাহ শিরক ক্ষমা করেন না?

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, শির্‌ক কেন ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ? কেন আল্লাহ تعالى সব গুনাহ ক্ষমা করেন কিন্তু শির্‌ক ক্ষমা করেন না? শির্‌ক করে তো আমরা আল্লাহর تعالى কোনো ক্ষতি করছি না। শির্‌ক করে তো আমরা মানুষের কোনো ক্ষতি করছি না। আমি যদি একটা তাবিজ পre ভাবি এই তাবিজের কারণে আমার পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট হবে, তাতে এমন কী দোষ হল? আমি যদি পীরের মুরিদ হয়ে ভাবি পীর বাবা আমার হয়ে আল্লাহর تعالى কাছে দোয়া করে আমার জীবনের সমস্যা দূর করে দিবে, কিয়ামতের দিন আমার জন্য আল্লাহর تعالى কাছে তদবির করবে, তাতে এমন কী মহাপাপ হল? কেন সুদ, ঘুষ, খুনের মতো বিরাট সব পাপ ক্ষমা করা যাবে কি না, তা আল্লাহ تعالى বিবেচনা করবেন, কিন্তু শির্‌ক কখনও ক্ষমা করবেন না?

শির্‌কের একটি বড় সমস্যা হল, যেহেতু কিছু মানুষ অন্য কিছু মানুষকে বা জড় বস্তুকে তাদের থেকে মহান, আল্লাহর تعالى ‘কাছাকাছি’ কিছু বানিয়ে ফেলে, তখন শুরু হয় সমাজে শ্রেনীভেদ এবং স্বজনপ্রীতি। সমাজে এক শ্রেণীর কিছু উত্তম, পবিত্র মানুষ বা জড় বস্তু তৈরি হয় এবং এক শ্রেণীর কিছু অধম মানুষ তৈরি হয়। সেই অধম মানুষ গুলো ওই উত্তম মানুষ এবং বস্তুগুলোকে খুশি করার জন্য এমন কিছু নেই যেটা তারা করে না এবং ওদেরকে তারা সৃষ্টিকর্তার কাছে তদবির করার মাধ্যম বানিয়ে ফেলে।

এই সুযোগে সমাজের কিছু শ্রেণীর মানুষ বিরাট ব্যবসা শুরু করে দেয় ওই পবিত্র মানুষ এবং বস্তুগুলোকে নিয়ে। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ হয় নানা ধরনের মূর্তি বানিয়ে এবং সেই মূর্তি গুলো নদীতে ফেলে দিয়ে। কোটি কোটি টাকার জমজমাট ব্যবসা চলছে মাজারে, পীরের দরবারগুলোতে। ওইসব মন্দির, মাজারের কর্মচারীগুলোর কোনো পড়ালেখা করার দরকার পড়ে না। জীবনে আর কোনো কাজ করার দরকার হয় না। তারা ভক্তদের টাকা দিয়ে আরামে তাদের জীবন পার করে দেয়।

এভাবে সমাজে এক শ্রেণীর মানুষ তৈরি হয়, যাদের কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা দরকার হয় না। চাকরি বা ব্যবসা করতে হয় না। সমাজের উন্নতিতে কোনো অবদান রাখতে হয় না। যেখানে কি না আমাদের নবী মুহাম্মাদ عليه السلام ধর্ম শিখিয়ে কারো কাছ থেকে একটা টাকাও নিতেন না, সেখানে এই মানুষগুলো আরাম কেদারায় বসে ঝাড়ফুঁক করে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হয়ে যায়।

এই ‘পবিত্র’ মানুষগুলো তাদের এত সহজ আয়ের ব্যবস্থা যে কোনো উপায়ে টিকিয়ে রাখার জন্য এমন কিছু নেই যেটা তারা করে না। এরা চেষ্টা করে সাধারণ মানুষ যেন কখনও আসল ধর্মীয় বই পড়ে সৃষ্টিকর্তার সঠিক সংজ্ঞা শিখে না ফেলে। কারণ সাধারণ মানুষ যদি তাদের সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ধর্মীয় বই নিজেরা পড়ে ফেলে, তাহলে তারা শিখে যাবে যে, সৃষ্টিকর্তার কোনো প্রতিমা নেই, তার সমকক্ষ কেউ নেই, কেউ তার কাছে কারো হয়ে সুপারিশ, তদবির করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি تعالى নিজে সন্তুষ্ট হয়ে কাউকে অনুমতি না দিচ্ছেন। সৃষ্টিকর্তা নিজে প্রতিটি মানুষের কথা শোনেন। তিনি নিজে কোনো উকিল ছাড়া প্রতিটি মানুষের বিচার করবেন। তিনি নিজে প্রতিটি মানুষের কাজের রেকর্ড রাখছেন এক অভাবনীয় ব্যবস্থায়।

তোমরা যেখানেই থাকো তিনি তোমাদের সাথে আছেন। তিনি সব দেখেন তোমরা কী কর। [৫৭:৪]

আকাশ এবং পৃথিবীর সকল গোপন ব্যাপারে তাঁর জ্ঞান রয়েছে। তিনি কতই না পরিষ্কারভাবে দেখেন এবং শোনেন! তিনি ছাড়া তাদের আর কোনো রক্ষাকারী নেই। তিনি তাঁর রাজত্বে অন্য কাউকে অংশ দেন না। [১৮:২৬]

শির্‌ক শুধু ইসলামেই ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ নয়, এমনকি হিন্দু এবং খ্রিস্টান ধর্মেও মহাপাপ। যেমন বাইবেলে দেখুন—

Thou shalt have none other gods before me. Thou shalt not make thee any graven image, or any likeness of anything that is in heaven above, or that in the earth beneath, or that is in the water beneath the earth. Thou shalt not bow down thyself unto them, nor serve them; for I the Lord thy God am a jealous God. [The Bible, Deuteronomy 5:7-9]

তোমরা আমি ছাড়া আর কাউকে প্রভু হিসেবে নিবে না। আমার কোনো প্রতিমা বানাবে না। উপরে আকাশে, বা নিচে পৃথিবীতে, বা পানির নিচে আছে এমন কিছুর সাথে আমার কোনো ধরনের তুলনা করবে না। তোমরা এদের কারো সামনে নত হবে না; কারণ আমি তোমার প্রভু, আমি এসব সহ্য করি না। [ডিউটেরনমি ৫:৭-৯]

হিন্দু ধর্ম গ্রন্থগুলোতে দেখুন—

There is no image of Him. [Yajurveda 32:3]
তাঁর কোনো প্রতিমা নেই।
He is bodyless and pure. [Yajurveda 40:8]
তিনি নিরাকার এবং পবিত্র।
They enter darkness, those who worship the natural elements. They sink deeper in darkness, those who worship sambhuti (created things). [Yajurveda 40:9]
যারা প্রাকৃতিক কোনো শক্তিকে পূজা করে, ওরা অন্ধকারে প্রবেশ করে। যারা কোনো সৃষ্ট কিছুকে পূজা করে, তারা আরও গভীর অন্ধকারে ডুবে যেতে থাকে।
Those whose intelligence has been stolen by material desires surrender unto demigods and follow the particular rules and regulations of worship according to their own natures. [Bhagavad Gita 7:20]
দুনিয়ার লোভে অন্ধ হয়ে যাদের বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ পেয়েছে, তারাই নিজেদেরকে মিথ্যা প্রভুদের কাছে সঁপে দেয় এবং নিজেদের খেয়াল খুশি মতো আইন এবং উপাসনার নিয়ম অনুসরণ করে।
He is One only without a second. [Chandogya Upanishad 6:2:1]
তিনি একমাত্র, অদ্বিতীয়।
Of Him there are neither parents nor lord. [Svetasvatara Upanishad 6:9]
তাঁর সমান কেউ নেই, তাঁর কোনো প্রভু নেই।
There is no likeness of Him. [Svetasvatara Upanishad 4:19]
তাঁর সাথে তুলনা করার মতো কিছুই নেই।
His form is not to be seen; no one sees Him with the eye. [Svetasvatara Upanishad 4:20]
তাঁর আকার দেখা সম্ভব নয়, কেউ তাকে চোখে দেখতে পায় না।

খ্রিস্টান এবং হিন্দু ধর্মের মূল আদি গ্রন্থগুলোতে পরিস্কার করে বলা আছে যে সৃষ্টিকর্তা এক, তার কোনো প্রতিকৃতি, কোনো প্রতিমা বানানো যাবে না, কোনো জড় বা জীবের পুজা করা যাবে না, কোনো দেবদেবী নেই। কিন্তু এই মূল আদি গ্রন্থগুলো সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। বরং চার্চের পাদ্রি, মন্দিরের পণ্ডিত, আশ্রমের গুরুজি যা বলে, সেটাই সাধারণ মানুষ অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করে যায়।

একই ঘটনা ঘটে মুসলমানদের বেলায়ও। আপনি খুব বেশি হলে গড়ে দশ জন মুসলমানের মধ্যে একজন পাবেন, যে কু’রআন পুরোটা একবার হলেও বুঝে পড়েছে। বাকি সবাই হয় কিছু মান্ধাতা আমলের জাল হাদিস ভরা বই পড়েছে, না হলে অপ্রাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমাম, গুরুজি, পীর বাবা যা বলেছে, সেটাই গভীর ভক্তি নিয়ে মেনে নিয়েছে। আল্লাহর تعالى নিজের পাঠানো ‘কীভাবে মুসলমান হতে হয়’-এর একমাত্র ম্যানুয়াল – কু’রআন, খুব কম মানুষকেই বুঝে পড়তে দেখা যায়।

একারণে মুসলমানরাও বড় হয় হাজারো ধরণের ভুল ধারণা নিয়ে, যার কারণে তাদেরকেও এমন অনেক কাজ করতে দেখা যায়, যা শির্‌কের মধ্যে পড়ে। যেমন, হাতে পাথরের আংটি পরে ভাবা যে এই আংটির কারণে তার ব্যবসা ভালো যাবে, ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যাবে। হাতে আয়াতুল কুরসি লেখা ব্রেসলেট পড়ে ভাবা: সেটা তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে। গলায় তাবিজ পরে ভাবা: তাবিজ তার অসুখ দূর করে দেবে, পরীক্ষায় ভালো ফল হবে। ঘরের দেওয়ালে সূরার ফলক টাঙিয়ে, দরজায় সূরা ঝুলিয়ে ভাবা: সেই ফলক খারাপ জিনিসকে ঘর থেকে দূরে রাখবে ইত্যাদি।

কোনো মানুষ বা বস্তুকে যে সৃষ্টিকর্তার ‘কাছে’ যাবার মাধ্যম বা সুপারিশের মাধ্যম করা যাবে না, তার জন্য কু’রআনে কঠিন নির্দেশ আছে—

সে দিনের ভয় কর যেদিন কোন সত্ত্বা অন্য কোন সত্ত্বার সাহায্যে এগিয়ে আসবে না এবং তার থেকে কোন সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না এবং তার থেকে কোনো ক্ষতিপূরণও নেওয়া হবে না এবং তাদেরকে কোনই সাহায্য করা হবে না। [আল-বাকারাহ ২:৪৮]

কোনো পীর, গুরু কিয়ামতের দিন কোনো মুরিদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না। সেই সুযোগই তাকে দেওয়া হবে না। সে নিজের হিসাব দিতেই ব্যস্ত থাকবে—

সেদিন তাদের মুখ সীল করে দেওয়া হবে, তাদের হাত আমাকে বলে দিবে, তাদের পা আমাকে সাক্ষী দিবে, তারা (দুনিয়ায়) কী করতো। [ইয়াসিন ৩৬:৬৫]

আল্লাহর কোনো পীর, গুরুর কাছ থেকে জানার কোনো দরকার নেই তাদের ভক্তরা কী করতো, কারণ তিনি নিজেই ব্যবস্থা করে রেখেছেন, যেন মানুষের প্রতিটি কথা, কাজ, চিন্তা পরিষ্কারভাবে রেকর্ড হয়—

পৃথিবীতে এমন কোনো প্রাণী নেই যার সংস্থানের দায়িত্ব আল্লাহর উপর নেই। তিনি জানেন কে কোথায় থাকে এবং তার শেষ পরিণাম কী। সবকিছু এক পরিষ্কার রেকর্ডে আছে। [হুদ ১১:৬]

তুমি যেই অবস্থাতেই থাকো, যেটুকুই কু’রআন পড়, যে কাজই তোমরা করো, আমি উপস্থিত থাকি —সেটা তোমরা যখনি করো না কেন। একটা ধূলিকণার সমান বা তার চেয়ে ছোট বা বড়, যা কিছুই পৃথিবীতে বা আকাশে যেখানেই থাকুক না কেন, তা তোমার প্রভুর অগোচরে নেই। বরং সবকিছুই লেখা আছে এক পরিষ্কার রেকর্ডে। [ইউনুস ১০:৬১]

এই সব সত্য মানুষের কাছে ফাঁস হয়ে গেলে সর্বনাশ! কোটি কোটি টাকার মূর্তি এবং মন্দিরের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। পাদ্রীর কাছে মানুষ তদবির করা বন্ধ করে দিবে। মাজারে আর কেউ মুরিদ হবে না। শেখের বয়াত নেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। তখন সমাজের ওই সব ‘পবিত্র’ অর্ধ শিক্ষিত, অযোগ্য, প্রতারক মানুষগুলো এবং তাদের বিশাল সাগরেদ বাহিনী না খেয়ে মারা যাবে।

তাদের আয়ের এতো সহজ ব্যবস্থা যেন কখনও বন্ধ হয়ে না যায়, সেজন্য তারা ধর্মের নামে নানা ধরণের অলৌকিক, চমকপ্রদ, বানোয়াট কাহিনী বানিয়ে ভক্তদেরকে বিমোহিত করে রাখে। অনেকগুলো বিরাট সংগঠন দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে সাহিত্যিক দিক থেকে উচ্চমানের, পাঠ মধুর ‘ধর্মীয়’ বই লিখে বাজার ভরে ফেলার, যাতে করে মানুষ সেই সব ছাইপাঁশ থেকে ধর্ম শেখা শুরু করে এবং তাদের মুল ধর্মীয় গ্রন্থের ধারেকাছেও না যায়। তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে এমন একটি ধারনা প্রচলন করার যে, সাধারণ মানুষের জন্য মূল ধর্মীয় গ্রন্থ লেখা হয়নি; সাধারন মানুষ মূল ধর্মীয় গ্রন্থ পড়লে ভুল বুঝবে। তার চেয়ে আমাদের এই বইগুলো পড়। আমরা সহজ, সরল ভাবে তোমাদেরকে সঠিক ধর্ম শিখিয়ে দিব।

এই বইগুলো তাদের আয়ের এক বিরাট উৎস। আর এই বইগুলো থেকেই শুরু হয় গণ মগজ ধোলাই। এভাবে যখন মগজ ধোলাই করে মানুষের উপর ধর্মীয় কর্তৃত্ব নিয়ে নেওয়া যায়, তখন মানুষকে দিয়ে ধর্মের নামে এমন কিছু নাই যা করানো যায় না। মানুষকে বিশ্বাস করানো যায় যে, অন্য ধর্মের মানুষরা হচ্ছে অপবিত্র, তাদেরকে হত্যা করা ধর্মীয় দিক থেকে একটি বড় পুণ্যের কাজ। মানুষকে বিশ্বাস করানো যায় যে, অন্য ধর্মের উপাসনালয়গুলো সব ভেঙ্গে ফেলা শুধু জায়েজই না, বরং তা অনেক সওয়াবের কাজ। এভাবে শির্‌ক থেকে শুরু হয় ধর্মীয় কারণে চাঁদাবাজি, দলে দলে মারামারি, মানুষ গুম করে দেওয়া এবং একসময় পুরোদস্তুর মাফিয়া সংস্কৃতি।

মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় যাবতীয় সমস্যার সমাধানের প্রথম ধাপ হচ্ছে—

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ – আল্লাহ ছাড়া আর কোনোই উপাসনার যোগ্য সত্তা নেই। [কু’রআন]

একাম এবাদ্বিতীয়ম, না তাস্‌য়ে প্রাতিমা আস্‌তি —তিনি এক, অদ্বিতীয়, তার কোনো প্রতিমা নেই। [উপনিষদ]

Thou shalt have none other gods before me. [বাইবেল]

শির্‌ক এই প্রথম ধাপটিকেই ভেঙ্গে দেয় এবং মানুষের সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে সঠিক পথনির্দেশ চাইবার জন্য অত্যাবশ্যকীয় মানসিকতা নষ্ট করে দেয়। একারণেই যারা শির্‌ক করে, তাদেরকে যুক্তি দিয়ে কিছু বোঝানো যায় না। তারা সত্য দেখেও দেখে না, মানতে চায় না। তাদেরকে বাপ-দাদা, পীর, দরবেশ, হুজুর, হাজি সাহেব, ইমাম, মাওলানাদের অন্ধ অনুকরণ করা থেকে বের করে আনা যায় না। যার ফলে তাদের পক্ষে কখনই সঠিক ধর্ম অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। আর যারা সঠিক ধর্ম অনুসরণ করে না, তারা শুধু নিজেদেরকেই নয়, বরং তার আশেপাশের মানুষের, সমাজের, জাতির ধ্বংস ডেকে আনে —যা এক বিরাট অপরাধ।

সূত্র

নতুন আর্টিকেল বের হলে জানতে চাইলে কু’রআনের কথা ফেইসবুক পেইজে লাইক করে রাখুন—

Exit mobile version