কুরআনের কথা

তোমরা কথা দিয়ে কথা রাখোনি — আল-বাক্বারাহ ৮৩ — পর্ব ২

গত পর্বে এই আয়াতের প্রথম তিনটি অঙ্গীকার — একমাত্র আল্লাহকে প্রভু হিসেবে নেওয়া, বাবা-মার প্রতি ইহসান এবং আত্মীয়দের প্রতি ভালো ব্যবহারের উপর আলোচনা হয়েছে। এই পর্বে আয়াতের বাকি অঙ্গীকারগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো। আমরা মুসলিমরা প্রতিদিন কত অঙ্গীকার ভাঙছি, সেটা এই আয়াত থেকে পরিষ্কার হয়ে বেড়িয়ে যাবে—

মনে করে দেখ, যখন আমি বনী ইসরাইলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম: “আল্লাহ ছাড়া আর কোনো কিছুরই ইবাদত করবে না; বাবা-মার জন্য সবকিছু সবচেয়ে ভালোভাবে করবে; এবং নিকটাত্মীয়, অসহায়-এতিম আর গরিব-সামর্থ্যহীনদের সাথেও; মানুষের সাথে খুব সুন্দর ভাবে কথা বলবে; সালাত প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত দিবে।” এরপরও তোমাদের কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলে। তোমরা কথা দিয়ে কথা রাখোনি। [আল-বাক্বারাহ ৮৩]

বনী ইসরাইলিরা ছিল সেই যুগের মুসলিম। তাদের কাছ থেকে আল্লাহ تعالى কিছু অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। তারা সেগুলো মানেনি। আল্লাহ تعالى তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আজকের যুগের মুসলিমরা হচ্ছে বনী ইসরাইলের উত্তরসূরি। আমরা কতখানি সেই অঙ্গীকার মানছি দেখা যাক—

অঙ্গীকার ৪: এতিমদের সাথে ইহসান

ইসলামে ٱلْيَتَٰمَىٰ (এতিম) হচ্ছে সেই সব নাবালেগ বাচ্চারা, যাদের বাবা মারা গেছে। মা বেঁচে থাকলেও তারা এতিম। বালেগ হয়ে গেলে তারা আর এতিম থাকে না।[১][১৭১]

সমাজে যত মানুষ রয়েছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাদের দেখাশোনা করা দরকার, একটু আদর, একটু ভালবাসা দরকার, তারা হলো এতিম বাচ্চারা। একজন বাচ্চার কাছে তার বাবা-মার থেকে বেশি জরুরি আর কে হতে পারে? ছোট বাচ্চারা অসহায়, দুর্বল। তারা নিস্পাপ, তারা অবুঝ। আজকের নিষ্ঠুর সমাজে বাবা-মা ছাড়া একটি শিশুর একা একা জীবন কী ভয়ংকর কঠিন, এটা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। সমাজের অন্য যে কারো থেকে তাদের সাহায্য দরকার সবচেয়ে বেশি। আমরা যদি তাদের সাহায্যে এগিয়ে না আসি, তাহলে তারা কোথায় যাবে?

একটি ইসলামিক রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের সকল এতিমদের অভিভাবক হয়ে যাওয়া।[১১] এটি একটি ফরযে কিফায়া, যার অর্থ: সমাজের কেউ যদি এই দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে সমাজের সবাই একটি ফরয ভাঙার গুনাহ অর্জন করবে। জানাযার নামায পড়া যেমন ফরযে কিফায়া, তেমনি সমাজের দুস্থ, এতিমদের সবার দেখাশোনার দায়িত্ব হচ্ছে সেই সমাজের মুসলিমদের উপর ফরযে কিফায়া।[১৭১] অথচ আমরা জানাযার নামায যতটা না আগ্রহ নিয়ে পড়ি, এতিম, গরিবদের দেখাশোনার ব্যবস্থা করতে সেরকম চেষ্টা করি না।

এতিমদেরকে দান করে, তাদের দেখাশোনার ব্যবস্থা করে, আমরা তাদের উপর কোনো মহান অনুগ্রহ করি না। বরং এটা তাদের প্রাপ্য, আমাদের উপর তাদের হক। আমরা বসে বসে যতই ইসলামের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে বাণী কপচাই, রাজনীতির অবস্থা নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলি, ইসলামিক লেকচারের আয়োজন করি, কিরাত প্রতিযোগিতা করি,  জিহাদের স্লোগান দেই —যতদিন পর্যন্ত সমাজে এতিম শিশু, বৃদ্ধরা না খেয়ে রাস্তায় শুয়ে থাকে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের ফরযে কিফায়া ভাঙার গুনাহ থেকে আমাদের মুক্তি নেই। ততদিন পর্যন্ত আমরা এই কঠিন অঙ্গীকার ভাঙার ফলাফল থেকে রেহাই পাবো না, যদি না আল্লাহ تعالى অন্য কিছু ইচ্ছা না করেন। [১৭২]

আল্লাহ تعالى যখন কোনো শিশুর কদরে লিখে দিয়েছেন যে, সে তার বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলবে, তখন ইসলামিক রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার অভিভাবক হয়ে যাওয়া।[১১] আজকে আমরা ব্যক্তিগতভাবে, এনজিও এবং দাতা সংগঠনগুলোর মাধ্যমে যতগুলো এতিমদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করি না কেন, আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে আরও অনেক এতিম থেকেই যাবে। এদেরকে একদল পশু হাত-পা ভেঙ্গে, গরম সীসা ঢেলে চোখ গালিয়ে দিয়ে ভিক্ষা করতে নামাবে, আর তাদের ভিক্ষার আয় কেড়ে নেবে। একারণেই আমাদের দরকার একটি ইসলামিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। একমাত্র একটি ইসলামিক রাষ্ট্রের পক্ষেই সম্ভব দেশের সকল এতিমদের সঠিকভাবে পালন করার জন্য যে বিপুল পরিমাণের সম্পদ, কাঠামো, লোকবল দরকার, তা দেশের মানুষের কাছ থেকে আদায় করে এতিমদের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া। একমাত্র একটি ইসলামিক রাষ্ট্রই এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটিকে বাধ্যতামূলক দায়িত্ব হিসেবে নিয়ে, রাষ্ট্রের সকল জনগণের উপর বাধ্যতামূলক করে দেবে। অন্য কোনো ধরনের সরকার এর আগে কখনো এমন করেনি, করবেও না। করতে গেলে সেই সরকারের রাজনৈতিক দলের ভোট পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা থাকবে না।[১১]

আমরা কয়জন জানি আমাদের এলাকায় এতিম কারা? আমরা প্রতিদিন মসজিদে নামায পড়তে ঢুকি এবং নামায শেষে বের হয়ে যে যার কাজে চলে যাই। নামাযের সময় পাশে বসা ছেড়া কাপড় পড়া মলিন মুখের অসহায় দেখতে মানুষটার খবর নেওয়ার প্রয়োজন পর্যন্ত অনুভব করি না। এতিমদের সাথে ইহসান করতে হলে প্রথমে আমাদেরকে তো আগে জানতে হবে আমাদের এলাকায় এতিম কারা!

আমাদেরকে মসজিদ দেওয়া হয়েছে যেন আমরা এলাকার মুসলিম ভাইদের খোঁজ খবর রাখি, একে অন্যের সাথে পরিচিত হই, বিপদে আপদে এগিয়ে যেতে পারি। কিন্তু আজকে মসজিদ শুধুমাত্র একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করার জায়গায় পরিণত হয়েছে। কোনোমতে নামাজ শেষ করে ডানে বামে না তাকিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বের হয়ে যেতে পারলেই বাঁচি।[১]

অঙ্গীকার ৫: গরিবদের সাথে ইহসান

মিসকিন ٱلْمَسَٰكِين হচ্ছে খুবই গরিব মানুষরা, যাদের জন্য খাদ্য, বাসস্থান, কাপড় যোগাড় করা খুবই কঠিন। এরা সবসময় অভাবী। একজন এতিমের হয়ত উত্তরাধিকার সুত্রে সম্পত্তি থাকতে পারে। কিন্তু এদের কোনো সম্পত্তি থাকা তো দুরের কথা, মৌলিক চাহিদা পূরণ করার মতো সামান্য অবস্থাও নেই। এরা হচ্ছে সমাজের ভুলে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া মানুষেরা।

আজকে আপনার-আমার পরিবার নিয়ে থাকার জন্য বাসা আছে। রাতে খাওয়ার মতো খাবার ফ্রিজে রাখা আছে। কালকে বাইরে পড়ার মতো কাপড় আছে। কিন্তু মিসকিনদের এসব কিছুই নেই। তারা প্রতিটা দিন কষ্টে, ভয়ে থাকে: কীভাবে তারা আগামীকাল কিছু খাবার, পড়ার মতো পরিষ্কার কাপড়, থাকার মতো জায়গা জোগাড় করবে। বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করা ছাড়া আর কিছু নিয়ে চিন্তা করার মতো অবস্থা তাদের নেই।[১][১১]

আজকে এমন কোনো অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নেই, যা বাধ্যতামূলক ভাবে দেশের সকল মিসকিনদের অভাব দূর করে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে বাধ্য। একমাত্র একটি ইসলামিক রাষ্ট্রের পক্ষেই সম্ভব সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নিয়ে, জনগণের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ভাবে যাকাত সংগ্রহ করে, একটি তহবিল গঠন করে, দেশের সকল মিসকিনদের অভাব দূর করার ব্যবস্থা করা।

যতদিন ইসলামিক আইন প্রতিষ্ঠা না হচ্ছে, ক্যাপিটালিস্ট অর্থনীতি ধনীদেরকে আরও ধনী বানিয়ে যাবে, এবং গরিবদেরকে আরও গরিব বানাতে থাকবে। আজকে পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই, যা সম্পত্তিকে সুষমভাবে বণ্টন করে ধনী-গরিবের মধ্যে যে বিরাট পার্থক্য, তা দূর করতে পারে। যার ফলে সবসময় এমন কিছু মানুষ থেকে যায়, যারা তাদের প্রয়োজনের চেয়ে হাজার গুণ বেশি সম্পত্তি নিয়ে থাকে, যা তারা আমোদ ফুর্তিতে নষ্ট করে। অন্যদিকে এমন কিছু মানুষ সবসময় থেকে যায়, যারা দুই বেলা খাবারও জোগাড় করতে পারে না। সম্পদ সুষমভাবে বণ্টনের এমন কোনো পদ্ধতি কোনো সরকার যদি তৈরি করার চেষ্টাও করে, তখন দেশের বড় বড় ধনকুবেররা ব্যবস্থা করে দিবে যেন সেই সরকার বেশিদিন টিকে থাকতে না পারে।

আল্লাহর تعالى বিরুদ্ধে মানুষের একটি সাধারণ অভিযোগ হলো: আল্লাহ تعالى কেন পৃথিবীতে এত মানুষ পাঠাল, কিন্তু তাদের জন্য যথেষ্ট খাবার, প্রাকৃতিক সম্পদ, থাকার জায়গা দিয়ে পাঠাল না। এটি একটি বিরাট ভুল ধারণা যে, পৃথিবীতে এত যে গরিব মানুষ, তার মূল কারণ পৃথিবীতে সম্পদের অভাব। পৃথিবীত মাত্র ১% মানুষ পুরো পৃথিবীর ৪৮% সম্পদ দখল করে রেখেছে।[১৭৩] পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ১০% মানুষ পুরো পৃথিবীর ৮৫% সম্পদের অধিকারী! মোট জনসংখ্যার অর্ধেক, যা কিনা প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মানুষ, আজকে পৃথিবীর মোট সম্পদের মাত্র ১% এর উপর বেঁচে আছে!

শুধু তাই না, মাত্র ২% সবচেয়ে ধনী মানুষগুলো পুরো পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি বাড়ি এবং জমির মালিক। বাকি অর্ধেক জমি এবং বাড়ির মধ্যে বাকি ৯৮% জনসংখ্যা বসবাস করছে। মানুষের মধ্যে আজকে যে এই চরম বৈষম্য, তার প্রধান কারণ মানুষের সীমাহীন লোভ, দুর্নীতি এবং ক্যাপিটালিস্ট অর্থনীতি। সুদ একটি বড় কারণ যা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে করে বড় লোকরা বসে বসে আরও বড় লোক হয়, আর মধ্যবিত্ত এবং গরিবরা অমানুষিক খাটার পরেও দিনে দিনে আরও গরিব হতে থাকে।

পুরো পৃথিবীর সব মানুষকে, পুরো ৬ বিলিয়ন মানুষের প্রত্যেককে, একটি বাসা এবং সামনে একটি ছোট বাগান দিলেও পৃথিবীর সব মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রের এক টেক্সাস অঙ্গরাজ্যেই জায়গা দেওয়া যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে এক বিরাট পৃথিবী দিয়েছেন, কিন্তু মাত্র ২% লোভী মানুষের কারণে আজকে ১.৬ বিলিয়ন মানুষ দিনে একবেলাও খেতে পারে না।

বছরে ৩০ বিলিয়ন ডলার খরচ করলে, সারা পৃথিবী থেকে ক্ষুধা দূর করে ফেলা সম্ভব। একটি লোকও তখন না খেয়ে থাকবে না। অথচ বছরে ১২০০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয় অস্ত্রের পেছনে। একটি দেশের খাবার অপচয়ের পেছনে নষ্ট হয় ১০০ বিলিয়ন ডলার। ‘অবিস’ বা অতিরিক্ত মোটারা বছরে ২০ বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত খাবার খায়।[১৭৪] একদিকে মানুষ না খেয়ে মারা যায়, আর অন্যদিকে মানুষরা অতিরিক্ত খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়।

আল্লাহ কখনই মানব জাতির কোনো ক্ষতি করেন না, বরং মানুষরাই মানুষের ক্ষতি করে। [ইউনুস ১০:৪৪]

অঙ্গীকার ৬: মানুষের সাথে খুব সুন্দর ভাবে কথা বলবে

কু’রআনে বেশ কয়েকটি আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে মানুষের সাথে সুন্দর করে কথা বলতে বলেছেন। কথা বলার সময় নরম স্বরে, খোলা মন নিয়ে মানুষের সাথে কথা বলতে হবে, সে যেই হোক না কেন — হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, সুন্নি, শিয়া, আহমেদিয়া-কাদিয়ানী, গোঁড়া মুসলিম, নামে-মুসলিম, ঘোরতর কাফির-মুশরিক, আমাদের সালাফি, হানাফি, শাফেয়ি, সূফী ভাই-বোন — সবার সাথে আমাদেরকে সুন্দর ভাবে কথা বলার নির্দেশ আল্লাহ تعالى দিয়েছেন।[৪] কিন্তু আল্লাহ تعالى বলেননি সবসময় ‘সুন্দর কথা’ বলতে। বরং সত্য কথা সবসময় বলতে হবে, সেটা যতই অপ্রিয়, অনাকাঙ্খিত হোক না কেন। শুধু খুব সাবধানে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন বলার ধরণটা সবসময় হুসনা حُسْنًا অর্থাৎ সুন্দর, নম্র হয়।[৪]

আল্লাহ تعالى যখন নবী মুসাকে عليه السلام ফিরাউনের কাছে পাঠালেন, তখন তিনি تعالى বলে দিয়েছিলেন মুসা عليه السلام যেন ফিরাউনের সাথে নম্র ভাবে কথা বলেন—

তোমরা তার সাথে নম্রভাবে কথা বলবে। হতে পারে সে চিন্তা-ভাবনা করবে অথবা ভীত হবে। [ত্বাহা ২০:৪৪]

ফিরাউনের মতো একজন সাইকোপ্যাথ, সিরিয়াল কিলার, যে কিনা হাজারে হাজারে শিশু জবাই করে হত্যা করত, মেয়েদেরকে বাঁচিয়ে রাখত তাদের সম্ভ্রম কেড়ে নেওয়ার জন্য — তার সাথে আল্লাহ تعالى যদি এভাবে কথা বলতে বলেন, তাহলে আমরা কীভাবে মানুষের সাথে খারাপ ভাবে কথা বলতে পারি? আমরা যাদের সাথে কথা বলি, তারা কেউ কি ফিরাউনের চেয়েও খারাপ?[৪]

কোনো কারণে উপমহাদেশের মানুষদের, বিশেষ করে মুসলিমদের মুখ বড়ই খারাপ। আমরা কথায় কথায় মানুষকে খোঁটা দেই, অপমান করি, গালি দেই। পশ্চিমা দেশগুলোতে একজন বাস ড্রাইভার অন্যজনকে দেখলে হাত উঁচিয়ে সম্ভাষণ জানায়, আর আমাদের দেশের বেশিরভাগ বাস ড্রাইভাররা একে অন্যকে দেখলে বিশুদ্ধ বাংলায় গালি দেয়। পশ্চিমা দেশগুলোতে ব্যাংক, হাসপাতাল, সরকারি অফিসে গেলে সেখানকার কর্মচারীরা হাঁসিমুখে সম্ভাষণ দিয়ে কীভাবে সাহায্য করতে পারে জিজ্ঞেস করে, যেখানে আমাদের দেশের বেশিরভাগ সরকারি কর্মচারী এমন চেহারা নিয়ে তাকায়, যেন সেবা নিতে এসে অন্যায় করে ফেলেছি। পশ্চিমা দেশের সরকারি স্কুল, কলেজের শিক্ষকদের ছাত্রছাত্রীদের গায়ে হাত তোলা তো দূরের করা, গালি পর্যন্ত দেওয়া আইনত নিষিদ্ধ এবং শাস্তি যোগ্য অপরাধ। আর আমাদের দেশের অনেক সরকারি স্কুল, কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ফার্মের গরু-ছাগলের মতো পেটানো হয়, না হয় জেলখানার কয়েদীদের মতো বিকৃত সব শাস্তি দেওয়া হয়।

মসজিদে ঢুকলে দেখা যায় বেশিরভাগ মানুষ বেজার মুখ করে বসে থাকে। ব্যাপারটা এমন যে, যার মুখে যত দুঃখ ভাব বেশি, তার তাকওয়া তত বেশি। আপনি অপরিচিত কাউকে গিয়ে সালাম দিলে, সে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে বলবে, “ওয়ালাইকুম,… কী ব্যাপার?”

শুধু তাই না — “খাঁটি ঈমানদাররা কখনো আল্লাহর ভয়ে দুনিয়ায় হাসতে পারে না” — এই ধরনের ধারণা অনেক মুরব্বিদের এবং উঠতি মুসলিমদের এখনও ছড়াতে দেখা যায়। রাসুলের عليه السلام সুন্নাহ ছিল সবসময় মানুষের সামনে হাঁসি মুখে থাকা, আর আজকে অনেক মুসলিমরা তাঁর থেকেও বেশি তাকওয়া দেখাতে গিয়ে সবসময় কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা মানুষের মতো চেহারা নিয়ে বসে থাকে।

আমরা উপমহাদেশের মুসলিম জাতিগুলো পড়ালেখা শিখলেও ঠিক শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারিনি। সৌজন্যতা, ভদ্রতা, নম্রতাকে আমাদের সংস্কৃতিতে একধরনের দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়। আল্লাহ تعالى কু’রআনে মুসলিমদেরকে যা করতে বলেছেন, সেটা পশ্চিমা দেশের অমুসলিমরা নিষ্ঠার সাথে করে এমন চমৎকার কাজের, থাকার এবং বেড়াবার পরিবেশ গড়ে তুলেছে, যা ছেড়ে সেখানকার মুসলিম অভিবাসিরা তাদের জন্মভূমির ‘মুসলিম’ ভাইবোনদেরদের কাছে তাদের কথা এবং ব্যবহারের ভয়ে সচরাচর ফিরে আসতে চায় না।

মানুষের সাথে ভালোভাবে কথা বলার, সুন্দর ব্যবহার করার, সঠিক কথা বলার অনেকগুলো নির্দেশ কু’রআনে আছে—

অঙ্গীকার ৭: সালাত প্রতিষ্ঠা করবে

কেউ যদি নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করে, তাহলে তার প্রথম কাজে-প্রমাণ হচ্ছে সালাত। আল্লাহ تعالى এখানে বলেননি, “সালাত পড়।” বরং তিনি বলেছেন, “সালাত প্রতিষ্ঠা করো।” يُقِيمُونَ এসেছে قوم (কু’মু) থেকে যার অর্থ দাঁড়ানো, প্রতিষ্ঠা করা।[১] প্রাচীন আরবরা যখন কোনো শক্ত পিলার স্থাপন করতো, বা শক্ত দেওয়াল তৈরি করতো, তার জন্য তারা কু’মু শব্দটি ব্যবহার করতো। এখানে কু’মু ব্যবহার করে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে বলছেন যে, আমাদের প্রতিদিনের রুটিনের মধ্যে পাঁচটি শক্ত পিলার দাঁড় করাতে হবে। সেই পিলারগুলো কোনোভাবেই নড়ানো যাবে না। আমাদের পড়ালেখা, কাজ, খাওয়া, বিনোদন, ঘুম সবকিছু এই পিলারগুলোর আশেপাশে দিয়ে যাবে। আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে সালাত তার জায়গায় ঠিক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে, কোনোভাবেই তাদেরকে নড়ানো যাবে না।[১]

একজন মু’মিন কখনও মেহমান আসলে ভাবে না, “আহ্‌, মাগরিবের সময় দেখি পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন মেহমান রেখে উঠে গেলে তারা আবার কী বলবে। থাক, একবারে ঈশার সাথে পড়ে নিবো।” একজন মু’মিন কাজ করতে করতে কখনও ভাবে না, “আহ্‌হা, সূর্য দেখি ডুবে যাচ্ছে। আর মাত্র দশটা মিনিট দরকার। কাজটা শেষ করে আসরের নামায পড়ে নিব। এখন কাজ ছেড়ে উঠে গেলে সব তালগোল পাকিয়ে যাবে। নামায পড়ে এসে ভুলে যাবো কী করছিলাম। আল্লাহ মাফ করেন।”

একজন মু’মিন ফজরের সালাতের জন্য রাতে উঠবে কিনা এনিয়ে চিন্তা করার সময় কখনও ভাবে না, “আমাকে সারাদিন অনেক ব্রেইনের কাজ করতে হয়। আমার রাতে টানা ৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। রাতে ফজরের নামাযের জন্য উঠলে ঠিক মতো ঘুম হয় না। সারাদিন ক্লান্ত, বিরক্ত লাগে। তারচেয়ে একবারে সকালে উঠে সবার আগে ফজরের নামায পড়ে নিলেই হবে।”

একজন মু’মিন দরকার হলে ঘড়িতে পাঁচটা এলার্ম দেয়। রাতে ফজরের সালাতে উঠার জন্য একটা নয়, তিনটা ঘড়িতে ৫ মিনিট পর পর এলার্ম দিয়ে রাখে। তার কম্পিউটারের ক্যালেন্ডারে প্রতিদিন কমপক্ষে চারটা এপয়েন্টমেন্ট দেওয়া থাকে, যেগুলোর টাইটেল হয়, “Meeting with the Lord of the Worlds”

সালাহ শব্দটির একটি অর্থ হলো ‘সংযোগ।’ সালাতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর تعالى সাথে আমাদের সম্পর্ক স্থাপন করি, সবসময় তাঁকে মনে রাখি। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামায একারণেই দিয়েছেন যেন আমরা কাজের চাপে পড়ে, আজে বাজে টিভি প্রোগ্রাম এবং খেলা দেখতে দেখতে এবং রাতভর ভিডিও গেম খেলতে খেলতে তাঁকে ভুলে না যাই। কারণ তাঁকে ভুলে যাওয়াটাই হচ্ছে আমাদের নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রথম ধাপ। যখনি আমরা আল্লাহকে تعالى একটু একটু করে ভুলে যাওয়া শুরু করি, তখনি আমরা আস্তে আস্তে কোনো অনুশোচনা অনুভব না করে খারাপ কাজ করা শুরু করি। এখান থেকেই শুরু হয় আমাদের পতন।

অঙ্গীকার ৮: যাকাত দিবে

আমাদের যা কিছু আছে – বাড়ি, গাড়ি, টাকাপয়সা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক ক্ষমতা, মানসিক ক্ষমতা, প্রতিভা – এই সব কিছু হচ্ছে রিজক رزق এবং এগুলো সবই আল্লাহর تعالى দেওয়া।[১] রিজক অর্থ যে সমস্ত জিনিস ধরা ছোঁয়া যায়, যেমন টাকাপয়সা, বাড়ি, গাড়ি, জমি, সন্তান এবং একই সাথে যে সমস্ত জিনিস ধরা ছোঁয়া যায় না, যেমন জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, মেধা।[২] এগুলোর কোনটাই আমরা শুধুই নিজেদের যোগ্যতায় অর্জন করিনি। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে এই সবকিছু দিয়েছেন। এখন আপনার মনে হতে পারে, “কোথায়? আমি নিজে চাকরি করে, দিনের পর দিন গাধার মতো খেঁটে বাড়ি, গাড়ি করেছি। আমি যদি দিনরাত কাজ না করতাম, তাহলে কি এগুলো এমনি এমনি হয়ে যেত?”

ভুল ধারণা। আপনার থেকে অনেক বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ পৃথিবীতে আছে, যারা আপনার মতই দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেছে, কিন্তু তারা বাড়ি, গাড়ি করতে পারেনি। আল্লাহ تعالى কোনো বিশেষ কারণে আপনাকে বাড়ি, গাড়ি করার অনুমতি দিয়েছেন দেখেই আপনি এসব করতে পেরেছেন। তিনি যদি অনুমতি না দিতেন, তিনি যদি মহাবিশ্বের ঘটনাগুলোকে আপনার সুবিধামত না সাজাতেন, আপনি কিছুই করতে পারতেন না। আল্লাহ আপনাকে সামর্থ্য দিয়েছেন, সুযোগ দিয়েছেন, আপনি সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরিশ্রম করেছেন। সবাই কিন্তু পরিশ্রম করলেই ফল পায় না। আল্লাহর হুকুম ছিলো আপনার পরিশ্রমের ফলস্বরূপ আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন, তাই আপনি অর্থ উপার্জন করছেন।

একারণেই আল্লাহ تعالى বাক্বারাহ-এর তৃতীয় আয়াতে বলেছেন যে, তিনি আমাদেরকে যা দিয়েছেন, সেটা থেকে যেন আমরা খরচ করি। আল্লাহর تعالى রাস্তায় খরচ করতে গিয়ে যেন আমরা মনে না করি যে, “এগুলো সব আমার, দিবো না কাউকে! My Precious!” বরং এগুলো সবই আল্লাহর تعالى । তিনি আপনাকে কিছুদিন ব্যবহার করার জন্য দিয়েছেন। একদিন তিনি সবকিছু নিয়ে যাবেন। আপনার পরিবারের সদস্যরা আপনাকে উলঙ্গ করে, একটা সস্তা সাদা কাপড়ে পেঁচিয়ে, মাটির গর্তে পুঁতে দিয়ে আসবে।

আমাদের অনেকেরই দান করতে গেলে অনেক কষ্ট হয়। কোনো এতিমখানায় দান করলে, বা কোনো গরিব আত্মীয়কে হাজার খানেক টাকা দিলে মনে হয়: কেউ যেন বুকের একটা অংশ ছিঁড়ে নিয়ে গেল। আমরা ব্যাপারটাকে এভাবে চিন্তা করতে পারি— দুনিয়াতে আমার একটি ক্ষণস্থায়ী কারেন্ট একাউন্ট রয়েছে, এবং আখিরাতে আমার আরেকটি দীর্ঘস্থায়ী ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট রয়েছে। আমি আল্লাহর تعالى রাস্তায় যখন খরচ করছি, আমি আসলে আমার দুনিয়ার একাউন্ট থেকে আখিরাতের একাউন্টে ট্রান্সফার করছি মাত্র। এর বেশি কিছু না। আমার সম্পত্তি কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে না, আমারই থাকছে, যতক্ষণ না আমি দান করে কোনো ধরনের আফসোস করি, বা দান করে মানুষকে কথা শোনাই।[১]

একদিন আমরা দেখতে পাব: আমাদের ওই একাউন্টে কত জমেছে এবং আল্লাহ تعالى আমাদেরকে প্রতিটা দানের বিনিময়ে কমপক্ষে ৭০০ গুণ বেশি মুনাফা দিয়েছেন।[১] সেদিন আমরা শুধুই আফসোস করব, “হায়, আর একটু যদি আখিরাতের একাউন্টে ট্রান্সফার করতাম! তাহলে আজকে এই ভয়ংকর আগুন থেকে বেঁচে যেতাম!”

কেন কু’রআনে বার বার নামাযের পরেই দান করার কথা আসে? দান করার মাধ্যমে একজন মানুষের ঈমানের পরীক্ষা কীভাবে হয়?

আপনি দেখবেন কিছু মানুষ আছে যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে, রমযানে ত্রিশটা রোযা রাখে, কিন্তু গত এক বছরেও কোনোদিন কোনো এতিম খানায় একটা টাকাও দিতে পারেনি। ড্রাইভার, কাজের বুয়া, বাড়ির দারোয়ান তার কাছে বার বার টাকা চাইতে এসে— “দিবো, দিবো, রমযান আসুক” —এই শুনে খালি হাতে ফিরে গেছে। গরিব আত্মীয়স্বজন এসে কয়েকদিন থেকে ফিরে গেছে, কিন্তু কোনো টাকা নিয়ে যেতে পারেনি। মসজিদে বহুবার সে বিভিন্ন উদ্যোগের জন্য টাকার আবেদন শুনেছে, কিন্তু কোনোদিন পকেটে হাত দিয়ে একটা একশ টাকার নোট বের করে দিতে পারেনি। ঘরের মধ্যে এসি ছেড়ে জায়নামাজে বসে নামায পড়া সোজা কাজ, কিন্তু পকেট থেকে হাজার টাকা বের করে গরিব আত্মীয়, প্রতিবেশী, এতিমখানায় দেওয়া যথেষ্ট কঠিন কাজ। এর জন্য ঈমান লাগে।

এই ধরনের মানুষদের আল্লাহর تعالى সাথে সম্পর্ক কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠান পর্যন্তই। এরা এখনো মুসলিম থেকে উপরে উঠে মু’মিন হতে পারেনি। আল্লাহর تعالى প্রতি তাদের বিশ্বাস এখনও এতটা মজবুত হয়নি যে, তারা আল্লাহর تعالى উপর বিশ্বাস রেখে হাজার খানেক টাকা নির্দ্বিধায় একটা এতিমখানায় দিয়ে দিতে পারে। কিয়ামতের দিনের প্রতিদান নিয়ে এখনও তাদের সন্দেহ ততটা দূর হয়নি যে, তারা নির্দ্বিধায় গরিব আত্মীয়দের চিকিৎসায় দশ হাজার টাকা লাগলেও, সেটা হাসিমুখে দিয়ে দিতে পারে। তারা যদি সত্যিই মু’মিন হতো, তাহলে তারা প্রতিদিন সকালে উঠে চিন্তা করতো, “আজকে আমি কাকে আল্লাহর تعالى সম্পদ ফিরিয়ে দিতে পারি? আল্লাহর تعالى কোন মেহমানকে আজকে আমি খাওয়াতে পারি? কার কাছে গিয়ে আজকে আমি জান্নাতের জন্য সিকিউরিটি ডিপোজিট করতে পারি?”

এরপরও তোমাদের কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলে। তোমরা কথা দিয়ে কথা রাখছিলে না।

আমরা যখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে ঘোষণা দেই যে, “আমি এখন একজন মুসলিম”, তখন  সেই ঘোষণার গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলোর পেছনে কিছু অঙ্গীকার থাকে: ১) আল্লাহ تعالى ছাড়া আর কারো বা কোনো কিছুর দাস হয়ে যাব না, ২) বাবা-মার সাথে সবকিছু সবচেয়ে ভালোভাবে করব, ৩) নিকট আত্মীয়, এতিম, মিসকিনদের সাথে ভালো ব্যবহার করব, ৪) মানুষের সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলব, ৫) সময়মত ঠিকভাবে সালাত পড়ব, ৬) ঠিকভাবে যাকাত দিব। কিন্তু আমরা কয়জন এগুলো মেনে চলি?

আয়াতটির শেষ হচ্ছে — “তোমরা مُعْرِضُون (মু’রিদুন) হয়ে গেলে।” মু’রিদ হচ্ছে যারা অঙ্গীকার করে আর সেই অনুযায়ী কাজ করে না।[১১] স্বয়ং আল্লাহকে تعالى কথা দেওয়ার পর যারা সেই কথা ভাঙ্গে, তারা কত বড় খারাপ মানুষ হতে পারে সেটা চিন্তাও করা যায় না। একারণেই বনী ইসরাইল আল্লাহর تعالى ক্রোধের শিকার হয়ে, কয়েকবার প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

এখানে আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নেওয়ার আছে: আমরা মুসলিম হওয়ার সময় এই অঙ্গীকারগুলো করি। যদি আমরা সেই অঙ্গীকার ভাঙ্গি, তাহলে আমাদের পরিণতি বনী ইসরাইলের মতো হয়ে যাবে। আজকের যুগে মুসলিম জাতির ভগ্নদশা দেখলে কারো বুঝতে বাকি থাকার কথা না কেন মুসলিমরা আজকে সবচেয়ে নিপীড়িত, ঘৃণিত, অত্যাচারিত জাতি। কেন আমাদের অবস্থার সাথে বনী ইসরাইলের অবস্থার এত মিল পাওয়া যায়।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, ইসলাম কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ভরা ধর্ম নয়, বরং এতে স্রষ্টা تعالى এবং তাঁর সৃষ্টির প্রতি দায়িত্বকে খুব সুন্দরভাবে ভারসাম্য করা হয়েছে। ইসলাম হচ্ছে একমাত্র ধর্ম যেখানে বাবা-মার প্রতি দায়িত্বকে সৃষ্টিকর্তার ইবাদতের ঠিক পরেই স্থান দেওয়া হয়েছে। ইসলামে সুন্দর ব্যবহার এবং বিশেষ করে সুন্দর ভাবে কথা বলার উপরে যত জোর দেওয়া হয়েছে, তা অন্য ধর্মে দেখা যায় না। আমরা মুসলিমরা যদি সত্যিই ইসলাম মেনে চলতাম, তাহলে আমাদের আর কোনোদিন কষ্ট করে ইসলামের প্রচারে কিছু করতে হতো না। মানুষ আমাদেরকে দেখে, আমাদের সাথে কথা বলে মুগ্ধ হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসলাম গ্রহণ করত।

সূত্র:

নতুন আর্টিকেল বের হলে জানতে চাইলে কু’রআনের কথা ফেইসবুক পেইজে লাইক করে রাখুন—

Exit mobile version