অথবা তাকে দেখেছ, যে ধ্বসে যাওয়া এক জনবসতির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিল, “কীভাবে আল্লাহ একে আবার জীবিত করবেন, যেখানে কিনা তা মৃত?” তখন আল্লাহ তাকে একশ বছর মৃত রাখলেন, তারপর তাকে আবার বাঁচিয়ে তুলে বললেন, “তুমি কতদিন এভাবে ছিলে?” সে উত্তর দিলো, “একদিন বা এক দিনের কিছু অংশ।” আল্লাহ বললেন, “না, বরং তুমি এভাবে একশ বছর ছিলে। তোমার খাবার এবং পানীয়ের দিকে তাকাও। সেগুলো পচেনি। এবার তোমার গাধার দিকে তাকাও —আমি তোমাকে মানুষের জন্য এক নিদর্শন করে দেব — হাড্ডিগুলোর দিকে তাকাও, দেখো কীভাবে আমি সেগুলোকে একসাথে করি, মাংস দিয়ে আবৃত করি।” তারপর যখন তাকে পরিষ্কার করে দেখানো হলো, সে বলল, “আমি জানি আল্লাহ সবকিছুর উপরে সব ক্ষমতা রাখেন।” [আল-বাক্বারাহ ২৫৯]
প্রেক্ষাপট
একবার একজন নবী, যার সাথে আল্লাহ تعالى যোগাযোগ করেছিলেন, তিনি এক মৃত জনবসতির ধ্বংসস্তূপ দেখে ভাবছিলেন যে, কীভাবে আল্লাহ تعالى এই সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়া জনবসতিকে আবার প্রাণ দেবেন? তখন আল্লাহ تعالى তাকে একশ বছর মৃত রেখে, আবার জীবিত করে দেখিয়ে দিলেন। একই সাথে তার যেন কোনো সন্দেহ না থাকে, সেজন্য তিনি تعالى তার চোখের সামনে তার সাথের গাধার (বা তার) মৃত পচে যাওয়া দেহকে আবার জীবিত করে দেখিয়ে দিলেন।[১২][১৪]
এই আয়াত থেকে এবং এর পরের আয়াত থেকে আমরা দেখবো, নবীরা, যারা কিনা আল্লাহর تعالى প্রতি সবচেয়ে দৃঢ় বিশ্বাস রাখেন, তারাও মাঝে মধ্যে গায়েবে বিশ্বাস নিয়ে কৌতূহল প্রকাশ করেন। তাদেরও জানতে ইচ্ছে করে আল্লাহ تعالى কীভাবে অলৌকিক ঘটনা ঘটান, কীভাবে তিনি تعالى মৃতকে জীবিত করেন। সুতরাং এথেকে আমরা শিক্ষা পাই যে, আল্লাহর تعالى ক্ষমতা বা আল্লাহ تعالى কীভাবে আমাদের দৃষ্টিতে অলৌকিক ঘটনা ঘটাবেন, সেটা জানতে চাওয়াটা দোষের না। মানুষের কৌতূহল থাকবেই। আল্লাহ تعالى মানুষকে কৌতূহল দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এই কৌতূহলই মানুষকে জ্ঞান অর্জন করতে, প্রযুক্তি তৈরি করতে তাড়না দেয়। কৌতূহল না থাকলে মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী হতে পারত না। সুতরাং কৌতূহল সমস্যা না। তবে সমস্যা হচ্ছে অহেতুক কৌতূহল এবং কৌতূহল মেটাতে না পারলে আল্লাহর تعال ক্ষমতায় অবিশ্বাস করা।
কেন আমরা অলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাস করতে পারি না?
আমাদের দেহ যখন মরে পচে গলে যাবে, দেহের কণাগুলো মাটিতে মিশে ছড়িয়ে যাবে, বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে দূরে চলে যাবে, বাতাসে উড়ে শত মাইল দূরে হারিয়ে যাবে, তখন কীভাবে আবার সেগুলো একসাথে হয়ে আগের দেহ ফিরে আসবে? —এটা বিশ্বাস করতে হাজার বছর আগেও মানুষের অনেক সমস্যা হয়েছিল, এখনও অনেকে বিশ্বাস করতে পারেন না।
যারা একটু বেশি দার্শনিক, তারা আবার কঠিন যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন—
মহাবিশ্বের সবকিছু নির্দিষ্ট কিছু নিয়মের মধ্যে চলে। যদি মহাবিশ্ব কোনো স্রস্টা তৈরি করে থাকেন, তাহলে তিনিই সেই নিয়মগুলো তৈরি করেছেন। একজন ন্যায়পরায়ণ স্রস্টা কখনই নিয়ম তৈরি করে আবার নিজেই সেই নিয়ম ভাঙবেন না। তাহলে সেটা ন্যায় হবে না। সুতরাং স্রস্টা থাকলে কোনো অলৌকিক ঘটনা ঘটা সম্ভব না। কিন্তু ধর্মগুলো অলৌকিক ঘটনা দাবি করে। সুতরাং ধর্মগুলো সব মিথ্যা।
মানুষের এই সমস্যার মুল কারণ দুটি—
১) ধরে নেওয়া যে, আল্লাহ تعالى মহাবিশ্ব পরিচালনা করার জন্য যে নিয়ম সৃষ্টি করেছেন, যেমন মাধ্যকর্ষণ শক্তির প্রভাবে সবসময় সবকিছু নিচের দিকে পড়ে, কখনও উপরে উঠতে পারে না — এই সব নিয়মের মধ্যে আল্লাহও تعالى আবদ্ধ। তারা দেখতে পায় যে, মহাবিশ্বের সব কিছুই এই সব নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ। তাহলে নিশ্চয়ই সেগুলো আল্লাহকেও تعالى আবদ্ধ করবে। সৃষ্টিজগতের জন্য যেটা ‘নিয়ম’ সেটা নিশ্চয়ই স্রস্টার জন্যও ‘নিয়ম’। —এটা হচ্ছে Association Fallacy। যেমন, সব টেররিস্টরা মুসলিম। আমি একজন মুসলিম। সুতরাং আমি নিশ্চয়ই একজন টেররিস্ট।
২) আমরা এতদিন পর্যবেক্ষণ করে মহাবিশ্বের যেই নিয়মগুলো আবিষ্কার করেছি, যেভাবে মহাবিশ্বকে উপলব্ধি করেছি, মহাবিশ্ব সেভাবেই চলে, সেটাই একমাত্র সত্য, এর বাইরে আর কিছু নেই, আর কোনো জগত বা বাস্তবতা নেই। এই মহাবিশ্বই একমাত্র আসল অস্তিত্ব বা বাস্তবতা।
যেমন, আমরা জানি মহাবিশ্ব চলে অভিকর্ষ, তড়িৎচুম্বক শক্তি, আন্তআণবিক শক্তি, ক্ষেত্র ইত্যাদি মৌলিক কিছু শক্তি এবং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, কারণ আমরা এই প্রক্রিয়াগুলোর প্রভাব সব জায়গায় দেখতে পাই। কিন্তু আমরা এখনও জানি না এগুলো আসলে কী। আমরা এদের প্রভাব এবং ফলাফল দেখে এগুলো কী, সে সম্পর্কে কিছু সংজ্ঞা এবং সূত্র দাঁড় করিয়েছি, যেই সংজ্ঞা এবং সূত্রগুলো বহুবার পরিমার্জন করা হয়েছে, কিন্তু আমরা এখনও জানি না এগুলো আসলেই কী এবং কীভাবে এগুলো তৈরি হয়েছে। অনেকে তত্ত্ব দিয়েছেন। কিন্তু সেগুলো প্রমাণিত নয়। এর মানে হলো, মহাবিশ্বের মুল শক্তি এবং প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে আমরা এখনও সব কিছু জানি না। কিন্তু সব কিছু না জেনেই অনেকে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন যে, মহাবিশ্ব কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে তারা তা বের করে ফেলেছেন, স্রস্টা বলে কিছু নেই!
শুধু তাই না, এই মূল শক্তিগুলোর বাইরেও কিছু শক্তি এবং প্রক্রিয়া রয়েছে, যার কোনো ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারছে না। যেমন, ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি। কোয়ান্টাম ফিজিক্স নামে পদার্থবিজ্ঞানের এক শাখায় শত শত এমন সব সমস্যা আছে, যার ব্যাখ্যা মানুষের জানা নেই। সুতরাং আমরা দেখতে পাই, আমাদের জানা মহাবিশ্বেই অনেক অজানা ব্যাপার রয়েছে, যাদের অস্তিত্ব আমরা দেখতে পাই, কিন্তু সেগুলো কীভাবে এলো, কীভাবে কাজ করে, সেগুলো আর কী কী করতে পারে — তা বিজ্ঞান এখনও বের করতে পারেনি। অথচ এই অপরিপক্ব বিজ্ঞান দিয়েই আমরা কী মানবো, আর কী মানবো না, তা ঠিক করে ফেলেছি।
এই দুই সমস্যার কারণে আধুনিক মানুষের কাছে ধর্ম গাঁজাখুরি মনে হয়। তারা কোনোভাবেই অলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাস করতে পারে না। না পারার কারণ কিন্তু তাদের জ্ঞানের অভাব নয়। যেখানে জ্ঞান তাদের কল্পনার পরিধিকে আরও বিস্তৃত করার কথা, সম্ভাবনার জগতকে আরও ব্যাপক করার কথা, সেখানে অপরিপক্ব জ্ঞান বরং উলটো তাদের কল্পনাকে সীমিত করে দিয়েছে, চিন্তা করার ক্ষমতাকে এক গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে দিয়েছে। তারা স্কুল-কলেজ-ইউনিভারসিটিতে পড়া বিজ্ঞানের বাইরে আর কিছু চিন্তা করতে পারেন না। মহাবিশ্বের যে ধারণা মিডিয়াতে সবচেয়ে বেশি প্রচার হচ্ছে, সেটাই তাদের কাছে একমাত্র সত্য ধারণা, অন্য কোনো বাস্তবতা বা জগত যে থাকতে পারে, সেটা তারা চিন্তা করতে পারেন না।
আমরা কী সত্যিই আছি?
ধরুন আমাদের এই চারপাশের এই জগত, যা কিছুই আমরা দেখছি, সবই আসলে একটি অতি শক্তিশালী কম্পিউটারের মধ্যে চলা কৃত্রিম জগত। আমরা আসলে সবাই একটা গেমের ভেতরে আছি। গেমের ডেভেলপার যা প্রোগ্রাম করেছে, সেই নিয়মগুলো অনুসারেই গেমের এই জগত পরিচালিত হচ্ছে। আমরা সবাই এই নিয়মগুলোর মধ্যে আবদ্ধ। এই নিয়মগুলোর বাইরে আমরা কোনো কিছু করতে পারি না। এই নিয়মগুলোকে আমরা ‘পদার্থ বিজ্ঞান’-এর নিয়ম নাম দিয়েছি। অথচ আমরা যা কিছুই দেখি, শুনি, অনুভব করি, সেগুলো আসলে গেমের ডেভেলপারের প্রোগ্রাম করা কৃত্রিম অভিজ্ঞতা। যেহেতু আমরা গেমের এক একটা চরিত্র, আমাদের পক্ষে কখনই উপলব্ধি করা সম্ভব না যে, আমাদের এই পুরো জীবনটা আসলে একটি কৃত্রিম অভিজ্ঞতা, একজন ডেভেলপারের লেখা প্রোগ্রামের সৃষ্টি। আমরা কোনদিন সেটা জানতে পারব না, যদি না ডেভেলপার আমাদেরকে না জানায়।
এখন এই গেমের ভেতরে হঠাৎ করে একদিন যদি দেখি একটা সমুদ্র দুই ভাগ হয়ে গেলো, আরেকদিন একজনকে আগুনে ফেলার পর সে আর পুড়ে গেল না, আরেকদিন একজন মৃত মানুষ জীবিত হয়ে গেলো, আরেকদিন একদল মানুষ তিনশ বছর একটি গুহায় ঘুমিয়ে থেকে উঠে আসলো — তখন আমাদের কাছে এগুলো অবাস্তব মনে হবে। কিন্তু গেম ডেভেলপারের কাছে এগুলো কোনো ব্যাপার নয়। সে যে প্রোগ্রাম করেছে, তা সে যে কোনো সময় পরিবর্তন করতে পারে। তার কাছে এই সব অলৌকিক ঘটনা ঘটানো খুবই সহজ কাজ, কয়েক লাইন কোড পরিবর্তন করে দিলেই তা হয়ে যায়।
বাস্তবতা আসলে কী?
আমরা এই জগতকে যে ‘আসল জগত’, ‘বাস্তবতা’ বলি, সেই ‘বাস্তবতা’ মানে কী? কাউকে যদি বলা হয় বাস্তবতার সংজ্ঞা দিতে, সে আটকে যাবে। একেক জন একেক সংজ্ঞা দেবে। কেউ বলবে, যা ধরা ছোঁয়া যায়, দেখা যায়, সেটাই বাস্তবতা। আবার কেউ বলবে, যা কিছুই বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব, সেটাই বাস্তবতা, আর যা কিছু বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না, সেটা অবাস্তব। তাহলে বাস্তবতার মানদণ্ড হচ্ছে মানুষের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান।
এখন, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে। আগে যা কিছু বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা যেত না, এখন তার অনেক কিছুই যায়। তার মানে বাস্তবতা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা কীভাবে পরিবর্তন হতে পারে? একদিন কিছু একটা বাস্তব হলে আরেকদিন সেটা অবাস্তব হতে পারে না। তার মানে হলো, বিজ্ঞান বা মানুষের জ্ঞান ব্যবহার করে কোনটা বাস্তব আর কোনটা অবাস্তব নির্ধারণ করাটা কখনই সঠিক মানদণ্ড নয়। মানুষের জ্ঞানের বাইরে অনেক কিছুই থেকে যাবে, যেটা মানুষের কাছে অবাস্তব মনে হবে, কিন্তু সেটা বাস্তবতা হতেই পারে।
আমরা যখন কোনো ঘটনাকে অলৌকিক ঘটনা বলি, আমরা আসলে বলছি যে, আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে যে সীমিত জ্ঞান আছে, সেই জ্ঞান দিয়ে আমরা সেটা কীভাবে হলো তা এখন ব্যাখ্যা করতে পারছি না। — এর বেশি কিছু না। এর মানে এই না যে, সেই অলৌকিক ঘটনা ঘটা কখনও সম্ভব না। হতে পারে আমরা যখন জানবো এই মহাবিশ্ব আসলে একটি উচ্চতর জগতের প্রতিচ্ছবি মাত্র, এই মহাবিশ্বের প্রতিটি কণিকা আসলে উচ্চতর জগতে থাকা কোনো অস্তিত্বের চতুর্মাত্রিক (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, সময়) প্রতিচ্ছবি মাত্র, একটি হলোগ্রাম, যা কিনা আজকে অনেক বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন (দেখুন Holographic Principle, M-Theory, String Theory)। এই সব তত্ত্ব অনুসারে—যার কিছু পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে—আমরা আসলে দেওয়ালে পড়া ছায়া মাত্র। আমাদের আসল অস্তিত্ব আছে একটি ঘরের মধ্যে। সেই ঘর আছে উচ্চতর মাত্রায়। সেই ঘরের দেওয়ালে পড়া চতুর্মাত্রিক ছায়া হচ্ছে এই মহাবিশ্ব। আমরা যা কিছুই দেখতে, শুনতে, উপলব্ধি করতে পাই, বিজ্ঞান যা কিছুই পর্যবেক্ষণ করতে পারে, তার সব কিছুই দেওয়ালে পড়া ছায়া।
তাহলে আমরা দেখবো বিজ্ঞানের নিয়মের বাইরে অনেক কিছুই ঘটা সম্ভব, কারণ সেই উচ্চতর জগত আমাদের জানা বিজ্ঞানের নিয়ম মেনে চলে না। সেই উচ্চতর জগতে কলকব্জা নাড়লে এই মহাবিশ্বে ঘটনা ঘটে। যেমন, আমরা যখন আলোর বিপরীতে হাত নাড়ালে হাতের ছায়া নড়ে, ঠিক সেভাবে সেই অন্য জগতে ঘটা ঘটনাগুলোর ছায়া এই মহাবিশ্বে আমরা দেখতে পাই। আমাদের কাছে এই মহাবিশ্বে যা কিছু অলৌকিক মনে হয়, সেই উচ্চতর জগতে সেটা স্বাভাবিক ব্যাপার। সেই উচ্চতর জগতের নিয়ন্ত্রণ যার হাতে রয়েছে, সে সেখানে কিছু করলে, তা এই মহাবিশ্বে প্রতিফলিত হয়। বেশিভাগ সময় এই মহাবিশ্বের মধ্যে প্রতিফলন হওয়া ঘটনা আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়, কিন্তু অনেক সময় অস্বাভাবিক মনে হয়। আমরা তখন তাকে অলৌকিক ঘটনা বলি। কিন্তু অলৌকিক ঘটনা বলে আসলে কিছু নেই। এটা শুধুই আমাদের ব্যাখ্যা করার মত জ্ঞানের অভাব।
যদি আমরা এটা ঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারি, তাহলে এরপরের আয়াত বোঝাটাও আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে—
আর যখন ইব্রাহিম বললেন, “ও আমার রাব্ব, আমাকে দেখান কীভাবে আপনি মৃতকে আবার জীবন দেন।” আল্লাহ বললেন, “তুমি কি বিশ্বাস করো না?” তিনি বললেন, “অবশ্যই করি! তবে শুধুই আমার মনকে শান্ত করার জন্য।” আল্লাহ বললেন, “তাহলে চারটি পাখি নাও, তাদেরকে তোমার প্রতি পোষ মানাও। তারপর প্রতিটি পাহাড়ে তাদের টুকরো রেখে আসো। তারপর তাদেরকে ডাক দাও। তারা তোমার কাছে ছুটে আসবে। জেনে রেখো, আল্লাহর মহাক্ষমতাশীল এবং তিনি মহাপ্রজ্ঞাবান।” [আল-বাক্বারাহ ২৬০]
এই আয়াতে আমরা আবারো দেখতে পাই, হারিয়ে যাওয়া মৃত দেহ থেকে আল্লাহ تعالى আবার কীভাবে আমাদেরকে আগের অবস্থায় নিয়ে আসবেন, সেটা যুগ যুগ থেকে মানুষের কাছে এক বিস্ময় ছিল। নবী ইব্রাহিম عليه السلام , যার আল্লাহর تعالى প্রতি বিশ্বাসের কোনো তুলনা হয় না, তিনিও কৌতূহল সংবরণ করতে না পেরে আল্লাহর تعالى কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কীভাবে আল্লাহ تعالى এটা করবেন? এখান থেকে আমরা আবারো শিক্ষা পাই যে, আল্লাহর تعالى সৃষ্টি নিয়ে কৌতূহল থাকাটা দোষের না, তবে দোষের হলো কৌতূহল মেটাতে না পারলে অবিশ্বাস করা।
মৃত দেহ পচে গলে হারিয়ে যাওয়ার পর আবার কীভাবে জীবিত হবে, তা বোঝার জন্য আমরা আবারো উচ্চতর জগতের ছায়ার উপমা দিতে পারি। যখন এই মহাবিশ্বে আমার দেহ গুড়া গুড়া হয়ে মাটিতে মিশে হারিয়ে যাচ্ছে, সেটা শুধুই আমার ছায়ার উপর হচ্ছে, আমার অস্তিত্বের চারটি মাত্রার উপর হচ্ছে। ‘আসল আমি’ আছি উচ্চতর জগতে, যেখানে আমার আরও কয়েকটি মাত্রা আছে। সেই ‘আসল আমি’র মাত্রায় কিছু পরিবর্তন করলেই হয়ত এই জগতে আমার চতুর্মাত্রিক ছায়া আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে, আমার মৃত দেহ আবার জীবিত হয়ে যায়। এটা শুধুই একটা সম্ভাবনা, এমন না যে, এটা বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত। কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে, বিজ্ঞান আজকে আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধারণাকে আমূলে পালটে দিয়েছে। আগে আমরা যে ব্যাপারগুলোকে গাঁজাখুরি বলে উড়িয়ে দিতাম, আজকে আমরা বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণেই সেগুলোকে পুরোপুরি উড়িয়ে না দিয়ে বিবেচনা করার সুযোগ পাচ্ছি।
সূত্র:
[১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর। [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ। [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি। [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী। [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি। [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী। [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স