কুরআনের কথা

এই সব লোকেরা যেন প্রার্থনার জায়গাগুলোতে প্রবেশ না করে — আল-বাক্বারাহ ১১৪

মসজিদে বোর্ড মিটিং চলছে। চৌধুরী সাহেব সভাপতি। ইমাম সাহেব তাকে বললেন, “ভাইসাহেব, এলাকার একটি গ্রুপ আগামী শুক্রবার এই মসজিদে তাওহীদের উপর একটি কনফারেন্স করার জন্য আবেদন করছে। সৌদি আরব থেকে বিখ্যাত আলেম এসেছেন তাদের কনফারেন্সে বক্তব্য দেওয়ার জন্য। আমরা কি তাদেরকে ব্যবস্থা করে দিতে পারি?”

চৌধুরী সাহেব বললেন, “আপনি কি ওই সালাফি গ্রুপের কথা বলছেন? প্রশ্নই ওঠে না। এটা হানাফি মসজিদ। আমরা এখানে ওই সব সৌদি ওয়াহাবি, সালাফিদের প্রশ্রয় দেই না। ওদেরকে অন্য কোনো কনফারেন্স সেন্টার ভাড়া করতে বলেন।”

ইমাম সাহেব চুপসে গেলেন। তিনি বললেন, “আচ্ছা, তাহলে এই শুক্রবার এলাকার তরুণরা বিকেলে এসে রাসুলের জীবনী নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছিল। ওদেরকে আসতে বলি?”

চৌধুরী সাহেব বললেন, “না, মসজিদ হচ্ছে শান্তিতে নামাজ পড়ার জায়গা। এখানে কোনো আলোচনা, সভা, অনুষ্ঠান, কনফারেন্স করার জায়গা না। এমনিতেই মসজিদ পরিষ্কার রাখার জন্য পাঁচটা লোক রাখতে হয়। এই সব অনুষ্ঠান করলে মসজিদের মেরামত, পরিষ্কারের পেছনে কী পরিমাণের খরচ করতে হবে জানেন? আর এই সব তরুণদেরকে মসজিদে ঘন ঘন ঢুকতে দিলে ডিজিএফআই এর লোকজন আমাদের উপর নজর রাখা শুরু করবে। মনে করবে আমরা এদেরকে জিহাদের ট্রেইনিং দিচ্ছি। অযথা ঝামেলা বাড়াবেন না।”

এই ধরনের মানসিকতা এতটাই জঘন্য যে, কু’রআনে এক ভয়ঙ্কর আয়াত রয়েছে এই ব্যাপারে—

ওর চেয়ে বড় অন্যায়কারী আর কে হতে পারে, যে প্রার্থনার জায়গায় আল্লাহর تعالى নাম নিতে বাঁধা দেয়? সেগুলো বিরান করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে? এই সব লোকেরা প্রার্থনার জায়গাগুলোতে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় ছাড়া প্রবেশ করার যোগ্য নয়। ওদের জন্য এই দুনিয়াতে রয়েছে অপমান-লাঞ্ছনা, এবং আখিরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি। [আল-বাক্বারাহ ১১৪]

নারীদের মসজিদে যেতে নিষেধ

মসজিদে আল্লাহর تعالى নাম নিতে বাঁধা দেওয়ার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো আমাদের সমাজে নারীদেরকে মসজিদে যেতে না দেওয়া। মসজিদগুলোতে যথেষ্ট জায়গা থাকার পরেও আল্লাহর تعالى অনুগতাদেরকে আল্লাহর تعالى ঘরে গিয়ে আল্লাহর تعالى নাম যেন নিতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করে রাখা হয়। এর কারণ হিসেবে যে অজুহাত দেখানো হয় তা হলো: আগেকার আমলে ইসলামের শাসন ছিল, নারীদের নিরাপত্তা ছিল, তাই তারা মসজিদে যেতে পারতো। আজকাল ইসলামের শাসন নেই, নারীদের বাইরে কোনও নিরাপত্তা নেই, বেহায়াপনার সুযোগ বেশি, তাই নারীদেরকে মসজিদে যেতে দেওয়ার দরকার নেই।

কী অদ্ভুত যুক্তি! যারা এই যুক্তি দেখান, তাদেরই স্ত্রী, মেয়েরা প্রতিদিন স্কুল-কলেজ-ইউনিভারসিটিতে যাচ্ছে, কাঁচা বাজারে, শপিং সেন্টারে যাচ্ছে, মাঠে হাঁটতে যাচ্ছে। সেগুলো করতে কোনও সমস্যা নেই। যত সমস্যা মসজিদে গেলে!

আগেকার আমলে রাস্তায় কোনও বাতি ছিল না। অনেক গলি, নদী-নালা, ময়লা পার হয়ে মহিলারা রাতের অন্ধকারে মসজিদে যেতেন ঈশা, ফজরের নামাজ পড়তে। তাও আবার এমন একটা সমাজে, যেখানে বেশিরভাগ মানুষ কয়েকদিন আগেও ইসলামের আলো গ্রহণ করার আগে ছিলেন কাফির, মুশরিক, মদখোর, যৌনাসক্ত, বর্বর সব মানুষ। তারা নারীদেরকে কোনও সন্মান দেওয়া তো দূরের কথা, নিজের মেয়ে শিশুদেরকে জীবন্ত পুঁতে মেরে ফেলত। সেরকম একটা সমাজে মহিলাদের মসজিদে নামাজ পড়তে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, আর আজকে আমরা বিংশ শতাব্দীতে রাস্তা ভর্তি লাইট, গলিতে গলিতে দারওয়ান, প্রত্যেক বাসার গেঁটের সামনে সিকিউরিটি গার্ড থাকতে মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে দিতে ভয় পাই।

সাড়ে সাতশ বছর আগে লেখা কুরতুবির তাফসিরে রয়েছে—

আমাদের উলামারা বলেছেন, এই আয়াত থেকে আইনগত সমর্থন পাওয়া যায় যে, কোনও মহিলাকে ফরয হাজ্জ করতে যেতে দিতে বাঁধা দেওয়া যাবে না, এমনকি যদি তার কোনও মাহরাম নাও থাকে। একইভাবে কোনও মহিলাকে মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে দিতে বাঁধা দেওয়া যাবে না, যদি না নিশ্চিতভাবে অনৈতিক কিছু ঘটার সম্ভাবনা না থাকে।[কুরতুবি][১৪]

মসজিদে নামাজ পড়তে বা অন্য কোনও ইবাদতে সমস্যার সৃষ্টি করাও এই আয়াতের নিষেধের মধ্যে পড়ে। যেমন, উচ্চস্বরে গান বাজানো, বিশেষ করে ঈশার নামাজের সময় পাড়া ফাটিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যান্ডের গান বাজানো, মসজিদের পাশে পটকা ফুটানো, নামাজের সময় কন্সট্রাকশনের কাজ করে নামাজে সমস্যা করা, এমনকি কেউ একজন নফল নামাজ পড়ছে, আর অন্য একজন কোনায় বসে জোরে কু’রআন তিলাওয়াত করে নামাজে সমস্যা করছে — এগুলো সবই “ওর চেয়ে বড় অন্যায়কারী আর কে হতে পারে, যে প্রার্থনার জায়গায় আল্লাহর تعالى নাম নিতে বাঁধা দেয়?” —এই নিষেধের আওতায় পড়ে।[উসমানী][৪]

মুসলিমদের উপাসনালয়ের প্রতি দায়িত্ব

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى মাসাজিদাল্লাহি مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ বলে আল্লাহর تعالى ইবাদত করার যে কোনো জায়গাকে বুঝিয়েছেন — সেটা মসজিদ হোক, কোনো হালাক্বা সেন্টার হোক, বা কোনো ভাড়া করা ফ্লাট। যেখানেই নিয়মিত আল্লাহর تعالى ইবাদত করা হয়, সেটাই মাসাজিদাল্লাহ। মাসাজিদ শব্দের আভিধানিক অর্থ: সিজদা করার জায়গা। সেটা আমাদের বাসার জায়নামাজ থেকে শুরু করে সৌদি আরবের কা’বা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সব প্রার্থনা করার জায়গাতে যদি কেউ কোনো হালাক্বা করতে চায়, জিকর করতে চায়, তাহলে সেটা আল্লাহর تعالى নাম নেওয়া হয়। এধরনের কাজে বাধা দেওয়া আল্লাহর تعالى দৃষ্টিতে এক জঘন্য কাজ। যারা এরকম করবে, তারা শুধু এই দুনিয়াতেই অপমানিত হবে না, আখিরাতেও তাদের জন্য রয়েছে ভয়ঙ্কর শাস্তি।

মুসলিমদের দায়িত্ব হচ্ছে অন্য উপাসনালয়গুলো রক্ষা করা, সেটা মসজিদ, চার্চ, সিনাগগ যাই হোক না কেন। সেসব উপাসনালয়ে মানুষদের যাওয়া আসায় কোনও ধরনের বাঁধা দেওয়ার অধিকার মুসলিমদের নেই। এর চমৎকার উদাহরণ রয়েছে রাসুলের عليه السلام জীবনীতে। ১০ হিজরিতে তিনি খ্রিস্টানদের একটি দলকে মসজিদে নববিতে থাকতে দেন। তাদের উপাসনার ব্যবস্থা করে দেন। মসজিদে বসেই তারা যীশুর ইবাদত করছিল, আল্লাহর تعالى সাথে শিরক করছিল! কিন্তু তারপরেও তাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হয়নি, বাঁধা দেওয়া হয়নি, কোনও ধরনের অপমান করাও হয়নি।[ইবন সা’দ][২]

মসজিদ হওয়ার কথা সমাজের প্রাণ কেন্দ্র

আমাদের অনেকের মধ্যে একটা ধারনা আছে: মসজিদ হচ্ছে শুধু নামাজ, জিকির, ই’তিকাফ করার জায়গা। অন্য কোনো কাজের জন্য মসজিদ নয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মসজিদ হওয়ার কথা মুসলিমদের জন্য একটি কমিউনিটি সেন্টার, কনফারেন্স সেন্টার, লাইব্রেরি, আদালত, স্কুল, ইয়ুথ ক্লাব, মেয়েদের ক্লাব। কেউ হালাল উপায়ে বিয়ে করতে চান? মসজিদে সবাইকে অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিন। কেউ এলাকার উন্নয়নের জন্য আলোচনা করতে চান? মসজিদে সভা ডাকুন। কেউ এলাকার কোনো ঝামেলা নিয়ে মুরব্বিদের সাথে সালিস করতে চান? মসজিদে সমাবেশ করুন। কেউ তার সন্তানদের কু’রআন, হাদিস শেখাতে চান? মসজিদে পাঠিয়ে দিন। কেউ ঘরের মেয়েদেরকে ইসলামের উপর কোর্স করাতে চান? মসজিদে আয়োজন করুন।

এভাবে একটি এলাকার প্রাণকেন্দ্র হওয়ার কথা মসজিদ, যেখানে সকল বর্ণ, গোত্র, পেশার মুসলিমরা প্রতিদিন নানা উদ্দেশ্যে একসাথে হন, নামাজের সময় হলে নামাজ পড়েন, নামাজ শেষে মসজিদ থেকে না বেরিয়ে, মসজিদে থেকেই বিভিন্ন বৈষয়িক ব্যাপারে একসাথে আলোচনা-কাজ করেন, সামাজিক অনুষ্ঠান করেন। ব্যবসায়ীরা মসজিদের বাইরে দোকান বসিয়ে কেনাবেচা করেন।

কিন্তু দুঃখজনক ভাবে আমরা মসজিদগুলোকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা বানিয়ে, নামাজের সময় ছাড়া বাকি সময় তালা ঝুলিয়ে দেই। যার ফলে আমাদের সমাজ আজকে মসজিদ কেন্দ্রিক না হয়ে, মসজিদ বিমুখ সমাজ হয়ে গেছে। মসজিদের পবিত্র আবহে হালাল উপায়ে বিয়ে না করে, বিয়ে হয় কমিউনিটি সেন্টারে, যেখানে হারাম কাজের সব ব্যবস্থা করে দেওয়া থাকে। মসজিদে আল্লাহর تعالى ভয়ে আদলত না করে, আদালত হয় এমন জায়গায় যেখানে আল্লাহর تعالى থেকে আমলা-ক্যাডারদের ভয় থাকে বেশি।  মসজিদের লাইব্রেরিতে বসে নীরবে নিভৃতে বই না পড়ে, আজকে কিশোর-তরুণরা যায় পাবলিক লাইব্রেরি, সাইবার ক্যাফেতে, যেখানে তাদের খারাপ কাজে সুড়সুড়ি দেওয়ার সব ব্যবস্থা করা থাকে।

আমাদের কিশোর-তরুণ সমাজের অবক্ষয়ের একটি বড় কারণ হলো: তাদেরকে মসজিদ থেকে দূরে রাখা। কিশোর-তরুণদেরকে আমরা যদি মসজিদের উঠানে, পাশের মাঠে খেলতে না দেই, মসজিদের সাথেই আধুনিক লাইব্রেরি, সর্বাধুনিক কম্পিউটারের ব্যবস্থা করে না দেই, তাহলে তারা দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাবে রেস্টুরেন্টে, ভিডিও গেমের দোকানে, সাইবার ক্যাফেতে। সে সব জায়গা উদ্দেশ্যমূলক ভাবে তৈরি করা হয়েছে তাদেরকে দুনিয়ার প্রতি আসক্ত করে দেওয়ার জন্য, তাদের পকেটের টাকা শেষ করার জন্য, তাদেরকে অশ্লীল কাজ অবাধে করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। যদি আমরা মসজিদগুলোকে কিশোর-তরুণদের জন্য সুন্দর করে সাজাতাম, তাহলে একজন কিশোর-তরুণদের দৈনন্দিন রুটিন কত সুন্দর হত দেখা যাক—

যখন মসজিদ কিশোর-তরুণদের জন্য খুলে যায়

হাসান ভোরে উঠে ওযু করতে গেল। ফজরের আজান দিয়েছে। নামাজ পড়তে যেতে হবে। নামাজ শেষে সে মসজিদের পাশে লাইব্রেরিতে গেল ইউনিভারসিটির এসাইনমেন্ট করতে। মসজিদের লাইব্রেরিতে আধুনিক কম্পিউটারগুলো ইউনিভারসিটির কম্পিউটারগুলো থেকে অনেক ফাস্ট, শান্তিতে কাজ করা যায়। তাছাড়া এই লাইব্রেরিতে গল্পগুজব, হাসাহাসি কম, মেয়েরা সামনে ঘুরে বেড়ায় না। শান্তিতে পড়া যায়। আর এয়ারকন্ডিশন্ড রুম, নরম গদির চেয়ার, পাশেই চায়ের ব্যবস্থা তো আছেই…।

আটটা বাজতে হাসান মসজিদের ক্যাফেতে গেল সকালের নাস্তা করতে। গরম পরোটা আর সবজির সাথে হানবালি বন্ধুদের সাথে তাদের মাযহাব নিয়ে কিছু জ্বালাময়ী আলোচনা করা যাবে। নাস্তা শেষে হাসান কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ইউনিভারসিটির দিকে। মসজিদ থেকে বের হলেই কেমন যেন অস্থির লাগে। আবার কখন ফিরে আসবো, তার জন্য একধরনের আকুলতা কাজ করে। বাইরের যত সব হইচই, বেহায়াপনা, গালাগালি, একে অন্যের বদনাম, ফালতু খেলার স্কোর, কোন অভিনেত্রী কবে কাকে ডিভোর্স দিল, রাজনীতির ফালতু জ্ঞান কপচানো — এইসব অসুস্থ কথাবার্তায় কেমন যেন দম আটকে আসে। একারণেই ইউনিভারসিটি শেষ হলেই হাসান যত তাড়াতাড়ি পারে মসজিদে ছুটে যেতে।

ক্লাশ শেষে হাসান মসজিদে ফিরে আসলো। আসরের নামাজের পর মসজিদের পাশে ফুটবল ম্যাচ হবে। আজকে হবে ‘সালাফি বনাম হানাফি’ সেমিফাইনাল। টানটান উত্তেজনা কে জিতবে, এবং আগামীকালকে সুফি দলের সাথে ফাইনাল খেলবে। পুরো খেলায় কেউ কোনও চিৎকার, গালাগালি করল না, কারণ পাশেই মসজিদে মুরব্বিরা হালাক্বা করছেন, ক্বারি সাহেব সুমধুর স্বরে কু’রআনের তিলাওয়াত প্র্যাকটিস করছেন।

মাগরিবের আজান দিল। আজকের মত খেলা শেষ। ওযু করে সবাই জামাতে দাঁড়িয়ে পড়ল। নামাজ শেষে হাসান বাসায় চলে গেল সুন্দর কাপড় পড়ে আসতে এবং বাবা-মা, ভাইবোনকে নিয়ে মসজিদে আসতে। আজকে ঈশার পর ওর ছোটবেলার বন্ধু হাসিবের বিয়ের অনুষ্ঠান হবে মসজিদে। কী খুশির ব্যাপার! অনুষ্ঠানের শুরুতে কু’রআন তিলায়াতের সন্মান আজকে তার। গত দুইমাস ধরে সে শেখ মিশারি রশিদের তিলাওয়াত হুবহু নকল করা প্র্যাকটিস করেছে। বাবামা, ভাইবোনকে কখন সেটা শোনাবে, এই খুশিতে হাসান অস্থির হয়ে আছে।

আমরা যদি মসজিদগুলোকে কিশোর-তরুণদের জন্য খুলে না দেই, তাহলে হাসানদের দৈনন্দিন রুটিন হয় এরকম—

মসজিদ যখন কিশোর-তরুণদের জন্য বন্ধ থাকে

রাত তিনটা পর্যন্ত ভিডিও গেম খেলে, সকাল নয়টার সময় হাসান লাফ দিয়ে ঘুমের থেকে উঠলো। ‘ধুর শালা, আজকেও এসাইনমেন্টটা করলাম না।’ কোনোমতে একটা পাউরুটি মুখে দিয়ে দৌড়িয়ে বের হয়ে গেল ইউনিভারসিটির দিকে। ইউনিভারসিটির ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে গিয়ে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে পড়ার নাম করে হাসাহাসি, খোঁচাখুঁচি, গায়ে-গায়ে ঢলাঢলি। তারপর বিকাল বেলা সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে একঘণ্টা … দেখা। বাসায় এইসব দেখার প্রশ্নই উঠে না, কখন বাবা-মা ঘরে ঢুকে পড়ে। তারপর রেস্টুরেন্টে যাওয়া। বন্ধু-বান্ধবীর সাথে আরেকচোট আড্ডা, শ’খানেক টাকা উড়ানো। ইংল্যান্ডের কাছে অস্ট্রেলিয়া এভাবে না হারলেও পারত; শান ছবিতে নায়কের মারামারি জ্যাকি চ্যানের নকল হয়ে গেছে; কারিনা কীভাবে শাহরুখের সাথে এই কাজ করল — এই সব নিয়ে তুমুল বিতর্ক। অনেক তর্ক বিতর্ক শেষে বিজয় দর্পে রাত নয়টায় বাড়িতে ফিরে আসা। বাবা-মা জিজ্ঞেস করলে উত্তর, “অনেক এসাইনমেন্ট ছিল।” টিভি দেখতে দেখতে কোনোমতে রাতের খাবার খেয়ে ঘরে ঢুকে ফেইসবুকে ঝাঁপিয়ে পড়া। বারোটার দিকে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে, দরজা লাগিয়ে ভিডিও গেম খেলা শুরু। ভিডিও গেমে আজকাল যেসব কাজ করতে হয়, সেটা কেউ দেখে ফেললে অনেকক্ষণ মাথা চাবাবে। রাত তিনটা পর্যন্ত হাজারো মানুষের নাড়িভুঁড়ি বের করে, কোপাকুপি করে হাতপা ছিন্নভিন্ন করে, নাইট ক্লাবের গার্লদের সাথে … করে,  রক্তাক্ত লাল চোখে ঢুলতে ঢুলতে, কিছুক্ষণ বান্ধবীকে এসএমএসে সুড়সুড়ি দিয়ে বিছানায় বেহুঁশ হয়ে যাওয়া। পরদিন সকাল নয়টায় আবার লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে …

কী দুঃখজনক জীবন আজকের কিশোর-তরুণদের!

নতুন আর্টিকেল বের হলে জানতে চাইলে কু’রআনের কথা ফেইসবুক পেইজে লাইক করে রাখুন—

Exit mobile version