তুমি কি ওকে দেখনি, যে ইব্রাহীমের সাথে তার রাব্ব সম্পর্কে তর্ক করেছিল, যেখানে কিনা আল্লাহ তাকে রাজত্ব দিয়েছিলেন? যখন ইব্রাহিম বলল, “আমার রাব্ব হচ্ছেন তিনি, যিনি জীবন দেন, এবং মৃত্যু দেন।” তখন সে বলল, “আমি জীবন দেই, আমি মৃত্যু দেই।” তখন ইব্রাহিম বলল, “আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিকে উদয় করেন, তুমি তাহলে সেটাকে পশ্চিম দিকে উদয় করাও দেখি?” তখন সেই অস্বীকারকারী হতবুদ্ধি হয়ে গেল। আল্লাহ অন্যায়কারী মানুষদের পথ দেখান না। [আল-বাক্বারাহ ২৫৮]
“তুমি কি ওকে দেখনি, যে ইব্রাহীমের সাথে তার রাব্ব সম্পর্কে তর্ক করেছিল?”
আল্লাহ تعالى কল্পনা করতে বলছেন সেই রোমহর্ষক ঘটনার কথা, যখন নবী ইব্রাহিম عليه السلام তখনকার প্রতাপশালী রাজা নমরুদ-এর দরবারে গিয়ে তার মুখের উপর তাকে রাব্ব বলে মানতে অস্বীকার করেছিলেন।[১২] রাজা নমরুদ নিজের বিশাল রাজত্ব এবং ক্ষমতায় এতটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিল যে, সে নিজেকে বিশ্বজগতের রাব্ব বলে দাবি করতো। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কল্পনা করতে বলছেন সেই দৃশ্যের কথা, যেখানে এরকম একজন ফিরাউন টাইপের রাজা, তার মন্ত্রীসভা, দেহরক্ষী, লোকবল নিয়ে সভার একদিকে বসে আছে, আর অন্যদিকে প্রতিপক্ষে দাঁড়িয়ে আছেন নবী ইব্রাহিম عليه السلام একা। তিনি একা সেই অহংকারী প্রতাপশালী রাজার সামনে দাঁড়িয়ে তার ভুল ধরিয়ে দিচ্ছেন, যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করছেন যে, রাজা যা দাবি করছে তা ভুল।
এটা এতটাই সাহসিকতার একটি ঘটনা যে, আল্লাহ تعالى কুর’আনে বলছেন, “তুমি কি ওকে দেখনি?” — অর্থাৎ একবার সেই দৃশ্যের কথা চিন্তা করো। আজকে আমরা অফিসের বসকে চোখের সামনে অন্যায় করতে দেখেও চাকরির ভয়ে কিছু বলি না। আত্মীয়স্বজনকে নিয়মিত ইসলামের নিয়ম ভাঙতে দেখেও কিছু বলি না, পাছে যদি সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তাঘাটে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের অসামাজিক কাজ করতে দেখলে, নিজের মত রাস্তা মাপি, ‘কী দরকার খামোখা নিজের সম্মান নষ্ট করে?’ আর সেখানে নবী ইব্রাহিম عليه السلام তখনকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, কেবিনেট মিটিঙে সবার সামনে দাঁড়িয়ে, পুলিশ, আর্মির তোয়াক্কা না করে, প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি বলছিলেন যে, তিনি যা করছেন সেটা অন্যায়। — কুর’আনে দেওয়া এই দৃশ্য থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।
আল্লাহ تعالى সূর্যকে পূর্ব দিকে উদয় করেন, তুমি তাহলে সেটাকে পশ্চিম দিকে উদয় করাও দেখি?
নবী ইব্রাহিম عليه السلام যখন নমরুদকে বললেন যে, তিনি এমন একজনকে রাব্ব মানেন, যিনি জীবন মৃত্যুর মালিক, তখন নমরুদ নিজেকে জীবন মৃত্যুর মালিক বলে দাবি করলো। নবী ইব্রাহিম عليه السلام তখন কিন্তু বলতে পারতেন, “কই? কাউকে জন্ম দিয়ে দেখাও দেখি?” কিন্তু তিনি সেটা না করে বরং অন্য একটা যুক্তি উপস্থাপন করলেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন তিনি অন্য প্রশ্ন করলেন? কেন তিনি আগের যুক্তির ধারাবাহিকতা ধরে রেখে তর্ক করে গেলেন না?
নমরুদ যখন নিজেকে জন্ম মৃত্যুর মালিক বলে দাবি করলো, তখন সে জন্ম মৃত্যু দেওয়াকে নিজের মত বুঝে নিয়ে একজনকে মেরে ফেলে দেখিয়ে দিলো যে, সে মৃত্যু দিতে পারে। আর সে আরেকজনকে মেরে না ফেলে ‘জীবন ভিক্ষা দিয়ে’ দাবি করলে যে, সে জীবন দিতে পারে।[৮][১২][১৪] অবশ্যই নবী ইব্রাহিম عليه السلام জীবন মৃত্যুর মালিক বলতে এটা বোঝাননি। কিন্তু তিনি উপলব্ধি করলেন যে, এভাবে তর্ক করে হবে না। নমরুদ তার তর্ককে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে মানুষকে মেরে ফেলার মত ভয়ংকর কাজ করতেও দ্বিধা বোধ করছে না। নমরুদ তর্ককে কুতর্কে পরিণত করছে। তখন তিনি এমন একটি যুক্তি উপস্থাপন করলেন, যা নিজের ইচ্ছেমত বুঝে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার আছে। বিতর্ক করার সময় প্রতিপক্ষকে সুযোগ দেওয়া যাবে না, যেন সে নিজের ইচ্ছেমত তর্কের বিষয়কে তার সুবিধামত ঘুরিয়ে নিতে পারে। তর্ক করতে হবে এমন সব বিষয়ে, এমন সব যুক্তি দিয়ে, যা সবাই বুঝতে পারে কী বোঝাচ্ছে, এবং যা নিজের সুবিধামত ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব না। নমরুদ যা করেছিল, তাকে বলে Argumentum Ad Baculum — প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য জোর পূর্বক ক্ষমতা, হুমকি, ভয়ংকর ঘটনা ঘটিয়ে নিজের পছন্দ মত উপসংহারে পৌঁছে যাওয়া। এতে করে প্রতিপক্ষ ঘাবড়ে যায়, তার চিন্তার ধারা ভেঙ্গে যায়। আর সে ঠিকভাবে চিন্তা করতে পারে না। এটা মানুষ তখনি কাজে লাগায়, যখন সে জানে তার কাছে জেতার মত যথেষ্ট প্রমাণ বা যুক্তি নেই। তখন সে ভয়ংকর কিছু একটা করে তর্কে জিতে জেতে চায়।
নবী ইব্রাহিম عليه السلام নমরুদের এই ভয়ংকর কাজে ঘাবড়ে না গিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় এমন এক যুক্তি দেখিয়েছেন যে, নমরুদের খেল খতম হয়ে গেছে — “আল্লাহ تعالى সূর্যকে পূর্ব দিকে উদয় করেন, তুমি তাহলে সেটাকে পশ্চিম দিকে উদয় করাও দেখি?”। নমরুদ বুঝতে পারল যে, এই যুক্তি তার পক্ষে ভাঙ্গা কোনোভাবেই সম্ভব না। কারণ সে যদি বলে যে, “আমিই তো সূর্য পূর্ব দিকে উঠাই”, তাহলেও হবে না, কারণ নবী ইব্রাহিম عليه السلام প্রথমেই সেই রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। আর সে যদি উলটো নবী ইব্রাহিমকে বলে যে, “তোমার রাব্বকে বলো সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠাতে” — তাহলে সে নিজেই পরাজয় স্বীকার করে নিল যে, সে রাব্ব না, এবং নবী ইব্রাহীমের রাব্বকে স্বীকৃতি দিয়ে দিলো। তখন যদি নবী ইব্রাহীমের দু’আয় আল্লাহ تعالى সূর্যকে পশ্চিম দিকে উঠান, তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তখন তার রাজত্বের সব মানুষ এই অকল্পনীয় ঘটনা দেখে সন্দেহাতীতভাবে নবী ইব্রাহিমকে অনুসরণ করা শুরু করে দেবে। আর যদি আল্লাহ تعالى নবী ইব্রাহীমের অনুরোধে সূর্য পশ্চিম দিকে না উঠানও, তাহলেও নমরুদ জিততে পারল না, কারণ সে নিজে তা করতে পারেনি। নবী ইব্রাহিম عليه السلام এমন এক যুক্তি দেখালেন যে, নমরুদের আর কোনোভাবেই জেতার সম্ভাবনা নেই।[১৮]
প্রমাণ কী যে আল্লাহ تعالى আছেন?
আজকের যুগের নমরুদরা দাবি করে না যে তারা রাব্ব হয়ে গেছে। বরং তারা দাবি করে যে, বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব অনুসারে: বস্তু এবং শক্তির সৃষ্টির আগে ‘কিছু একটা’ ছিল, যা থেকে সবকিছু এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের চারপাশে যে বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিজগৎ আমরা দেখছি, তার জন্য কোনো বুদ্ধিমান বা ব্যক্তিত্ববান স্রষ্টার কোনো প্রয়োজন নেই। এগুলো সব কিছুই সেই ‘কিছু একটা’ থেকে এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে। এই ধরনের নাস্তিকদের দাবি হচ্ছে: মানুষ নিজে থেকেই চিন্তাভাবনা করে একজন স্রষ্টার ধারণা বের করেছে। যেহেতু মানুষের সীমাবদ্ধতা আছে, মানুষ অনেক কিছুই করতে পারে না, তাই একরকম নিরাকার, অবিনশ্বর, অসীম ক্ষমতা ইত্যাদি যত সব কল্পনাতীত গুণ মানুষ চিন্তা করে বের করতে পারে, তার সবকিছু ব্যবহার করে সে এক স্রষ্টাকে সৃষ্টি করেছে। বাস্তবে আসলে এরকম কোনো স্রষ্টা নেই।
আমাদেরকে প্রথমে একটা ব্যাপার উপলব্ধি করতে হবে যে, আল্লাহ تعالى আমাদেরকে এমন কিছু বিশ্বাস করতে বলেন না, যেটা বিশ্বাস করা খুবই কঠিন ব্যাপার, যার জন্য উচ্চমার্গের দার্শনিক জ্ঞান দরকার, বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব দরকার, প্রযুক্তি দরকার ইত্যাদি। কারণ তাহলে তা সব মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব হবে না। তখন শুধুমাত্র যারা উচ্চশিক্ষিত বা মেধাবী, শুধুমাত্র তারাই পারবেন বুঝতে, সাধারণ অশিক্ষিত মানুষরা আর বুঝতে পারবে না। তাওহীদ এমন একটা ব্যাপার, যা ঠাণ্ডা মাথায় নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করলে, যে কোনো মানুষ বুঝতে পারে যে, সৃষ্টিকর্তা এক, তিনি আমাদের পালনকর্তা, সবকিছুই তাঁর নির্দেশ মত হয়, এবং একারণে শুধুমাত্র তিনিই আমাদের উপাসনার দাবি রাখেন, আর কেউ না। এর জন্য ফিলসফিতে পিএইচডি দরকার নেই। একজন নিরক্ষর কৃষকও এই উপসংহারে আসতে পারে। দরকার শুধু চিন্তা করা।
সৃষ্টির আগে ‘কিছু একটা’ ছিল
কল্পনা করুন: একটা বিশাল খালি ঘর, যার ভেতরটা একদম শূন্য। এর ভেতরে কিছুই নেই। কোনো আলো, বাতাস, পদার্থ, শক্তি, ক্ষেত্র — কিছুই নেই। ভেতরটা হচ্ছে ঘুটঘুটে অন্ধকার, পরম শূন্যতা।
এখন আপনার উদ্দেশ্য হচ্ছে: এই ঘরের ভেতরে কিছু একটা তৈরি করার। কিন্তু শর্ত হচ্ছে: আপনি বাইরে থেকে কিছু ব্যবহার করতে পারবেন না।
আপনাকে বলা হলো: সেই ঘরের ভেতর একটা আগুন জ্বালাতে। আপনি কোনোভাবেই তা করতে পারবেন না, কারণ আগুন জ্বালানোর জন্য যা কিছু দরকার, তা আপনাকে বাইরে থেকে দিতে হবে। কিন্তু আপনাকে শর্ত দেওয়া হয়েছে যে, বাইরে থেকে কিছু আনা যাবে না।
এখন আপনি আজকের যুগের উচ্চশিক্ষিত বিজ্ঞানীদের মত দাবি করতে পারেন যে, আমরা যদি কোটি কোটি বছর অপেক্ষা করি, তাহলে একদিন সেই ঘরের শূন্যতার মধ্যে একটা ক্ষুদ্র কণা, অণু, বা পরমাণু আপনা-আপনিই তৈরি হবে। তারপর আরও কয়েক কোটি বছর পার হলে তা থেকে একসময় তেল, ম্যাচ, কাঠ তৈরি হয়ে একসময় আগুন ধরে যাবে। কিন্তু এই দাবির সমস্যা রয়েছে।
প্রথমত, সময় নিজে থেকে কিছু করে না। কোনো ঘটনা ঘটলে, তা ঘটে সময়ের মধ্যে, কিন্তু সময় সেই ঘটনা ঘটায় না। যেমন, আপনি যদি চুলায় ডাল দিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করেন, তাহলে সেই পনের মিনিট কিন্তু ডাল রান্না করে না, বরং চুলার তাপ ডাল রান্না করে। আপনি যদি চুলা না জ্বালিয়ে চুপচাপ ১৫ মিনিট বসে থাকতেন, তাহলে আপনা-আপনি ডাল রান্না হয়ে যেত না।
সুতরাং আমরা যদি অসীম সময় পর্যন্তও অপেক্ষা করি, সেই ঘরের ভেতরে কিছুই আপনা থেকে সৃষ্টি হবে না। সেটা একটা অত্যন্ত ক্ষুদ্র কণিকা হোক, বা একটা বড় ফুটবল হোক না কেন।
তাহলে এখন প্রশ্ন আসে, যদি কোটি কোটি বছর আগে মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে শূন্যতা বিরাজ করছিল, তাহলে এখনও কেন শূন্যতা নেই? শূন্যতা থেকে তো কোনো কিছু আসতে পারে না। তাহলে তো এখনও শূন্যতা বিরাজ করার কথা? কিন্তু যেহেতু আপনি আছেন এবং আপনি এই আর্টিকেল পড়ছেন, তার মানে দাঁড়ায় এখন শূন্যতা নেই, ‘কিছু একটা’ অবশ্যই আছে। আপনার অস্তিত্ব প্রমাণ করে যে, সৃষ্টি অবশ্যই হয়েছে।
এর মানে দাঁড়ায়: শূন্যতা আসলে কখনই ছিল না। কিছু একটা সবসময় ছিল। এখন প্রশ্ন হলো: সেটা কী? সেটা কি একটা কণিকা ছিল? একধরনের শক্তি? একটা না হয়ে অনেক কিছু কি ছিল?
সেই ‘কিছু একটা’ কেমন?
আমাদের কল্পনার ঘরে ফেরত যাই। ধরে নেই: সেই ঘরে পাঁচটি বল রয়েছে। সেই বলগুলো চিরকাল থেকে সেই ঘরের ভেতরে ছিল। এখন আমরা যদি আরও দশ বছর অপেক্ষা করি, তাহলে কি আরেকটা বল তৈরি হবে? যদি কয়েক কোটি বছর অপেক্ষা করি, তাহলে কি হবে? হবে না। যদি পাঁচটি বলের বদলে কোটি কোটি বল থাকে, তাহলে কি সেই বলগুলো থেকে আরেকটি বল সৃষ্টি হবে? হবে না। সুতরাং সংখ্যা এখানে কোনো ব্যাপার নয়। সময় কোনো ব্যাপার নয়। নিষ্প্রাণ বস্তু কখনো অন্য কোনো বস্তুর জন্ম দেবে না, তার সংখ্যা যতই হোক না কেন এবং যতই সময় দেওয়া হোক না কেন।
সুতরাং সেই ঘরের শূন্যতার মধ্যে যদি ‘কিছুর’ অস্তিত্ব থাকে, তবে সেটি হতে হবে এমন একটা কিছু, যা নিষ্প্রাণ নয়। আবার সেটা কোনো প্রাণীও হতে পারবে না, কারণ কোনো প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য আলো, বাতাস, পানি, খাবার ইত্যাদি অনেক কিছুই দরকার হয়। সুতরাং সেটাকে এমন একটা কিছু হতে হবে, যা নিষ্প্রাণ নয়, আবার আমাদের জানা কোনো ধরনের প্রাণের সাথে তার কোনো মিল নেই। সেটা এমন কিছু যার কোনো তুলনা আমাদের জানা নেই।
এতক্ষণে আমরা যা জানলাম, তা থেকে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়— প্রথমত, সৃষ্টির আগে যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে সেটি হবে এমন একটি কিছু, যার অস্তিত্বের জন্য অন্য কিছুর দরকার নেই। যেটি একটি একক সত্তা। সেটি অমুখাপেক্ষী, অর্থাৎ কোনো কিছুর উপর সেটি নির্ভরশীল নয়।
দ্বিতীয়ত, সেটির ক্ষমতা থাকতে হবে অন্য কোনো কিছুর সৃষ্টি করার। কারণ যদি সেটির সৃষ্টি করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে আমাদের চারপাশে এই যে বিশাল সৃষ্টিজগৎ, এর কিছুরই অস্তিত্ব থাকার কথা নয়। যেহেতু আপনি, আমি আছি, তাই সৃষ্টির আগে ‘কিছু একটা’ ছিল, যার সৃষ্টি করার ক্ষমতা রয়েছে।
তৃতীয়ত, সেই ‘কিছু একটার’ অকল্পনীয় ক্ষমতা থাকতে হবে। আজকে আমরা একটি অতি ক্ষুদ্র কণিকা তৈরি করতে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করে যন্ত্র বানিয়ে, লক্ষ মেগাওয়াট শক্তি খরচ করি। এই পরিমাণ শক্তি যদি একটি মাত্র অতি ক্ষুদ্র কণিকা তৈরি করতে লাগে, তাহলে আপনাকে তৈরি করতে যে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কণিকা দরকার, তার জন্য অকল্পনীয় পরিমাণ শক্তির দরকার হবে। আপনি, আমি, এই বিশাল পৃথিবী, লক্ষ পৃথিবীর সমান বিরাট সূর্য, কোটি কোটি সূর্যের মত বিশাল তারা দিয়ে ভরা প্রকাণ্ড ছায়াপথ, এরকম কয়েকশ কোটি প্রকাণ্ড ছায়াপথ সহ মহাবিশ্বের সবকিছু সৃষ্টি করতে কী পরিমাণ শক্তির দরকার?
সুতরাং এই পর্যায়ে এসে আমরা কয়েকটি ব্যাপার প্রমাণ করলাম—
সৃষ্টির আগে ‘কিছু একটা’ ছিল।
সেই ‘কিছু একটা’র অকল্পনীয় ক্ষমতা।
সেই ‘কিছু একটা’র ‘অন্য কিছু’ সৃষ্টির ক্ষমতা আছে।
সেই ‘কিছু একটা’ অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল নয়।
সেই ‘কিছু একটা’ ‘অন্য কিছু’ অবশ্যই সৃষ্টি করেছে।
অন্য কোনো কিছুই সেটার সাথে তুলনা করার যোগ্য নয়।
সেই ‘কিছু একটা’ আসলে…
এখন চলুন সৃষ্টির আগে চলে যাই। শুধুই সেই অবিনশ্বর জিনিসটা রয়েছে। আর কিছুই নেই। এখন যদি অন্য কোনো কিছুর সৃষ্টি করতে হয়, তাহলে সেটা শুধুমাত্র সেই অবিনশ্বর জিনিসটাকে দিয়েই সম্ভব। আর অন্য কোনো কিছু নেই, যা কিনা তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা সেই ‘কিছু একটা’কে উদ্বুদ্ধ করতে পারে অন্য কিছু সৃষ্টি করার জন্য।
এখন সেই ‘কিছু একটা’র অন্য কোনো কিছু সৃষ্টি করার কোনোই প্রয়োজন নেই, কারণ সে নিজে থেকেই অস্তিত্ব নিয়ে থাকতে পারে এবং সবসময়ই ছিল। সেটার ক্ষমতা অকল্পনীয়। তার কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। যেহেতু তার কোনোই প্রয়োজন নেই অন্য কোনো কিছু সৃষ্টি করার, তার মানে হলো: যদি কিছু সৃষ্টি হয়, তাহলে সেটা সৃষ্টি হয়েছে সেই অবিনশ্বর ‘কিছু একটা’র সক্রিয় ‘ইচ্ছা’র কারণে।
এখন আমরা একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার উপলব্ধি করলাম: সেই ‘কিছু একটা’র ‘ইচ্ছা’ আছে। সুতরাং সেটা কোনো ‘জিনিস’ নয়, সেটা ‘কেউ একজন’ — কোনো চেতন সত্তা। আমরা আর সেটাকে ‘সেটা’ বলতে পারব না, বলতে হবে ‘তিনি’।
এখন অনেকে দাবি করতে পারেন: যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে, সেটা তো দৈবক্রমে, বা ঘটনাচক্রেও সৃষ্টি হতে পারে? ‘ইচ্ছা’-এর দরকার নাও থাকতে পারে? যদি ‘ইচ্ছা’র দরকার না থাকে, তাহলে আর কোনো চেতন সত্তার দরকার নেই। তখন সেটা অচেতন ‘কোনো জিনিস’ হতেই পারে।
যেহেতু ‘দৈবক্রম’ বা ‘ঘটনাচক্র’ হচ্ছে ‘অন্য কিছু’ একটা, যা সেই অবিনশ্বর জিনিসটা নয়, এবং আমরা এর আগে দেখেছি যে, ‘অন্য কিছু’ সৃষ্টি হওয়া শুধুমাত্র সেই অবিনশ্বর জিনিসটার পক্ষেই করা সম্ভব, সুতরাং এই ‘দৈবক্রম’ বা ‘ঘটনাচক্র’ সেই অবিনশ্বর জিনিসটাকেই সৃষ্টি করতে হবে। ‘দৈবক্রম’ বা ‘ঘটনাচক্র’ কখনই সেই অবিনশ্বর জিনিসটার বাইরে নিজে থেকেই অস্তিত্ব নিয়ে থাকতে পারে না।
তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম অবিনশ্বর সত্তাটি একটি অতি পরমাণু, সেটি কোনো চেতন সত্তা নয়। সেটির সৃষ্টি করার ক্ষমতা রয়েছে। সেই অণুটির যতই ক্ষমতা থাকুক, যত কিছুই সৃষ্টি করার সামর্থ্য থাকুক না কেন, সৃষ্টি করার ‘ইচ্ছা’ না থাকলে সেই অণুটা চিরজীবন যেমন ছিল, তেমনই থাকবে। যেহেতু এর অন্য কোনো কিছু সৃষ্টি করার কোনোই প্রয়োজন নেই, সেটি কখনই কিছু সৃষ্টি করবে না। কিন্তু অন্য কিছু অবশ্যই সৃষ্টি হয়েছে, কারণ আপনি-আমি আজকে আছি।
সুতরাং দৈবক্রম, বা ঘটনাচক্র বলে কিছু নেই। থাকলে সেটা সেই অবিনশ্বর সত্তারই সৃষ্টি। যদি তাই হয়, তার মানে সেই অবিনশ্বর সত্তা ‘ইচ্ছা’ করেন বলেই অন্য কিছু সৃষ্টি হয়। যদি ‘ইচ্ছা’ না থাকত, তাহলে যতই ক্ষমতা থাকুক না কেন, যতই সময় পার হোক না কেন, অন্য কোনো কিছুই সৃষ্টি হতো না। এথেকে আমরা এটা প্রমাণ করতে পারি, সেই অবিনশ্বর সত্তার ‘ইচ্ছা’ আছে।
এখন আমরা আগে দেখেছি, সেই অবিনশ্বর সত্তা অন্য কোনো কিছু ছাড়াই থাকতে পারেন। সুতরাং, তিনি সময়-স্থানে আবদ্ধ নন, কারণ তিনি সময় এবং স্থান সৃষ্টি করেছেন। একইভাবে যেহেতু তিনিই স্থান সৃষ্টি করেছেন, তাই তিনি ইচ্ছা করলেই স্থানের বাইরে অদৃশ্য থাকতে পারেন, যেন তাঁকে কোনোভাবেই বৈজ্ঞানিকভাবে পর্যবেক্ষণ এবং পরিমাপ করা না যায়। আবার তিনি ইচ্ছা করলেই স্থানের ভেতরে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন, যেন তাঁর সৃষ্টি তাঁকে দেখতে এবং শুনতে পারে।
তিনি সব জানেন
এবার ধরি সেই অবিনশ্বর সত্তা একটি অণু সৃষ্টি করলেন। তিনি কি সেই অণুটির ব্যাপারে যা কিছু জানা সম্ভব তার সবকিছু জানেন? অবশ্যই, কারণ তিনি শূন্য থেকে সেই অণুটি সৃষ্টি করতে পারেন। শূন্য থেকে কোনো কিছু বানানো, আর তেল ময়দা মাখিয়ে পরোটা বানানোর মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে। আমরা যা কিছুই বানাই, আমরা কখনই তা শূন্য থেকে বানাই না। একারণে কোনো কিছুর ব্যাপারে যা কিছু জানা সম্ভব, তার সব কখনই আমরা জানতে পারবো না। আমাদের জ্ঞান সবসময়ই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।
এখন ধরুন তিনি দুটি ভিন্ন ধরনের অণু সৃষ্টি করলেন। তিনি কি সেই দুটো অণুর ব্যাপারে যা কিছু জানা সম্ভব, তার সবকিছু জানেন? অবশ্যই, একটার ব্যাপারে জানলে, দুটোর বেলায় কেন হবে না? তাঁর জ্ঞান নিশ্চয়ই একটার বেলায় একটু বেশি, আরেকটার বেলায় একটু কম হবে না?
সুতরাং আমরা দেখছি তাঁর সৃষ্ট কোনো কিছুর ব্যাপারে তাঁর জ্ঞান, কয়টি সৃষ্টি হয়েছে, তার সংখ্যার উপর নির্ভর করে কমে না বা বাড়ে না। এভাবে তিনি যদি কোটি কোটি কোটি অণুও সৃষ্টি করেন, তারপরেও তিনি সেগুলোর প্রত্যেকটির ব্যাপারে যা কিছু জানা সম্ভব, তার সবকিছুই জানবেন। সুতরাং আমরা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে, তিনি শুধুই অকল্পনীয় জ্ঞানের অধিকারীই নন, তাঁর সবকিছুর ব্যাপারে সবরকম জ্ঞান রয়েছে। তিনি পরম জ্ঞানী, সকল জ্ঞানের অধিকারী।
যদি সেই সত্তা প্রতিটি অণুর ব্যাপারে যা কিছু জানা সম্ভব, তাঁর সব কিছু জানেন, তার মানে দাঁড়ায় সেই অণুগুলো যা কিছু ঘটাচ্ছে, ঘটিয়েছে, এবং ঘটাবে, অর্থাৎ সৃষ্টিজগতে যা কিছুই ঘটে, সবকিছুর ব্যাপারেই জানেন। তিনি প্রতিটি শব্দ শোনেন, প্রতিটি ঘটনা দেখেন। শুধু তাই না, যেহেতু তিনি প্রতিটি অণু-পরমাণু বানিয়েছেন, তাই প্রতিটি অণু-পরমাণু যা কিছুই ঘটাতে পারে, তার সবকিছুই তিনিই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং মহাবিশ্বের প্রতিটি ঘটনা তাঁর অনুমতিতে ঘটে। তিনিই সবকিছু ঘটান। তাঁর ঘটানো ঘটনার বাইরে অন্য কোনো কিছু ঘটে না।
সুতরাং আমরা নিচের সিদ্ধান্তগুলোতে পৌছাতে পারলাম—
সৃষ্টির আগে ‘কোনো একজন’ ছিলেন।
সেই ‘কোনো একজন’-এর অকল্পনীয় ক্ষমতা।
সেই ‘কোনো একজন’ অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল নন।
সেই ‘কোনো একজন’-এর ‘অন্য কিছু’ সৃষ্টির ক্ষমতা আছে।
সেই ‘কোনো একজন’ ‘অন্য কিছু’ অবশ্যই সৃষ্টি করেছেন, কারণ আপনি-আমি আছি।
অন্য কোনো কিছুই সেই ‘কোনো একজন’-এর সাথে তুলনা করার যোগ্য নয়।
সেই ‘কোনো একজন’ সবকিছুর ব্যাপারে সব জানেন, সব দেখেন, সব শোনেন।
মহাবিশ্বের প্রতিটি ঘটনা ঘটে সেই ‘কোনো একজন’-এর ইচ্ছায়।
উপরের এই যুক্তিগুলো ব্যবহার করে আমরা যে সত্তার অস্তিত্বকে প্রমাণ করলাম, তিনি কোনো কাল্পনিক সত্তা নন। তিনি থাকতে বাধ্য। না হলে উপরের সবগুলো যুক্তি মিথ্যা। যদি উপরের যুক্তিগুলো মিথ্যা হয়, তাহলে আপনার কোনো অস্তিত্ব নেই। যেহেতু আপনার অস্তিত্ব আছে, তাই উপরের যুক্তিগুলো ধারাবাহিকভাবে সবগুলো সত্যি। সুতরাং এরকম একজন সত্তা অবশ্যই আছেন।
এই সিদ্ধান্তে আসতে আমাদের উচ্চ মার্গের দার্শনিক জ্ঞান দরকার হয়নি, বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব দরকার হয়নি, কোনো প্রযুক্তি দরকার হয়নি। চুপচাপ গাছের নিচে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করলেই আমরা এই মহান সত্তাকে উপলব্ধি করতে পারতাম।
কে তিনি?
এই মহান সত্তাকে আমরা ‘আল্লাহ’ নামে ডাকি, কারণ তিনি অনুগ্রহ করে তাঁর বুদ্ধিমান সৃষ্টিদেরকে তাঁর সরূপ সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন—
বল, তিনিই আল্লাহ, অদ্বিতীয়। তিনি অমুখাপেক্ষী, সবকিছু তাঁর উপর নির্ভরশীল। তিনি কোনো উত্তরসূরি জন্ম দেন না এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। তাঁর সমকক্ষ আর কিছুই নেই! [সুরা ইখলাস]
তিনিই আল্লাহ, যিনি অবিনশ্বর, সব কিছুর অস্তিত্বধারী। তন্দ্রা বা ঘুম তাকে আচ্ছন্ন করতে পারে না। আকাশগুলো এবং পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সব কিছু শুধুমাত্র তাঁর। কে আছে, যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর সামনে সুপারিশ করতে পারে? ওদের আগে কী ঘটেছে এবং পরে কী ঘটবে — তিনি সব জানেন। তিনি নিজে থেকে ওদেরকে যা শেখান, তার বাইরে তাঁর জ্ঞানের কিছু জানার কোনো ক্ষমতাই ওদের নেই। তার নিয়ন্ত্রণ-সিংহাসন সবগুলো আকাশ এবং পৃথিবীর উপরে বিস্তৃত। এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে তিনি মোটেও ক্লান্ত হন না। তিনি সর্বোচ্চ সত্তা, প্রচণ্ড ক্ষমতাবান। [আয়াতুল কুরসি, আল-বাক্বারাহ ২:২৫৫]
তিনি যেটা করতে ইচ্ছা করেন, সেটাই করেন। [আল-বুরুজ ৮৫:১৬]
ওদেরকে জিজ্ঞেস করো, “কে তোমাদেরকে আকাশ এবং পৃথিবী থেকে তোমাদের বেঁচে থাকার জন্য যা দরকার, সবকিছু দেন? তোমাদের শোনা এবং দেখাকে কে নিয়ন্ত্রণ করেন? কে তোমাদেরকে নিষ্প্রাণ অবস্থা থেকে প্রাণ দেন এবং জীবিত থেকে মৃত করেন? সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন কে?”
ওরা নির্দ্বিধায় বলবে, “আল্লাহ!”
তাহলে ওদেরকে জিজ্ঞেস করো, “তবে কেন তোমরা তাঁর ব্যাপারে সাবধান থাকো না?”
তিনিই আল্লাহ, তোমার পালনকর্তা, শাশ্বত সত্য। এই সত্য ছাড়া যা কিছু আছে, তার সব মিথ্যা ছাড়া আর কী? তাহলে কিসের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছো তোমরা? [ইউনুস ১০:৩১]
তিনি আল্লাহ, যিনি ছাড়া উপাসনার যোগ্য কোনো সত্তা নেই। গোপন এবং প্রকাশ্য সব জ্ঞানের অধিকারী। পরম করুণাময়, নিরন্তর করুণাময়।
তিনি আল্লাহ, যিনি ছাড়া উপাসনার যোগ্য কোনো সত্তা নেই। একমাত্র অধিপতি, পবিত্র সত্তা, সকল শান্তির উৎস, নিরাপত্তাদাতা, সবকিছুর অভিভাবক, সব ক্ষমতা কর্তৃত্বের অধিকারী, যে কোনো কিছুকে বাধ্য করতে সক্ষম, সবার থেকে উপরে। ওরা আল্লাহর সাথে যা কিছুরই তুলনা করে, ওসবের থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে।
তিনি আল্লাহ, একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবক, রূপদায়ক। সমস্ত সুন্দর নামগুলো তাঁর। আকাশ এবং পৃথিবীতে সবকিছু তাঁর মহিমা প্রকাশ করছে। তিনি সকল ক্ষমতা কর্তৃত্বের অধিকারী, পরম প্রজ্ঞাময়। [আল-হাশর ৫৯:২২-২৪]
সূত্র
[১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর। [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ। [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি। [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী। [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি। [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী। [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স