কুরআনের কথা

মায়েরা তাদের বাচ্চাদের পুরো দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ পান করাবে — আল-বাক্বারাহ ২৩৩

উনিশ শতকের পর থেকে সারা পৃথিবীতে বাচ্চাদের এক ভয়ঙ্কর সমস্যায় পড়তে হয়েছে: তাদের মায়েরা আর তাদেরকে ঠিকমতো বুকের দুধ খাওয়ায় না। মানবজাতির একদম শুরু থেকে লক্ষ বছর ধরে বাচ্চারা মায়ের বুকের দুধ খেয়ে বড় হয়েছে। ১৪০০ বছর আগে আল্লাহ تعالى কু’রআনে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন পুরো দুই বছর পর্যন্ত বাচ্চাকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। কিন্তু আজকের ‘আধুনিক সমাজের’ বাচ্চারা আর মায়ের বুকের দুধ না খেয়ে, ‘টিনের দুধ’ নামের কেমিক্যালের মিশ্রণে তৈরি একধরনের সাদা গুড়া ওষুধ খেয়ে বড় হচ্ছে। এই সাদা গুড়া কেমিক্যাল মিশ্রণকে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ‘ফর্মুলা’ বলা হয়, ‘দুধ’ বলা হয় না, কারণ এটি মায়ের দুধের ধারে কাছেও কিছু নয় এবং এতে কয়েকটি ক্ষতিকর ক্যামিকেল রয়েছে। কিন্তু অল্প শিক্ষিত দেশগুলোতে মার্কেটিং-এর জোরে একে মায়ের দুধের কাছাকাছি দুধ বলে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করা হয়। মায়ের দেহে দুধ যেভাবে তৈরি হয়, তার ধারে কাছে প্রযুক্তি এখনো মানুষ অবিস্কার করেনি। অথচ সেই ১৮৬৫ সালে প্রথম ফর্মুলা আবিষ্কারের পর থেকে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে মানুষকে বোঝানো হয়েছে যে, টিনের গুড়া দুধ হচ্ছে মায়ের বুকের দুধের কাছাকাছি দুধ।[৩৭২] পানি মেশানোর পর সেটা দেখতে দুধের মতো হয় দেখে সরল মানুষরা বুঝতে পারে না যে, এটা গরুর দুধের প্রোটিন মেশানো একধরনের সাদা গুড়া ওষুধ ছাড়া আর কিছু নয়। উনিশ শতকে এই ফর্মুলা দুধের ব্যাপক প্রচলনের পর থেকে শুরু হয়েছে বিপুল পরিমাণে বাচ্চার মৃত্যু এবং অসুস্থ বাচ্চার সংখ্যা বৃদ্ধি।[৩৭২]

বাংলাদেশে খাবার পানির সঙ্গে ফরমালিন, কাটিং ওয়েল, পার অক্সাইড, খাইসোডা ও দুধের ননী মিশিয়ে নকল ভেজাল দুধ তৈরি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা আমাদেরকে বহুদিন থেকে ‘দুধ’ খাওয়াচ্ছে। আমরা সেটা ধরতে পারিনি। এই বিষ আমরা বছরের পর বছর খেয়েছি। খবরের কাগজে আসার পর আমরা এই ভয়াবহ ঘটনা জানতে পেরেছি।[৩৭১] একইভাবে বাচ্চাদের ফর্মুলা তৈরির কোম্পানিগুলো সফলভাবে আমাদেরকে শত বছর ধরে ঘোল খাইয়ে এসেছে যে, তাদের দুধে পুষ্টি বেশি, সেটি মায়ের দুধের বিকল্প, সেটা খেয়ে বাচ্চাদের কোনো ক্ষতি হয় না, বাচ্চার পুষ্টির ঘাটতি মেটায়, বুকের দুধের পাশাপাশি সেটা খাওয়ানো ভালো ইত্যাদি।

অতিরিক্ত প্রোটিন এবং ফ্যাট দেওয়া ‘দুধ’ নামের এই ওষুধ খেয়ে বাচ্চারা অল্প সময়ে মোটাসোটা, আকৃতিতে বড় হয় দেখে বাবা-মায়েরা ধরে নেয় যে, এই গুড়া ওষুধে নিশ্চয়ই মায়ের বুকের দুধের থেকে পুষ্টি বেশি। একারণে তারা বুকের দুধের পাশাপাশি বাচ্চাদেরকে ফর্মুলা খাওয়ায়, যেন বাচ্চার স্বাস্থ্য বেশি ভালো হয়। স্বল্প শিক্ষিত বাবা-মা’র কাছে বাচ্চা মোটাসোটা হওয়াটাই স্বাস্থ্যের লক্ষণ। তারা বিশ্বাস করে ফেলেছে যে, আল্লাহর تعالى ডিজাইন করা বুকের দুধের থেকে মানুষের আবিষ্কার করা কৃত্রিম দুধ বেশি উন্নত। অথচ খোদ আমেরিকাতেই বুকের দুধের পাশাপাশি ফর্মুলা খাওয়ানোর কারণে দ্বিগুণ বাচ্চার মৃত্যু হয়।[৩৬৯] গরিব দেশগুলোতে যেমন, ঘানা, ভারত, পেরুতে কর্মজীবী মায়েদের বুকের দুধ কম খাইয়ে ফর্মুলা খাওয়ানোর কারণে সাড়ে দশগুণ বেশি বাচ্চা মারা যায়।[৩৭০] এছাড়া ফর্মুলা খাওয়ানোর কারণে বাচ্চাদের প্রায় তিনগুণ বেশি ডাইরিয়া হয়, পঞ্চাশভাগ বেশি কানের ইনফেকশন হয়, ১৬.৭ গুণ বেশি ফুসফুসের ইনফেকশন, নিউমোনিয়া হয়, একজিমা, র‍্যাশ, এল্যারজি হয়, সারাজীবনের জন্য হজমে দুর্বলতা হয়, দেড়গুণ বেশি  টাইপ ১ এবং ২ ডায়াবেটিস হয়, প্রায় দ্বিগুণ বেশি এজমা হয়, প্রায় দেড় গুণ বেশি লিউকেমিয়া হয়, এবং প্রায় দ্বিগুণ বেশি বাচ্চা কোনো পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই হঠাৎ করে মারা যায়।[৩৭৩][৩৭৪] এই ফর্মুলার ক্ষতির সাথে যোগ হয় কলের পানির মধ্যে থাকা মাত্রাতিরিক্ত ক্লোরিন এবং নানা পানি পরিষ্কারের ক্যামিকাল। সুয়ারেজের ময়লা মিশ্রিত পুকুর, নদীর ময়লা-বিষাক্ত পানি বিপুল পরিমাণের ক্যামিকাল দিয়ে পরিষ্কার করে কলে সরবরাহ করা হয়, যা ব্যবহার করে আমরা বাচ্চার ফর্মুলা দুধ তৈরি করি। এই ভয়ঙ্কর ক্যামিক্যালের সুপ খেয়ে আমাদের প্রজন্ম এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মে জটিল অসুস্থতা এবং মৃত্যুর হার আকাশ ছোঁয়া হয়ে গেছে। হাসপাতালগুলোতে গেলে দেখা যায় আজকে বাচ্চারা কী পরিমাণে অসুস্থ হচ্ছে। ডায়াবেটিস, এজমা, একজিমা, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, কানের ইনফেকশন আজকে ঘরে ঘরে।

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন দুই বছর পূর্ণ করে বাচ্চাকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এটা বাচ্চার হক। অথচ আমরা অনেকে ছয় মাস হলেই শুধুই বুকের দুধ ছেড়ে ফর্মুলা খাওয়ানো শুরু করে দিয়েছি। পাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতিতে মগজ ধোলাই হওয়া ক্যারিয়ার সচেতন মা তাদের বাচ্চাদেরকে শুধুমাত্র বুকের দুধ না খাইয়ে এই সাদা গুড়া ওষুধ খাইয়ে বড় করেন। অনেকে নিজের ফিগার ঠিক রাখার জন্য ফর্মুলা খাইয়ে বাচ্চার শরীর সারাজীবনের জন্য নষ্ট করে দেন। অন্যদিকে স্বল্প শিক্ষিত বাবা-মা বুকের দুধের পাশাপাশি  বাচ্চাকে ‘গরু মোটাতাজাকরন পদ্ধতির’ মতো ফর্মুলা খাইয়ে মোটা ফার্মের মুরগি বানান, যেন বাচ্চার স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষের কাছে কথা শুনতে না হয়। আরেকটা বড় অন্যায় হলো: কোনো সমস্যা ছাড়াই নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চাকে স্বাভাবিকভাবে জন্ম হতে না দিয়ে, মায়ের কষ্ট কমানোর জন্য অযথা সিজারিয়ান করে অস্বাভাবিকভাবে বাচ্চা বের করা। এভাবে বের করা বাচ্চা জরায়ু পথে বের হওয়ার সময় মায়ের দেহের মাইক্রব নিয়ে বের হয় না, যার কারণে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে দুর্বল এবং বাচ্চা বড় হওয়ার সময় বিভিন্ন ইনফেকশন হয়।[৩৭৭] একবিংশ শতাব্দীতে আধুনিক যুগে এসেও আজকে আমরা অজ্ঞানতা, স্বার্থপরতার কী গভীর অন্ধকার গর্তে ডুবে আছি!

মায়েরা তাদের বাচ্চাদের পুরো দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ পান করাবে, যদি তারা দুধ খাওয়ানোর সময় পূরণ করতে চায়। আর জন্মদাতা বাবার দায়িত্ব হচ্ছে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে তাদের কাপড়, সংস্থানের ব্যবস্থা করা। কাউকে তার সাধ্যের বাইরে চাপ দেওয়া যাবে না। কোনো মা-কে তার বাচ্চার কারণে কষ্ট দেওয়া যাবে না, কোনো বাবাকেও না। একই দায়িত্ব বাচ্চার উত্তরাধিকারীদের বেলায়ও প্রযোজ্য। যদি বাবা-মা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই দুধ ছাড়িয়ে দিতে চায়, তবে তাদের কোনো গুনাহ হবে না। তোমরা যদি তোমাদের বাচ্চাদের কোনো ধাত্রীর দুধ পান করাতে চাও, তাহলেও তোমাদের কোনো গুনাহ হবে না, যদি তোমরা প্রচলিত নিয়ম অনুসারে পারিশ্রমিক দাও। আর আল্লাহ’র تعالى প্রতি সাবধান! জেনে রেখো, তোমাদের সব কাজ তিনি দেখছেন। [আল-বাক্বারাহ ২৩৩]

ফর্মুলা দুধ কি বুকের দুধের কাছাকাছি?
ফর্মুলা এবং মায়ের বুকের দুধের মধ্যে পার্থক্য আকাশ পাতাল। বিজ্ঞাপনে যতই বড় বড় কথা বলা হোক না কেন যে, ফর্মুলাতে আয়রন, ভিটামিন, প্রোটিন আছে, এরপরও মায়ের বুকের দুধের প্রায় একশটি উপকরণ ফর্মুলাতে নেই।[৩৭৫][৩৭৬] মায়ের বুকের দুধে জীবন্ত কোষ, হরমোন, সক্রিয় এনজাইম এবং ইমিউনোগ্লোবিন আছে, যা ফর্মুলাতে কোনোভাবেই দেওয়া সম্ভব নয়।[৩৭৬] ফর্মুলা তৈরিতে মানুষের দুধ ব্যবহার করা হয় না। এটি গরুর দুধ বা সয়াবিন থেকে তৈরি কৃত্রিম দুধের সাথে নানা রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এতে যে প্রোটিন থাকে, তা হচ্ছে গরুর প্রোটিন, যা গরুর বাচ্চার জন্য দরকারি। মানুষের বাচ্চা এই প্রোটিন অনেকখানিই হজম করতে পারে না। এছাড়া ফর্মুলা বানানোর সময় যে পানি ব্যবহার করা হয়, তাতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ক্লোরিন, লেড, ব্যাকটেরিয়া, ফ্লুরাইড এবং নানা ক্ষতিকর ক্যামিক্যাল। গবেষণায় দেখা গেছে ফর্মুলা খাওয়ানো বাচ্চার দেহে উচ্চ পরিমাণের ক্লোরিন, লেড এবং ফ্লুরাইড থাকে।[৩৭৬]

মানুষের বাচ্চা যখন জন্ম হয়, তখন সে মায়ের গর্ভের সুরক্ষতি জায়গা থেকে বের হয়ে হঠাৎ করে পৃথিবীর খোলা বাতাসে লক্ষ লক্ষ জীবাণু, দূষিত বায়ু, দুষিত পানি, বিষাক্ত ক্যামিক্যালের মধ্যে এসে পড়ে। এই ভয়ঙ্কর প্রতিকুল পরিস্থিতে পরে তার সাথে সাথে দরকার হয় শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। এর কিছুটা সে পায় নরমাল ডেলিভারির সময় মায়ের দেহ থেকে জরায়ু পথে বের হওয়ার সময়। আর বাকিটা পায় মায়ের শাল দুধ থেকে। মায়ের শাল দুধ প্রকৃতির এক বিস্ময়। এর রহস্য আজো বিজ্ঞানীরা বের করতে পারেনি। মানুষের বাচ্চা যে পরিপাক তন্ত্র নিয়ে জন্ম হয় তাতে সুক্ষ্ন ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্রের কারণে বাচ্চারা মায়ের শাল দুধ সহজে শুষে নিয়ে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করে। বাচ্চার পরিপাকতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে তৈরি হতে তিন মাস লাগে। যদি বুকের দুধ খাওয়ানো না হয়, তাহলে পরিপাকতন্ত্র ঠিকভাবে তৈরি হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বাচ্চা আর পায় না। যার কারণে ফর্মুলা খাওয়া বাচ্চার পরিপাকতন্ত্র কখনোই বুকের দুধ খাওয়া বাচ্চার পরিপাকতন্ত্রের মতো সুষ্ঠু হয় না। ফলাফল: সারাজীবন নানা অসুখ লেগে থাকে।

যিনি মানুষকে বানিয়েছেন, তাঁর تعالى নির্দেশ না শুনে আজকে আমরা বিজ্ঞাপন, প্রামাণ্যচিত্রের কথাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া শুরু করেছি। আজকে একটা মানসিকতা আমাদের মধ্যে চলে এসেছে যে, ডাক্তাররা যা বলেন, বা টিভিতে ডকুমেন্টারিতে যা দেখানো হয়, সেটাই সবচেয়ে সঠিক, ধর্মীয় কথাবার্তা হচ্ছে হাজার বছর পুরনো, অশিক্ষিত, গ্রামের মানুষের জন্য প্রযোজ্য। আজকে মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম শিখরে পৌঁছে গেছে—এই ধারণা থেকে কয়েক প্রজন্ম ভয়ঙ্কর সব ভুল করেছে, যার মাসুল আজকে আমরা দিচ্ছি এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দিয়ে যাবে।

মায়েরা তাদের বাচ্চাদের পুরো দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ পান করাবে, যদি তারা দুধ খাওয়ানোর সময় পূরণ করতে চায়

আল্লাহ تعالى দুই বছর পর্যন্ত দুধ খাওয়াতে বলেছেন। কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণে যদি বন্ধ করার প্রয়োজন না হয়, তবে তা বাচ্চার অধিকার।[১৮] পুরো দুই বছর শুধুই যে দুধ খাওয়াতে হবে তা নয়। ছয় মাস পর থেকে দুধের পাশাপাশি অন্য খাওয়া দেওয়া যায়।

দুই বছর! এত লম্বা সময়! ছয় মাস হলে হবে না? বা এক বছরের কিছু বেশি? — না, আল্লাহ تعالى এই আয়াতে শুধুই حَوْلَيْنِ (দুই বছর) বলেননি, তিনি এর সাথে জোর দিয়ে বলেছেন كَامِلَيْنِ — সম্পূর্ণ করে। কেউ যেন মনে না করে যে, এক বছর পূর্ণ করে দ্বিতীয় বছরের কিছু সময় হলেও হবে। বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ার সময়সীমা দুই বছর, সেটা দুই বছর সম্পূর্ণ করেই করতে হবে, এক বছর এবং পরবর্তী বছরের কিছু অংশ নিয়ে নয়।[১২] তবে দুই বছর ছয় মাস পর বুকের দুধ খাওয়ানো সকল মাযহাবের মত অনুসারে হারাম।[৪]

আয়াতে প্রেক্ষাপটটি গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে এবং পরে তালাকের আয়াত চলছে। এর মাঝখানে আল্লাহ تعالى বাচ্চাদেরকে বুকের দুধ খাওয়ানোর আদেশ দিয়েছেন। তালাক একটি অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। এই সময় বাবা, মা দুইদিকেই নানা সমস্যা, অশান্তি থাকে। কিন্তু এরমধ্যে যেন বাচ্চার দুধ খাওয়ানো নিয়ে কোনো গাফিলতি না হয়। আল্লাহ تعالى সাবধান করে দিয়েছেন যে, তালাক হোক আর না হোক, বাচ্চার দুধ দুই বছর ঠিকমতো খাওয়াতে হবেই।

জন্মদাতা বাবার দায়িত্ব হচ্ছে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে তাদের কাপড়, সংস্থানের ব্যবস্থা করা

মা এবং বাচ্চার খাবার, কাপড়, বাসস্থানের জোগান দেওয়া বাচ্চার বাবার দায়িত্ব। সেটা তালাক হলেও দায়িত্ব, তালাক না হলেও দায়িত্ব। মায়ের কোনোই দায়িত্ব নেই কাজ করে নিজের এবং বাচ্চার চলার ব্যবস্থা করা। যদি বাবা না পারে, বা বাবা না থাকে, তাহলে বাচ্চার সম্পত্তির উত্তরাধিকারীরা করবে। না হলে ইসলামি সরকারের দায়িত্ব।[৪]

কাউকে তার সাধ্যের বাইরে চাপ দেওয়া যাবে না। কোনো মা-কে তার বাচ্চার কারণে কষ্ট দেওয়া যাবে না, কোনো বাবাকেও না।

আল্লাহ تعالى মানুষকে কখনোই সাধ্যের বাইরে চাপ দেন না। সেটা ইবাদতের বেলায় যেমন নয়, তেমনি পৃথিবীতে কোনো দায়িত্ব পালনের বেলায়ও নয়। মায়ের যদি সত্যিই অনেক কষ্ট হয়, তাহলে তাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য জোর করানো যাবে না। শুধু মনে রাখতে হবে, সেই কষ্টটা যেন যুক্তিসঙ্গত হয়, যেমন মা ভীষণ অসুস্থ হয়ে গেলে, বাচ্চার দুধের সাথে মানিয়ে চলতে সমস্যা হলে, বা মায়ের যথেষ্ট দুধ না হলে ইত্যাদি। তবে সেটা মোবাইল প্রজন্মের, রান্নাঘরে কোনোদিন না ঢোকা, বাবা-মার আদরের আহ্লাদী কন্যার ‘উফ্‌! ভাল্লাগে না’ ধরনের কষ্ট হলে হবে না।

যদি বাবা-মা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই দুধ ছাড়িয়ে দিতে চায়, তবে তাদের কোনো গুনাহ হবে না

মানুষের জীবনে বহু সমস্যা হয়। কোনো বড় সমস্যায় পড়ে যদি বাবা এবং মা দুজনেই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, মা বাচ্চাকে বুকের দুধ দুই বছর পূর্ণ করবে না, তাহলে সেটা করার অনুমতি আল্লাহ تعالى দিয়েছেন। তবে এটা দুই পক্ষের আলোচনা করে একমত হয়ে করতে হবে। কোনো এক পক্ষ থেকে জোর দিলে হবে না। স্বামী স্ত্রীর ফিগার ঠিক করার জন্য চাপ দিলে হবে না, স্ত্রী বাইরে কাজ করতে যাওয়ার অজুহাতে দুধ খাওয়ানো বন্ধ করলে হবে না।

তোমরা যদি তোমাদের বাচ্চাদের কোনো ধাত্রীর দুধ পান করাতে চাও,…

মা যদি বাচ্চাকে ঠিকমতো বুকের দুধ খাওয়াতে না পারে, তাহলে খুব সুন্দর সমাধান রয়েছে: ধাত্রী রেখে বুকের দুধ খাওয়ানো। মানুষের বাচ্চাকে মানুষের দুধ খাওয়াতে হবে। গরুর দুধ, সয়াবিনের দুধ ক্যামিকেল মিশিয়ে খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্তও ধাত্রীর প্রচলন ছিল, সরকারি পর্যায়ে তাদের রেজিস্ট্রেশন হতো, চিকিৎসা হতো, নিশ্চিত করা হতো ধাত্রীরা নিজেদের ঠিকমতো যত্ন নিচ্ছে, দুধের গুণগত মান ভালো হচ্ছে। কিন্তু এরপর ধাত্রী দিয়ে দুধ খাওয়ানোটা কোনো কারণে হঠাৎ করে মানুষের কাছে একটা বাজে ব্যাপার হয়ে গেল। লক্ষ বছর ধরে মানব সভ্যতার শুরু থেকে যেই ব্যাপারটা স্বাভাবিক, সম্মানের ব্যাপার ছিল, সেটা পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি এসে হঠাৎ করে একটা বাজে ব্যাপার করে দিল। মানব শিশু মানুষের দুধ না খেয়ে ক্যামিকেল মেশানো গরুর দুধ খাওয়া শুরু করলো।

আল্লাহ’র تعالى প্রতি সাবধান! জেনে রেখো, তোমাদের সব কাজ তিনি দেখছেন।

আল্লাহ تعالى এই আয়াতটি শেষ করছেন আমাদেরকে সাবধান করে— সাবধান! বাচ্চাদের দুই বছর পূর্ণ করে দুধ খাওয়াতে হবে। যদি না করো, তাহলে জেনে রেখো আল্লাহ تعالى সব দেখছেন। —সাবধান! মাকে কোনো ধরনের অন্যায় চাপ দেবে না। যদি জোর করে কষ্ট দিয়ে বাচ্চার দেখাশুনা করাও, তাকে ঠিকমতো কাপড়, খাবার, বাসস্থান না দাও, তাহলে জেনে রেখো, তুমি কী করেছো তা আল্লাহ تعالى ভালো করে দেখেছেন। —সাবধান! বাচ্চা ব্যবহার করে তার বাবাকে ব্ল্যাকমেইল করবে না। নানা-নানি হয়ে যদি মা-কে কানাঘুষা দিয়ে বাচ্চার বাবার উপর চাপ তৈরি করাও, যদি মা হয়ে বাচ্চাকে ব্যবহার করো বাবার কাছ থেকে বেশি আদায় করতে, তাহলে জেনে রেখো, আল্লাহ تعالى সব দেখছেন। আল্লাহ تعالى তোমাকে ছেড়ে দেবেন না।

আল্লাহর تعالى ডিজাইনের থেকে ভালো কিছু আর হতে পারে না। মানুষ কোনোদিন পারবে না বুকের দুধের কাছাকাছি কিছু তৈরী করতে। একটি বাচ্চার জন্য যা কিছুই দরকার, তার সবকিছুই তিনি تعالى মায়ের বুকের দুধে দিয়ে দিয়েছেন। তাহলে তাঁর تعالى দেওয়া এই অসাধারণ নিয়ামত থেকে আমরা আমাদের বাচ্চাদেরকে কেন বঞ্চিত করবো? মানুষের তৈরী কেমিক্যাল মেশানো খাবারের ঝুকি কেন নেবো, যখন আল্লাহই تعالى বাচ্চার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ খাবার মায়ের দেহের মধ্যেই দিয়ে দিয়েছেন? আমরা কি চাই বাচ্চা মোটাসোটা হোক, নাকি সুস্থ হোক? আমরা কি চাই বাচ্চা বড় আকৃতির হোক, নাকি বুদ্ধিমান, সবল হোক? আসুন, মানুষের কথায় কান না দিয়ে, যথাযথ গবেষণাগুলো পড়ে এবং সবচেয়ে বড় কথা আল্লাহর تعالى সৃষ্টির উপর শ্রদ্ধা এবং আস্থা রেখে বাচ্চাকে পুরো দুই বছর বুকের দুধ খাওয়াই।

সূত্র

নতুন আর্টিকেল বের হলে জানতে চাইলে কু’রআনের কথা ফেইসবুক পেইজে লাইক করে রাখুন—

Exit mobile version