কুরআনের কথা

যারা আমার পাঠানো পরিষ্কার প্রমাণ এবং পথনির্দেশ গোপন করে — আল-বাক্বারাহ ১৫৯-১৬২

একটি ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বসে কারিকুলাম ঠিক করছেন। একজন প্রস্তাব দিলেন প্রথম দুই সেমিস্টার রিয়াদুস সালেহীন পড়াতে। সবাই সানন্দে রাজি হয়ে গেলেন। আরেকজন প্রস্তাব দিলেন এর সাথে সহিহ বুখারী পড়াতে। সেটাও সবাই একবাক্যে রাজি। এরপর আরেকজন বেহেশতি জেওর, কাসাসুল আনবিয়া ঢুকিয়ে দিতে বললেন। সেটাও পাশ হয়ে গেল।

এরমধ্যে একজন বললেন, প্রতি সেমিস্টারে কুরআনের এক পারার অর্থসহ তিলাওয়াত শেখাতে। এই প্রস্তাব শুনে অন্যেরা আঁতকে উঠলেন, “না, না, শুধু আরবি তিলাওয়াতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন। মানুষকে কুরআন অর্থসহ শেখালে বিভ্রান্তি হবে। মানুষ নিজে থেকেই নিজেদের মত যা খুশি বুঝে নিয়ে আমল করা শুরু করে দেবে। কুরআন সবার জন্য নয়। কুরআন বুঝতে গেলে অনেক বছর আরবি শিখতে হয়, আরবি ব্যাকরণে অভিজ্ঞ হতে হয়, কমপক্ষে ১৪টা তাফসির পড়তে হয়। এগুলো সব না শিখিয়ে শুধু কুরআন অর্থ সহ শেখালে সর্বনাশ হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষকে কুরআন থেকে যত দূরে রাখা যায়, ততই বরং কম ফিতনা হবে।”

যারা আমার পাঠানো পরিষ্কার প্রমাণ এবং পথনির্দেশ গোপন করে, আমি মানুষের জন্য কিতাবে পরিষ্কার করে দেওয়ার পরেও, ওদেরকে আল্লাহ ঘৃণা ভরে পরিত্যাগ করেন, এবং অভিশাপকারীরা ওদেরকে অভিশাপ দেয়। [আল-বাক্বারাহ ১৫৯]

হাজার বছর আগে ইহুদি রাবাইরা (ধর্মীয় পন্ডিতরা) তাওরাতকে শুধুমাত্র নিজেদের মধ্যেই কুক্ষিগত করে রেখেছিল। সাধারণ ইহুদিরা কখনো তাওরাত নিজেরা পড়তে পারতো না, সেটা তাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। তাওরাতকে জনসাধারণের ধরাছোয়ার বাইরে রেখে রাবাইরা নিজেদের ইচ্ছামত শরীয়াহ বানিয়ে, নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করার জন্য ইচ্ছেমত হালাল, হারাম নির্ধারণ করে গেছে। নানা ধরনের ধর্মীয় রীতিনীতি ঢুকিয়ে গেছে, যেগুলো তাদেরকে ক্ষমতা, সম্পত্তি, প্রতিপত্তি এনে দিয়েছে। নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য তাওরাতের পরিষ্কার নিষেধকেও বৈধ বলে চালিয়ে দিয়েছে। এভাবে তারা সফল ভাবে কয়েকশত বছর ধরে সাধারণ মানুষকে আল্লাহর পরিষ্কার বাণী, পথনির্দেশ থেকে দূরে রেখে একটা পুরো জাতিকে ভুল পথে নিয়ে গেছে।[১][১১]

একইভাবে গত কয়েক শতকে উপমহাদেশের মানুষদেরকে কৌশলে কুরআন থেকে দূরে রেখে কয়েকটা প্রজন্ম তৈরী করা হয়েছে, যারা কুরআন সম্পর্কে নুন্যতম জ্ঞানও রাখে না। এরা জানে না কুরআনে পরিষ্কারভাবে কী হালাল, কী  হারাম বলা আছে। কুরআনে তাওহীদের শিক্ষা কী, তা তারা জানে না। তারা শুধু পড়েছে কিছু গৎবাঁধা বই, যেই বইগুলোর অনেকগুলোতেই নানা ধরনের জাল হাদিস, বিদআতের ছড়াছড়ি।[১১] এভাবে একটি পুরো জাতিকে কুরআনে নিরক্ষর করে রেখে গেছে কিছু ইসলামী দল এবং ‘আলেম’ নিজেদের ইচ্ছামত ধর্ম ব্যবসা করার জন্য। এদের পরিণাম ভয়ঙ্কর—

ওদেরকে আল্লাহ ঘৃণা ভরে পরিত্যাগ করেন, এবং অভিশাপকারীরা ওদেরকে অভিশাপ দেয়।

অবশ্যই এর মানে এই নয় যে, সাধারণ মানুষ কুরআন পড়ে নিজেরাই নানা জটিল বিষয়ে ফাতওয়া দেওয়া শুরু করবে। সম্মানিত মুফতিদের প্রকাশিত ফাতওয়া বাদ দিয়ে নিজেরা যা ভালো মনে করে, সেটাই করবে। সেটা হবে বোকামি। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজবিদ্যা, মানসিক পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি জটিল ব্যাপারে অবশ্যই আমাদের বিশেষজ্ঞদের কাছে যেতে হবে। কিন্তু কুরআনে আল্লাহ تعالى পরিষ্কার করে ধর্মের মূলনীতিগুলো শিখিয়ে দিয়েছেন। সেগুলো শিখতে পারলে দৈনন্দিন অনেক সমস্যার সমাধান যেমন নিজে থেকে করা যায়, একই সাথে কোনো ইমাম, আলেম, ওস্তাদ, মাওলানা আমাদেরকে কুরআনের শিক্ষার বিরোধী কিছু করতে বলছেন কিনা, তা নিজে থেকেই অনেকখানি যাচাই করা যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত কুরআন পড়ে আমরা আমাদের এই ভিত্তি তৈরী করতে না পারছি, ততক্ষণ পর্যন্ত অসাধু ধর্ম ব্যবসায়ীরা আমাদেরকে ইচ্ছেমত ঘোল খাইয়ে যাবে। আমরা বুঝতেও পারবো না কী খাচ্ছি।[১১]

আরবিতে لعن এর অর্থ সাধারণত করা হয় ‘অভিশাপ দেওয়া’, যার কারণে কু’রআনের প্রচলিত বাংলা অনুবাদগুলোতে বলা হয়, “আল্লাহ تعالى ওদেরকে অভিশাপ দেন।” কিন্তু لعن এর অর্থ অনেকগুলো— ১) পরিত্যাগ করা, ২) তাড়িয়ে দেওয়া, ৩) ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করা, ৪) অভিশাপ দেওয়া ইত্যাদি।[১৮০] আল্লাহর تعالى অভিশাপ দেওয়াটা, আর অভিশাপ বলতে আমরা সাধারণত যা বুঝি, তার মধ্যে পার্থক্য আছে। আমরা যখন কাউকে অভিশাপ দেই, “তুমি ধ্বংস হয়ে যাও!” — তখন আসলে আমরা আল্লাহর تعالى কাছে একটি বদ দু’আ করি, যেন আল্লাহ تعالى তাকে ধ্বংস করে দেন। কিন্তু আল্লাহ تعالى যখন لعن করেন, তিনি تعالى কারো কাছে কিছু চান না, বরং তিনি নিজেই ঘৃণা ভরে পরিত্যাগ করেন, তাঁর রাহমাহ থেকে তাকে বঞ্চিত করেন।[২][৪][১৪]

বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তার কোনো সৃষ্টিকে পরিত্যাগ করা একটি ভয়াবহ ব্যাপার। কারণ যাকে তিনি পরিত্যাগ করলেন, সে তখন চিরজীবনের জন্য নরকের অধিবাসী হয়ে গেল। শেষ বিচারের দিন সে আল্লাহর تعالى অনুগ্রহ, দয়া, ক্ষমা এবং ভালবাসা পেয়ে জান্নাতে যাওয়ার সব সুযোগ হারিয়ে ফেলল। সে সারাজীবনের জন্য ধ্বংস হয়ে গেল।

এই আয়াতগুলো পড়ে সুধীবৃন্দরা অনেক সময় প্রশ্ন করেন, “দেখ, তোমাদের আল্লাহ কেমন বদরাগী, কথায় কথায় অভিশাপ দেয়। কোনো দয়াময় স্রষ্টা মানুকে অভিশাপ দিতে পারে না। স্রষ্টা যদি তার সৃষ্টিকে অভিশাপ দেয়, তাহলে সৃষ্টির কী দোষ?”

এর উত্তরটা এই আয়াতেই রয়েছে, একটু ভালো করে পড়লেই পাওয়া যাবে, “যারা আমার পাঠানো পরিষ্কার প্রমাণ এবং পথনির্দেশ গোপন করে, আমি মানুষের জন্য কিতাবে পরিষ্কার করে দেওয়ার পরেও।” এই আয়াতে এমন একধরনের চরম ক্রিমিনালদের কথা বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর تعالى বাণী নিজেরা ভালো করে বুঝেছে, কিন্তু তারপরও তারা নিজেদের লোভ, হিংসা, স্বার্থের জন্য তাঁর تعالى বাণীকে গোপন রেখেছে। তাঁর تعالى সহজ, পরিষ্কার বাণীকে পেঁচিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য দুর্বোধ্য করে দিয়েছে। সাধারণ মানুষকে তাঁর تعالى বাণী থেকে দূরে রাখার জন্য নানা ধরনের বানোয়াট কথা প্রচার করেছে। এই সব নিচু শ্রেণীর প্রতারকদেরকে আল্লাহ تعالى ঘৃণা ভরে পরিত্যাগ করেন।

তাদেরকে অভিশাপ দেওয়ার জন্য বিশেষ কিছু সৃষ্টি রয়েছে, যারা তাদেরকে ক্রমাগত অভিশাপ দেয়। এধরনের প্রতারকরা যদি মনে করে যে, তারা সাধারণ মানুষকে সফল ভাবে বোকা বানিয়ে যাচ্ছে, কেউ বুঝতে পারছে না তাদের চালাকির কথা, তাহলে তারা যেন মনে রাখে যে, বিশেষ কিছু সৃষ্টিকে তৈরী করা হয়েছে তাদেরকে ক্রমাগত অভিশাপ দেওয়ার জন্য। প্রতারিত মানুষগুলোর অভিশাপ না পেলে কী হবে, তার চেয়ে ভয়ঙ্কর অভিশাপের মধ্যে তারা সবসময় রয়েছে। সেই অভিশাপে তাদের এই জীবন ছারখার হয়ে যায়, পরকালে থাকে ভয়ঙ্কর শাস্তি।

তবে যারা তাওবাহ করে, সংশোধন করে, এবং সত্যকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়, তাদের ক্ষমা চাওয়া আমি গ্রহণ করি। আমি বার বার ক্ষমা করি, আমি নিরন্তর দয়ালু।  [আল-বাক্বারাহ ১৬০]

এই আয়াতে আমরা আল্লাহর تعالى মহান ক্ষমার নিদর্শন পাবো। তাঁর تعالى পরিষ্কার বাণীকে মানুষের কাছে গোপন রাখার মতো ভয়ঙ্কর অপরাধ যারা করে, তাদের চেয়ে বড় অপরাধী আর কে হতে পারে? অথচ এত বড় শয়তানদের জন্যও তিনি تعالى তাঁর অসীম ক্ষমার দ্বার বন্ধ করে দেননি। এদের মতো অপরাধীরা যদি ক্ষমা চায়, তাহলে আল্লাহ تعالى তাদেরকেও ক্ষমা করে দেবেন!

আমরা অনেক সময় হতাশায় ভুগি যে, আমি জীবনে এত পাপ করেছি যে, আল্লাহও تعالى তা ক্ষমা করতে পারেন না। আমার আর কোনো আশা নেই। এর চেয়ে আর যে কয়টা দিন বাকি আছে, জীবনটা উপভোগ করে যাই। জাহান্নামে গিয়ে তো জ্বলতে হবেই। —তাদের জন্য এই ধরনের আয়াত বিরাট আশার বাণী। আল্লাহর تعالى পরিষ্কার বাণী গোপন করে, হাজার হাজার মানুষকে ভুল পথে নেওয়ার মত ভয়ঙ্কর অপরাধ যারা করেছে, তাদের জন্য আল্লাহ تعالى ক্ষমার দরজা খুলে রেখেছেন। যদি তাদের মত এত বড় পাপী মাফ পেতে পারে, তাহলে আমরা কেন পাবো না? আল্লাহ تعالى পরম দয়ালু, অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অত্যন্ত সহনশীল, অত্যন্ত সমব্যথী, বার বার ক্ষমা করেন — তাঁর এই গুণগুলো বার বার নিজেদেরকে মনে করিয়ে দিতে হবে। আমরা কখনই যেন তাঁর ক্ষমার প্রতি নিরাশ হয়ে না যাই। কখনই যেন নিজের পাপের জন্য হতাশায় ডুবে গিয়ে নিজেকে সংশোধন করা বন্ধ করে না দেই। কারণ শয়তান ঠিক এটাই চায় আমাদের কাছ থেকে।

আল্লাহ تعالى তাওবাহ বা আন্তরিক ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ করেন, বার বার করেন, যদি সেই ক্ষমা প্রার্থনার সাথে সেই পাপ আর কখনো না করার প্রতিশ্রুতি থাকে। তাওবাহ এসেছে ت و ب থেকে যার অর্থ: ফিরে আসা। আমরা যদি শুধু মুখে বলি, “আল্লাহ, আমি ভুল করেছি, আমাকে ক্ষমা করে দিন”—তাহলে সেটা তাওবাহ হলো না। তাওবাহ হচ্ছে: ১) যেই ভুল কাজটা করছিলাম সেটা করা বন্ধ করা, ২) অন্যের সাথে অন্যায় করলে তার প্রায়শ্চিত্ত করা বা তাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া, ৩) একই সাথে আল্লাহর تعالى কাছে ভুল করার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং ৪) সেই ভুল ভবিষ্যতে আর না করার জন্য প্রতিজ্ঞা করা।[৫] তাহলেই সেটা তাওবাহ হবে।

তবে এই বিশেষ ধরনের অপরাধীদের জন্য বাড়তি শর্ত হচ্ছে: শুধু ক্ষমা চাইলেই হবে না। একইসাথে তাদেরকে أَصْلَحَ আসলাহা করতে হবে। আসলাহা এসেছে اِصْلاح ইসলাহ থেকে, যার অর্থ: কোনো ভেঙ্গে যাওয়া জিনিস জোড়া লাগানো, সংস্কার করা, ভুল কাজ সংশোধন করা, শান্তি প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি।[২৯৮]  যারা তা করেন, তারা হচ্ছেন মুসলিহ।

সুতরাং, মানুষের যে সর্বনাশ তারা করে ফেলেছে, তা ঠিক করতে হবে। এতদিন তারা যা গোপন রেখেছে, তা ঠিকভাবে মানুষের কাছে প্রকাশ করতে হবে। শুধু নামাজে বসে চোখের পানি ফেললে হবে না। মানুষের সামনে গিয়ে সব লজ্জা, অপমান হজম করে, নিজেদের প্রতারণার কথা জানিয়ে দিয়ে হবে। দলের সব অপকর্ম ফাঁস করে দিতে হবে। এরপর সত্য বাণী মানুষের কাছে প্রচার করতে হবে। শুধু তাহলেই আল্লাহর تعالى ক্ষমা পাওয়া যাবে।

অনেক সময় আমরা ইসলামের উপর কোনো বই বা আর্টিকেল পড়ে উপলব্ধি করি যে, আমরা এতদিন যা শিখে এসেছি, তার মধ্যে ভুল রয়েছে। হাজার বছর থেকে বাপ-দাদার আমল থেকে চলে আসা কিছু রীতিনীতি, ধারণাগুলো আসলে ইসলাম সমর্থন করে না। অনেক সময় দেখা যায়: আমরা যে দলের শিক্ষা এতদিন অনুসরণ করে এসেছি, তার বিরুদ্ধে কুরআন, সাহিহ হাদিসেই যথেষ্ট শক্ত দলিল আছে। তখন আমরা অনেক সময় ভাবা শুরু করি, “এই খবর যদি মানুষকে জানানো হয় তাহলে ফিতনা তৈরী হবে। মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যাবে। হুজুরদের প্রতি শ্রদ্ধা উঠে যাবে। এরচেয়ে বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতর ত্যাগ করা ভালো। থাক না কিছু কথা গোপন। আল্লাহ تعالى মাফ করবেন।” না! আল্লাহ বলেছেন—

যারা ক্রমাগত অবিশ্বাস করে, তারপর সে অবস্থাতেই মারা যায়, ওদেরকে আল্লাহ অবশ্যই ঘৃণা ভরে পরিত্যাগ করেন, এবং ফেরেশতা এবং মানুষরা সবাই ওদেরকে অভিশাপ দেয়। [আল-বাক্বারাহ ১৬১]

জেনে শুনে যে সত্য গোপন করে, যা জানাটা মানুষের হক, সেই সত্য গোপন করাটা কুফরী। এই অবস্থায় সে যদি মারা যায়, তাহলে সে কাফির অবস্থায় মারা যেতে পারে। তখন তার পরিণাম হবে ভয়ঙ্কর। আল্লাহ تعالى তাদেরকে অভিশাপ দেবেন, আর ফেরেশতারা, মানুষরা সবাই তাদেরকে অভিশাপ দেবে।

কেউ যদি মনে করে, “থাক না, দুই একটা ব্যাপার মানুষের কাছ থেকে গোপন রাখলে কিছু যায় আসে না। আমি দিনরাত আল্লাহর تعالى ইবাদত করছি, লেকচার দিচ্ছি, ফতোয়া দিচ্ছি, এতিমখানা চালাচ্ছি, ইমামতি করছি —কত ভালো কাজ করছি। কয়েকটা ব্যাপার গোপন রাখলে কিছু হবে না। আল্লাহ تعالى আমাকে এই কয়েকটা ব্যাপারে শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেবেন। বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতর ক্ষতি করা যায়।” তাদের জন্য এর পরের আয়াতটি দুঃস্বপ্নের কারণ হবে—

সেই অবস্থায় তারা চিরকাল থাকবে। ওদের শাস্তি একটুও হালকা করা হবে না। কোনো বিরতি দেওয়া হবে না। [আল-বাক্বারাহ ১৬২]

জাহান্নামের এই বর্ণনাগুলো ভয়ঙ্কর। জাহান্নামে শাস্তির কোনো বিরতি নেই। প্রচন্ড মার খাওয়ার পর যদি হাঁপাতে হাঁপাতে বলি, “এক মিনিট দাঁড়াও। একটু বিশ্রাম নিয়ে নেই।” সাথে সাথে শুরু হবে আবার মার। একটুও বিরতি দেওয়া হবে না। এক শাস্তির উপর আরেক শাস্তি চলতেই থাকবে।

এই আয়াত দুটিতে একটি সাধারণ আইন আছে, কোনো ধরনের কুফরী করা অবস্থায় আমরা যেন মারা না যাই। তাহলেই সর্বনাশ। আমরা জানি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ ইবাদত। এর জন্য আল্লাহ تعالى একবার, দুইবার, দশ বার নয়, কমপক্ষে ৮১ বার কুরআনে বলেছেন। এরপরেও আমরা যদি ক্রমাগত জেনেশুনে নামাজ না পড়ি, নামাজ পড়াটাকে গুরুত্বহীন মনে করি, নিজেকে নানা যুক্তি দিয়ে বোঝাই যে, নামাজ পড়াটা বাধ্যতামূলক নয়, তাহলে সেটা আল্লাহর تعالى পরিষ্কার বাণীর উপর কুফরী হয়ে যাবে। সেই অবস্থায় আমরা যদি মারা যাই, তাহলে আমরা কুফরী করা অবস্থায় মারা যাবো। —এর পরিণাম ভয়ঙ্কর হতে পারে। তাই মারা যাওয়ার আগে অবশ্যই আমাদের তাওবাহ করে, নিজেকে সংশোধন করে যেতে হবে।

আরেকটি ব্যাপার হলো: কোনো কাফির ব্যক্তিকে অভিশাপ দেওয়া নিষিদ্ধ, কারণ সে কী অবস্থায় মারা গেছে তা আমরা কেউ জানি না। আল্লাহ تعالى তাকে কাফির অবস্থায় নিয়ে গেছেন, না ফাসিক অবস্থায়, এটা শুধু তিনিই জানেন, আমরা কখনোই জানবো না। এ কারণে কোনো ব্যক্তিকে অভিশাপ দেওয়া নিষিদ্ধ। অভিশাপ শুধুমাত্র কোনো কাফির জাতিকে দেওয়া যায়, যেমন ‘আল্লাহ تعالى যেন কাফির জাতিদেরকে ধ্বংস করে দেন, মুসলিমদের গৌরব ফিরিয়ে দেন।’[৪]

সূত্র:

নতুন আর্টিকেল বের হলে জানতে চাইলে কু’রআনের কথা ফেইসবুক পেইজে লাইক করে রাখুন—

Exit mobile version