কুরআনের কথা

পিঁপড়া – আন-নামল ১৮

কু’রআনের আয়াতগুলো ভাষাতত্ত্ববিদদের জন্য তথ্যের খনি। আল্লাহ تعالى খুব সাধারণ দেখতে কিছু আয়াতে, সাধারণ কিছু গল্প বা কথোপকথনের মধ্য দিয়েই অসাধারণ সব তথ্য প্রকাশ করেন। যেমন, নিচের আয়াতটি দেখুন যেখানে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে একটি স্ত্রী পিঁপড়ার একটি মাত্র কথার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে পিঁপড়াদের সম্পর্কে কত ধরণের তত্থ্য দিয়েছেনঃ

আর যখন তারা পিঁপড়াদের উপত্যকায় পৌছিয়েছিল, একটি পিঁপড়া(স্ত্রী) বলেছিল, “হে পিঁপড়ারা, তোমাদের ঘরগুলোতে প্রবেশ কর, যাতে করে সুলায়মান এবং তার বাহিনী তোমাদেরকে না বুঝে পিষে না ফেলে”। (২৭:১৮)

আপনার কাছে মনে হবে, এতো ছোটদের কোনো গল্পের বইয়ের মত! এখানে পিঁপড়াদের সম্পর্কে আল্লাহ تعالى নতুন কী জানালেন আমাদেরকে?

প্রথমত, পিপড়ারা মানুষের ভাষায় কথা বলে না। তারা নিজেদের মধ্যে রাসায়নিক সিগনালের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। এখানে স্ত্রী পিঁপড়াটি সেদিন অন্য পিঁপড়াদের সাথে কী ভাব বিনিময় করেছিল, সেটা মানুষের ভাষায় তুলে ধরলে যা দাঁড়ায়, সেটাই আল্লাহ কু’রআনে বলেছেন। সেটা না করে তিনি যদি রাসায়নিক বিক্রিয়ার একটা গ্রাফ একে আমাদেরকে দিতেন, তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের কোনো লাভ হতো না?

এবার লক্ষ্য করুন, এই আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে পিঁপড়াদের সম্পর্কে কতগুলো তথ্য দিয়েছেনঃ

বিজ্ঞানীদের জন্য এই আয়াতে আল্লাহ تعالى অনেকগুলো ইংগিত দিয়ে রেখেছেন। প্রথমত, বাসার বাইরে যে পিঁপড়ারা থাকে তারা সবাই স্ত্রী পিঁপড়া। পুরুষ পিঁপড়া সবসময় বাসার ভিতরে থাকে। সমস্ত কর্মী পিঁপড়া স্ত্রী। দ্বিতীয়ত, কীভাবে একটি পিঁপড়া হাজার হাজার পিঁপড়ার সাথে যোগাযোগ করে রাসায়নিক পদার্থ এবং গন্ধ দিয়ে, যা একটি অত্যন্ত সফল মাধ্যম নির্ভরযোগ্য ভাবে তথ্য সম্প্রচার করার জন্য। তৃতীয়ত, কীভাবে হাজার হাজার পিঁপড়া সংকেত পেয়ে মুহূর্তের মধ্যে বাসায় ঢুকে পড়ে খুবই অল্প সংঘর্ষ করে, যা কিনা বিজ্ঞানিদেরকে যানবাহনের ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নততর করার জন্য আইডিয়া দিয়েছে। চতুর্থত, এককভাবে প্রতিটি পিঁপড়ার বুদ্ধি অল্প, কিন্তু হাজার হাজার পিঁপড়া সম্মিলিত ভাবে উচ্চতর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয় যাকে “সোয়ার্ম ইন্টেলিজেন্স” বলে। পঞ্চমত, পিঁপড়ার কোন সামাজিক শ্রেণী বিন্যাস নেই। তাদের কোনো দলনেতা নেই। কীভাবে হাজার হাজার পিঁপড়া কোনো দলনেতা, রাজা বা রাণী পিঁপড়ার নিয়ন্ত্রন ছাড়া প্রত্যেকে নিজের নিজের কাজ সুশৃঙ্খলভাবে করে যায়, তা এখনও একটি বিরাট বিস্ময় এবং এনিয়ে গত বিশ বছর ধরে গবেষণা চলছে। মানুষ যদি এরকম উন্নততর যান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে যার কোনো কেন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই এবং একটি বিশাল যন্ত্রের প্রতিটি অংশ নিজে থেকেই সবসময় সঠিক কাজ করে যাবে, তাহলে ইঞ্জিনিয়ারিং অনেক সমস্যার সমাধান করা যাবে।

সম্ভবত এই কারণেই আল্লাহ تعالى বলেছেনঃ

যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর [নিখুঁত] করেছেন … (৩২:৭)

যখনই কু’রআনের কোনো আয়াতে কোনো কথোপকথন আসে, তখনই দেখবেন আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কথোপকথনের শব্দ, বাক্যগুলোর মধ্যে দিয়ে এই তথ্যগুলো তথ্য দেনঃ

[অনুপ্রেরণাঃ সুলাইমান এবং পিপড়াটি – ইয়াহইয়া ইব্রাহিম[4]]

নতুন আর্টিকেল বের হলে জানতে চাইলে কু’রআনের কথা ফেইসবুক পেইজে লাইক করে রাখুন—

Exit mobile version